shono
Advertisement

পুরনো প্রেম আর দাম্পত্যের মাঝে কি হারিয়ে গেল ‘রেণু’র কাহিনি? পড়ুন ফিল্ম রিভিউ

শরীরের তল মেলে, মনের তল কি পাওয়া যায়?
Posted: 01:56 PM Apr 12, 2021Updated: 01:56 PM Apr 12, 2021

নির্মল ধর: সমরেশ মজুমদারের কলমে ‘রেণু’ এক জটিলতর মনের নারী। এমনিতেই কথায় আছে নারী চরিত্র “দেবা ন জানন্তি…”, তারওপর বলিষ্ঠ এই কলমে ‘রেণু’ সত্যিই যেন এক কুহেলিকা! হয়তো বা সে নিজেও দ্বিধাচিত্ত নয়, বহুধা চিত্ত। নিজেকেই সে নিজে বুঝে উঠতে পারে না, সংশয়ে ভোগে, প্রেম-অপ্রেমের বিভেদ করতে পারে না। সেজন্য নিজে যেমন যন্ত্রণা পায়, অন্যকেও যন্ত্রণা দেয়। অথচ ভালবাসা ও ঘনিষ্ঠতা পেতে সে কম আগ্রহী নয়। অতীতে যৌবনের আগমনে কেউ আঘাত করে থাকলেও প্রতিশোধ স্পৃহায় সে কাতর নয়। আসলে রেণু গভীর নারী চরিত্রের এক প্রহেলিকা মাত্র। লেখক মহাশয় যেভাবে, কলমের বিন্যাসে রেণুকে জীবন্ত করেছিলেন, চিত্রনাট্যে সেটার খামতি রয়ে গেছে। পদ্মনাভ দাশগুপ্ত সম্ভবত এই প্রথম নাটকের সঙ্গে চিত্রের সঠিক বিবাহ দিতে পারলেন না। নতুন পরিচালক সৌমেন সুর আর কতটাই বা করতে পারেন! তিনি তো নির্ভর করেছিলেন চিত্রনাট্যকারের ওপর।

Advertisement

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র রেণু (সোহিনী সরকার), তাঁকে ঘিরেই প্রেমিক সুমিত (গৌরব চক্রবর্তী) এবং স্বামী বরেন (সোহম চক্রবর্তী)। MA পড়ার সময় সুমিত রেণুর পরিচয় ও প্রেম। দু’জনে দু’জনের কাছে সেই প্রেম প্রকাশও করেছে। কিন্তু বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ এলে রেণু কোনও বাধা দিতে পারেনি। সাহস করে রেজিস্ট্রি বিয়ের চেষ্টা করেছিল দু’জনেই। কিন্তু রেণু অনুপস্থিত ছিল। আবার বরেনের সঙ্গে বিয়ের রাতে সুমিতের সঙ্গে পালানোর প্ল্যান করেও রেণু রাখতে পারেনি সে কথা। এখানেই তাঁর মানসিক টানাপোড়েন। বিয়ের পর স্বচ্ছল প্রভাবশালী স্বামী বরেন রেণুকে ‘স্ত্রী’ হিসেবে পাবে না বুঝতে পেরে ডিভোর্সের চেষ্টা করে। হাতে পেতে চায় সুমিতকে বিভিন্ন সময়ে রেণুর লেখা চিঠিগুলো। তাহলে রেণুকে চরিত্রহীন প্রমাণে সুবিধে হবে। সে এই কাজে নিয়োগ করে বনবিহারী চন্দ নামের (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) এক দুঁদে গোয়েন্দাকে।

