‘হাসি-কান্না হিরা-পান্না’য় শেষ হচ্ছে আরও একটা বছর। বিগত হতে চলা ২০২৪ সালে শিরোনামে কখনও উঠে এসেছে বেদনাদায়ক ঘটনা কখনও বা সুখস্মৃতি। সোশাল মিডিয়ার জমানায় হঠাৎ জনপ্রিয়তার শিখরেও উঠেছে কত মুখ। জীবনের হাজারও সমস্যাকে ফুৎকারে উড়িয়ে আনন্দের রশদ জুগিয়েছে কিছু ভিডিও। কখনও তা আবার বিতর্কের আগুনেও ঘি ঢালে। বছর শেষে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল মনে করাল তেমনই কিছু ভাইরাল ভিডিও।
৩০ টাকার পরোটা
সোশাল মিডিয়ার দৌলতে এবছর জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠেন রাজু দা। শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন কোলে মার্কেটে তিনি সকাল বেলায় পরোটা বিক্রি করেন। ৩টে পরোটা ৩০ টাকা, আর ডিম নিয়ে নিলে সেটা হবে ৪০ টাকা। কোনও দোকান নেই তাঁর। ফুটপাতে চলে পরোটা বিক্রি। শিয়ালদহের এই রাজুদাকে নিয়ে চর্চা কম হয়নি সোশাল মিডিয়ায়। নেটিজেনদের মন জিতে নিয়েছেন শিয়ালদহের রাজুদা।
আহা টমাটর
এ বছর সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ‘আহা টমাটর’ গানটি। অজস্র মিম ও রিল ভিডিওতে এই গানের ব্যবহার থেকে শুরু করে লোকের মুখে মুখে ঘোরে গানটি। নার্সারি ক্লাসের এই ছড়ার গানে পড়ুয়াদের সঙ্গে মিলে নাচতে দেখা যায় স্কুলের শিক্ষিকাদেরও। সোশাল মিডিয়ায় তা ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি বিতর্কও তৈরি করে।
দিল্লি মেট্রো
রিলপ্রেমীদের দাপটে এ বছরটা বড় অস্বস্তিতে কেটেছে দিল্লি মেট্রোর। প্রায় সারা বছর ধরেই রিল ভিডিও ক্রিয়েটরদের দাপট দেখা গিয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। গানের তালে স্বল্পবসনা তরুণীর উদ্দাম নৃত্যের পাশাপাশি হোলির দিনে মেট্রোর ভেতর অশ্লীল নাচ নাচতে দেখা যায় দুই তরুণীকে। সেই সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, “অঙ্গ লাগা দে রে, মোহে রঙ লাগা দে রে।” ভরা মেট্রোয় এই ভিডিও ভাইরাল হতেই বিতর্ক চরম আকার নেয়। এমনকি এই ধরনের ঘটনা রুখতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
পুরুষাঙ্গে হাতছাড়া অলিম্পিক পদক
অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পোল ভল্টের ইভেন্টে নেমেছিলেন ফ্রান্সের অ্যান্থনি আম্মিরাতি। ২১ বছর বয়সি অ্যাথলিট ভল্ট দিয়ে নামার সময় তাঁর পুরুষাঙ্গ ধাক্কা খায় হাইট বারে। সেই ধাক্কায় নিচে পড়ে যায় বারটি। ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। পুরুষাঙ্গের জেরে অলিম্পিক পদক হাতছাড়া হয় আম্মিরাত। এই ঘটনায় নীল ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও পান ফ্রান্সের এই পোলভল্ট তারকা।
গণভবন লুঠ
ছাত্র আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ৫ আগস্টের সেই দিনেই হাসিনার বাসস্থান গণভবনে হামলা চালায় দুষ্কৃতী দল। লুঠ করা হয় ঘরের সব জিনিসপত্র। গণভবনের দামি আসবাব, টেলিভিশন, পাখা, মাছ, মাংস, শাড়ি, অন্তর্বাস, খরগোশ, বিড়াল, বালতি কিছুই বাদ দেয়নি দুর্বৃত্তের দল। সেই সব ভিডিও ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায়।
কালীঘাটে মেট্রো স্টেশনে প্রকাশ্যে চুমু
ঘটনা কালীঘাট মেট্রো স্টেশন। আশেপাশে গুটি কয়েক যাত্রী। তাঁদের উপস্থিতি হেলায় উপেক্ষা করে একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে প্রেমে মগ্ন যুগল। সেই ঘটনার ভিডিও সাড়া ফেলে দেয় সোশাল মিডিয়ায়। প্রকাশ্য চুম্বনে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় খড়গহস্ত হন ওই যুগলের বিরুদ্ধে। যদিও বেশিরভাগই এই ঘটনাকে সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন যুগলের। সব মিলিয়ে রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে এই চুমু।
মোদির দাবি, 'আমি বায়োলজিক্যাল নই'
এবছর রাজনীতির মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক বার্তা সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, "আমি বায়োলজিক্যাল সন্তান নই। মায়ের মৃত্যুর পর আমি বুঝেছি আমাকে 'পরমাত্মা' পাঠিয়েছেন।" প্রধানমন্ত্রীর এমন দাবি শুধু সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়নি, জাতীয় রাজনীতিতেও বিতর্কের জন্ম দেয়।
ঋতুপর্ণার শঙ্খনিনাদ
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয় ঋতুপর্ণার শাঁখ বাজানোর ভিডিও। দাবি করা হয়, মিউজিক সিস্টেমে শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে মুখে শাঁখ নিয়ে অভিনয় করছিলেন তিনি। এই ভিডিও তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়।
রচনার কান্না
আর জি কর কাণ্ডে সোশাল মিডিয়ায় লাইভে এসে নারী নিরাপত্তা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ভিডিও ভাইরাল হয়। মিথ্যাচারের অভিযোগে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন নেটিজেনরা। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে 'কুইন্টাল কুইন্টাল জল' ও ‘ধোঁয়াই ধোঁয়া’ মন্তব্যে নেটপাড়ায় ট্রোল-মিমের পাহাড় জমে।
আমি বোকা হতে চাই
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে ছোট্ট ঋক চায় 'বোকা' হতে। মায়াভরা মুখের অতি সাধারণ দিনমজুরের সন্তান ঋকের এমন গভীর বার্তা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয় বীরভূমের ওই বালকের বার্তা।
বাংলাতেই বলো
চলতি বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ট্রোলড হন হিরণ। বলেন, ‘আজকে এসেছি কেশপুরেতে। আমি জানি না কী ভাষায় বলব। আমার মনের মধ্যে কোনও ভাষা নেই।’ ঠিক সেই সময় পাশ থেকে এক বাসিন্দা বলে ওঠেন 'বাংলাতেই বলো'। যা ব্যাপক ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায়।