সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:
কিছুই কোথাও যদি নেই
তবু তো কজন আছি বাকি
আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।
– শঙ্খ ঘোষ
এ মন্ত্র মানুষেরই। তবু যখন হননকাল দুয়ারে এসে উপস্থিত হয়, তখন কবির ‘মা নিষাদ’ও যেন অশ্রুত হয়ে পড়ে। অস্ত্রের ঝনঝনানি এসে ঢেকে দেয় সমস্ত শুভ শঙ্খধ্বনি। মানুষ এ কথা জানে না, তা তো নয়। তবু বিস্মরণ মাথাচাড়া দেয়। আর তখনই এমন ঘটনা ঘটতে থাকে, মানুষ হিসেবে যা লজ্জা দেয় মানুষকেই। সাম্প্রতিক সময়ে তেমন নমুনার অভাব নেই। আর সেই প্রেক্ষিতে মানুষকে যেন সহাবস্থানের পাঠ দিল দুই পশু। হাতি ও সিংহীর যুগলবন্দির এ ছবিই নেটদুনিয়ায় চর্চার ভরকেন্দ্র।
ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের ধরা পড়েছে এ বিরল ছবি। এক সিংহী তার শাবককে নিয়ে চলেছিল। প্রায় ২ কিমি পথ চলার পর সে দৃশ্যতই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সন্তানকে ছেড়ে মা যায় কী করে! সিংহী যখন কার্যত অসহায়, তখনই পাশে এসে দাঁড়ায় এক হাতি। বনের নিয়মে সিংহ রাজা। কিন্তু বিপদের মুহূর্তে সে ভেদাভেদ বোধহয় থাকে না। তাই সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল হাতিটি। বাড়িয়ে দেয় শুঁড়। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে সেখানেই চড়ে বসে সিংহ শাবকটি। এরপরের দৃশ্য শুধু মনোরম বললে কম বলা হয়। পশুরাই যেন মানবিকতার দৃষ্টান্ত রাখল। সিংহশাবককে শুঁড়ে নিয়ে চলল হাতিটি। আর পাশে পাশেই চলল সিংহী। ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের কর্মীরা এ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ। পরে ছবিটি টুইট করা হয় তাদের পক্ষ থেকেই। তারপরই ভাইরাল হয় ছবিটি। নেটদুনিয়ায় শুরু হয় চর্চা।
[ বিশ্বের দীর্ঘতম আইসক্রিম নাম লেখাল গিনেস বুকে, কত দৈর্ঘ্য জানেন? ]
সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ছবি পোস্ট করে অনেকে বলছেন, এ যদি মানবিকতা না হয়, তাহলে আর কী! হতে পারে এক পশু এ দৃষ্টান্ত এ নমুনা রেখেছে, তবু এ মানবিকতার থেকে কম কিছু নয়। জঙ্গলের পশুরা, অহংবোধে উচ্চভ্রু মানুষ যাদের নিম্নস্তরে সরিয়ে রেখেছে, তাদের থেকেই আজ শিক্ষা নিতে পারে মানুষ। কেন। কেননা মানুষ আজ মান আর হুঁশ দুটোই খুইয়েছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে শুধুই যেন হানাহানির মৌষলকাল। কোথাও অস্ত্র বিক্রির স্বার্থসিদ্ধি করতে গিয়ে বন্দুকের নলের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অবুঝ শিশুকে। কোথাও আবার ধর্মের নামে একে অন্যের গায়ে আগুন দিচ্ছে মানুষ। এই তো পরিস্থিতি। কোথায় সহবাস্থানের ধর্ম? কোথায় বা প্রাণীজগতে শীর্ষ আসন ধরে রাখার অভিপ্রায়? মানুষ যেন একের পর এক কাজে নিম্নগামীতার নতুন নতুন নমুনা তৈরি করে চলেছে। এই আবহেই হাতি-সিংহীর যুগলবন্দি জানিয়ে দিচ্ছে, এই পৃথিবী সত্যিই সুন্দর। মানুষই হানাহানিতে তাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। পশুরাই বরং সত্যিকারের বিবেক হয়ে ধরা দিয়েছে।
তবু মানুষ বলেই বোধহয় এ ছবিকে নিয়ে সন্দেহ করতেও অনেকের দ্বিধা নেই। অনেকেই বলছেন এ আসলে ফটোশপের কারসাজি। ফটোশপ মানুষেরই তৈরি। তাতে যে কারসাজি হয় সে শুধু মানুষই জানে। সুতরাং মানুষের মাথাতেই এই কুচক্রী বুদ্ধির উদয় হওয়া সম্ভব। পশুরা তা নিয়ে ভাবিত নয়। যদি সত্যিই ফটোশপ হয়, তাও বলা যায়, বহু ট্রোল-মিমের নিকৃষ্ট কারসাজির থেকে, এ কারসাজি অনেকাংশে ভাল। তবে মানুষ বলেই বোধহয় মানুষই প্রার্থনা করছে, এ যেন ফটোশপ না হয়। সত্যিকারের মানবিকতার এ সুন্দর ছবি, আজীবন মনে রাখুক মানুষ, মানবিকতার স্বার্থেই।
The post পাশাপাশি থাকার পাঠ দিচ্ছে পশুরাই, হাতি-সিংহীর যুগলবন্দিতে মাতল বিশ্ব appeared first on Sangbad Pratidin.