শুধুমাত্র চিঠিগুলো নিয়ে এই রহস্যের আমদানি গল্পের চরিত্র ও চলনের সঙ্গে যায় না। তাই নিয়ে অযথা মারপিট, আর থ্রিলিং আমেজ আনার ব্যাপারটাও একেবারেই বেমানান। তিন চরিত্রের সংঘাত নিয়ে বরং মানসিক ঘাত-অভিঘাত খেলা চালানো যেত। যেটি করা হয়েছে ছবির একেবারে শেষ দৃশ্যে। সুমিত ও বরেনের মাঝ দিয়ে দ্বিধাচিত্ত রেণুর উত্তাল সমুদ্রের দিকে নীরবে এগিয়ে যাওয়া এক অসাধারণ ওপেন এন্ডিংয়ের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। তিনজনের মধ্যে তখনও দ্বন্দ্ব চলছে। রেণুর সিদ্ধান্ত কী হবে? এক গভীর প্রশ্ন তখন। সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলা রেণুর দিকে দু’জনেরই বিস্মায়মাখানো দৃষ্টি! সে কি স্বামীর কাছে থাকবে? না লবঙ্গের গন্ধ পাওয়া সুমিতের কাছে ফিরবে? কিংবা সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্রের গভীরে মনের আরও গভীর কথা খোঁজার চেষ্টা করবে?এমন খোলা প্রশ্নের সামনে দর্শককে দাঁড় করিয়ে ‘এই আমি রেণু’ (Ei Ami Renu) সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমায় কিঞ্চিৎ হলেও একটু ব্যতিক্রমী ভাবনার জায়গা রাখল। এর জন্য কৃতিত্ব অবশ্যই সমরেশ মজুমদারের (Samaresh Majumdar)। পরিচালক বা চিত্রনাট্যকার এর নয়।

[আরও পড়ুন: দীপ্সিতা-মীনাক্ষীকে নিয়ে কুরুচিকর মিমের মোক্ষম জবাব শ্রীলেখার, বোঝালেন ‘মুরোদ’]

বরং পরিচালক স্থান ও সময় নিয়ে যে ‘খেলা’ দেখিয়েছেন সেটা অতি কাঁচা হাতের কাজ। জামশেদপুরে বিয়ে হল রেণুর। আর স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতায় সুমিতের সঙ্গে দেখা করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে গেল জামশেদপুরে। আরও একটা রহস্য – সুমিতের তো তখন চা বাগানে চাকরি নিয়ে কলকাতায় থাকারই কথা নয়। গোয়েন্দা মশাই থাকেন কোথায় সেটাও এক রহস্য।

বিষয় নির্বাচনে পরিচালক ও প্রযোজক অবশ্যই সুন্দর ভাবনার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু শুধু ভাবনা দিয়ে সিনেমা হয় না, দরকার সিনেমা তৈরির কারিগরি জ্ঞান এবং শৈল্পিক বোধের প্রতিফলন। সেই দু’টি জিনিসেরই অভাব ছবিতে। একমাত্র রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন রেণুর চরিত্রে সোহিনী সরকার (Sohini Sarkar)। ছাত্রীর চেহারায় যেমন লজ্জা মেশানো ছটফটে, তেমনই বিয়ের পর সাজসজ্জায় ও ব্যক্তিত্বে সুন্দর পরিবর্তন এনেছেন তিনি। অভিনয়ে তো বটেই। রেণুর দ্বিধা দ্বন্দ্ব, মানসিক টানাপোড়েন, সংঘাত সব মুহূর্ত গুলোই জীবন্ত হয়েছে তাঁর সপ্রাণ অভিনয়ে। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে নির্লিপ্ত নীরব চাহনি দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাঁর এগিয়ে যাওয়া খুবই ভাল লাগে। গৌরব চক্রবর্তী (Gaurav Chakrabarty) হয়েছেন সুমিত। দুঃখিত, তিনি হতেই পারেননি। কেমন বোকা বোকা ভাবলেশহীন দৃষ্টি নিয়ে সারাক্ষণ ক্যামেরার সামনে তাকিয়ে রইলেন। তুলনায় বরেনের ভূমিকায় সোহম অনেকটাই চরিত্রের যন্ত্রণা ফোটাতে পেরেছেন। আর রয়েছে গোপী ভগতের চোখ ভোলানো চিত্রগ্রহণ। রাণা মজুমদারের সুরে ও কলমে দু-তিনটি গানের লাইনগুলো। শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং ও অ্যাশ কিংয়ের গানগুলি এখনও কানে বাজে। অ্যাশ কিংয়ের গলা সত্যিই অন্য তারে বাঁধা। ছবির পাওনা বলতে শুধু এই দু-তিনটে জিনিস।

[আরও পড়ুন: সোনু সুদের মুকুটে আরেকটি পালক, পাঞ্জাবে করোনা টিকা কর্মসূচির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অভিনেতা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement