সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবস পালন হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। আর তার পরেরদিন শুক্রবারই জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে। ফলে আরও একবার উৎসব পালনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভূস্বর্গ। এই উৎসব প্রায় এক দশক বাদে নিজেদের বিধায়ক বেছে নেওয়ার। এই উৎসব নিজেদের সরকার নির্ধারণ করার। এখন প্রশ্ন আসন্ন বিধানসভা ভোটে কী বিজেপিকে রুখতে জোট বাঁধবে এনসি, পিডিপি-র মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো?
গতকাল, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ঘোষণা করেন, এবার কাশ্মীরে ভোট হবে ৩ দফায়। ভোটগ্রহণ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর। ফলাফল জানা যাবে ৪ অক্টোবর। এই নির্ঘণ্ট জানার পরই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করে ভূস্বর্গে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে কতটা তৈরি দলগুলো? কয়েকদিন আগেই ন্যাশনাল কনফারেন্স সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। যতদিন না পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর, ততদিন প্রতিবাদ স্বরূপ নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
ফলে বাধ্য হয়েই ফারুক আবদুল্লাকে ঘোষণা করতে হয় যে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। এতদিন কিছু না বললেও নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাঁর উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছেন এনসি কর্মী-সমর্থকরা। ফলে বাধ্য হয়েই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন ওমর। তিনি জানিয়েছেন, “আমি এখনও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। কিন্তু দলের ভিতরে চাপ বাড়ছে। আমি নির্বাচনে অংশ না নিলে বাবাকে লড়তে হবে। ওঁর শরীরটা ভালো নেই। তাই কর্মী-সমর্থকরা চাইছেন আমি নির্বাচনে লড়ি। দেখা যাক, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।” ওমরের মতোই ৩৭০ পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। পিডিপি সভানেত্রী সেই সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন, নাকি ওমরের মতো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন, তা এখনও পরিস্কার নয়। তবে তাঁর দলের মুখপাত্র সুহেল বুখারি বললেন, “ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। তবে উনি যদি নির্বাচনে অংশ নাও নেন, প্রার্থীদের হয়ে প্রচার তো করবেনই। আমরা তৈরি।”
[আরও পড়ুন: আজ দেশজুড়ে ডাক্তারদের ধর্মঘট, ৫৫ হাজার হাসপাতালে ব্যাহত পরিষেবা]
এদিকে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা কেন্দ্রে ওমর আবদুল্লাকে হারিয়ে চমক দিয়েছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেলবন্দী নির্দল প্রার্থী আবদুল রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। পরবর্তী সময়ে নিজেদের দল গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁর দুই পুত্র আবরার ও আসরার রশিদ। তৈরি হয়েছে আওয়ামি ইত্তিহাদি পার্টি। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পেতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে ফাইল জমা করা হয়েছে। যে প্রেশার কুকার চিহ্নে জিতে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রশিদ , সেই চিহ্নকেই নিজেদের সরকারি প্রতীক করার আবেদন করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র ফিরদৌস বাবা জানালেন, “নতুন দল, জম্মুতে প্রার্থী দিতে পারব কিনা জানিনা, তবে কাশ্মীরের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই আমরা প্রার্থী দেব।” আরেক নতুন দল ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টি সুপ্রিমো গুলাম নবি আজাদ নির্বাচন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “আশা করব ভোটার, প্রার্থী, বিভিন্ন দলের নেতার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে সরকার।”
১৯৯৬ থেকে লাগাতার কুলগাম কেন্দ্রের সিপিআই(এম) বিধায়ক তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি বলছিলেন, “গোটা দেশে একটাই অঞ্চলের গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছিল। প্রায় ১০ বছর মানুষ নিজেদের বিধায়ক বেছে নেওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের জন্যই এটা সম্ভব হল। সরকার তো দাবি করে আসছে যে, ৩৭০ রদ করে ভূস্বর্গে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু কাশ্মীরিদের থেকে তাঁদের আত্মা কেড়ে নেওয়ার জবাব এবার বিজেপিকে দিয়ে দেবে উপত্যকার মানুষ।” শুধু বিরোধীরাই নয়।
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিজেপিও। তাদের কথায়, “লিখে নিন, ৫০টির বেশি আসন জিতে এককভাবে জম্মু-কাশ্মীরে সরকার বানাব আমরা।” প্রায় এক দশক বাদে নিজেদের সরকার গঠন, ৩৭০ ধারা রদ, উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো যে এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার গেরুয়া শিবিরকে রুখতে কী একজোট হবে 'গুপকার'? কাকেই বা বেছে নেবেন কাশ্মীরের জনগণ।