প্রিয়ক মিত্র: সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শো বছরেই গ্রুপ থিয়েটার পা দিচ্ছে ৭৫-এ। ১৯৪৮ সালে ‘বহুরূপী’-র হাত ধরে ‘গ্রুপ থিয়েটার’-এর ধারণা এসেছিল বাংলা মঞ্চে। ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলেরও ২৭ পূর্তি এই বছরেই। সেই উপলক্ষেই ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং রবীন্দ্র সদনে চলবে একটি নাট্য উৎসব। নববর্ষের মরশুমে আট জন পরিচালকের নতুন আটটি নাটক মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই উৎসবে।
পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘মুখোমুখি’-র নতুন প্রযোজনা ‘জন্মান্তর’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা, যাঁর স্মরণে উৎসর্গ করা হচ্ছে এই নাট্যপার্বণ। অভিনয়ে থাকবেন দেবদূত ঘোষ, সঞ্জিতা এবং পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। উৎপল দত্তর ‘আজকের সাজাহান’ ফিরিয়ে আনছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। অভিনয়ে শঙ্কর চক্রবর্তী, বিমল চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন, সুমন নন্দী, গৌতম সরকার প্রমুখ। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘সংসৃতি’-র নাটক ‘খোক্কস’-এ অভিনয় করছেন দেবশংকর হালদার, বুদ্ধদেব দাস, অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এই নাটকের সংগীত নির্দেশনায় থাকছেন রূপম ইসলাম।
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক, নির্দেশনা ও অভিনয়-সমৃদ্ধ ‘মধ্যরাতের চুপকথা’-য় থাকছেন অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল সরকার, দেবপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, থাকছে কৌশিক সেন ও দেবশংকর হালদারের নেপথ্য-পাঠও। অজিত দলভি-র নাটক ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’-র নির্দেশনা সুজন মুখোপাধ্যায়ের, বঙ্গানুবাদ অরুণ মুখোপাধ্যায়ের। অভিনয় করেছেন সুজন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। ‘প্রাচ্য’-র প্রযোজনায় জঁ পল সার্ত্র-এর অনুপ্রেরণায় অংশুমান ভৌমিকের নাটক অবলম্বনে বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মণিকর্ণিকায় মণিকা’-তে অভিনয়ে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, জয়রাজ ভট্টাচার্য। অর্পিতা ঘোষের ‘তুমি ঠিক যদি ভাবো তুমি ঠিক’-এ অভিনয় করছেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায় ও দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। নিবেদনে ‘পঞ্চম বৈদিক’। ‘চার্বাক’ নিবেদিত ‘নিরজাসুন্দরী’-তে অভিনয় করছেন খেয়ালি দস্তিদার, নির্দেশনা ও সহ-অভিনয়ে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: ‘ইন্ডাস্ট্রির কথা ছেড়ে দিলাম, ছবির সহ-অভিনেতারাও চুপ’, হেনস্তার ঘটনায় আক্ষেপ স্বস্তিকার]
রঙ্গালয়, নাটক, অভিনয়ই হয়ে উঠবে এর মধ্যে বেশ কিছু নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের কেন্দ্রে এক অভিনেতার চরিত্র। “একটি রাত থেকে ভোর এই নাটকের সময়কাল। একজন অভিনেতা আসছে এমন এক বাড়িতে যেখানে অতীতের কিছু ঘটনাপ্রবাহের কারণে অভিনয় বিষয়টাই প্রায় নিষিদ্ধ। সেই বাড়িতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস আছে, সেই পরিবারের সঙ্গে বামপন্থী রাজনীতিরও সম্পর্ক আছে। তার মধ্যেই রয়েছে এক পূর্বপুরুষের প্রেত, একটি তলোয়ার।
সবমিলিয়ে এই নাটক হতে পারে অভিনেতার এলিজি, অথবা তারই জয়যাত্রা,” বললেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎপল দত্তর ‘আজকের সাজাহান’ কীভাবে প্রাসঙ্গিক আজও? সুমন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘এই নাটক আসলে দুই প্রজন্মের দ্বন্দ্ব। একজন অভিনেতা, যিনি একজন এলিয়েনেটেড একক, সে স্মৃতির মধ্যে বেঁচে থাকে, অন্যদিকে একজন আধুনিক, যার কাছে ইতিহাসের কোনও গুরুত্ব নেই। নাটকটিকে আমি কিঞ্চিৎ আধুনিক করে তুলেছি, সাদা-কালো-র পরিবর্তে ধূসরতা এনেছি চরিত্রদের মধ্যে, সময়ের দাবি মেনেই।’
এভেঞ্জি সোয়াটজ্-এর ‘দ্য ড্রাগন’ অবলম্বনে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘খোক্কস’ নিয়ে পরিচালক বলছেন, ‘এটা একটা রাজনৈতিক স্যাটায়ার। এটা মিউজিক্যাল হতে চলেছে। রূপমের সংগীত পরিচালনা থাকছে। আমাকে মিউজিক টানে সবসময়ই। আমাদের লোকপরম্পরার মধ্যে সংগীত আর সংলাপের সম্পর্ক তো আছেই।’