ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ চা বাগান মালিকদের হাত ধরে এসেছিল। আজও তা চলছে। বর্ষশেষে পাহাড়ি পথে সেই ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডরোভার গাড়িতে চেপেই এবার নিখরচায় সাফারির সুযোগ!
[কংসাবতীর রূপে উজ্জ্বল ‘সবুজদ্বীপ’, রূপসী বাংলায় নতুন বেড়ানোর স্পট]
পাহাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। সেজে উঠেছে পথ। দার্জিলিং ম্যাল থেকে মিরিক লেক। সর্বত্রই রঙের ছটা। সুসজ্জিত হোম স্টে থেকে চা বাগানের বাংলো। এমন এক পরিবেশে শৈলশহরে এখন হেরিটেজ র্যালির অপেক্ষা। ২৮ ডিসেম্বর সকালে একসঙ্গে পথে নামছে ৪২টি ল্যান্ডরোভার। দার্জিলিং স্টেশন থেকে ঘুম পর্যন্ত টয়ট্রেনের জয়রাইডের সঙ্গে পাকদণ্ডী ধরে চলবে ল্যান্ডরোভারের ওই র্যালি।
[ডাল লেকের ধাঁচে হাউসবোটে রাত কাটানোর সুযোগ পূর্বস্থলীর চাঁদের বিলে]
দার্জিলিংয়ে তিস্তা–রঙ্গিত পর্যটন উৎসবকে কেন্দ্র করে এই সুযোগ করে দিয়েছে সিঙ্গালিলা ল্যান্ডরোভারস অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে ২৭ ডিসেম্বর রাতে মানেভঞ্জনে ক্যাম্প ফায়ার ও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যেসব পর্যটক যোগ দেবেন, রাতে তাঁদের নিখরচায় তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যটন উৎসবের অঙ্গ হিসাবে থাকছে প্যারাগ্লাইডিং, তিস্তায় র্যাফটিং। অ্যাডভেঞ্চার টুরিজমে বিশেষ জোর দিয়েছে জিটিএ। থাকছে পাহাড়ি পথে বাইকিং। পাখি দেখা, ছবি তোলা।
[পাহাড়ে একঘেয়েমি? অন্য স্বাদের খোঁজ পেতে চলুন সিটং]
ইংল্যান্ডে তৈরি ল্যান্ডরোভারের প্রথম সিরিজের পাঁচটি গাড়ি রয়েছে দার্জিলিংয়ে। রয়েছে দ্বিতীয় সিরিজের ছ’টি গাড়ি। ঐতিহ্য বজায় রেখেই আজও সেসব চলছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রথম-দ্বিতীয় সিরিজের যেসব ল্যান্ডরোভার রয়েছে দার্জিলিংয়ে, সেগুলি এখন সোনার মতোই দামি। কারণ, এত পুরনো অথচ সচল ল্যান্ডরোভার, গোটা পৃথিবীতে সেভাবে নেই। ফলে সেগুলি হেরিটেজও বটে। দার্জিলিং উৎসবে যোগ দেওয়া দেশ–বিদেশের পর্যটকদের সামনে ঐতিহ্যবাহী সেই ল্যান্ডরোভার তুলে ধরতেই দার্জিলিংয়ের গর্ব বাস্পচালিত টয়ট্রেনের সঙ্গে রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিটিএ-র প্রশাসক বোর্ড।
[মাছের সঙ্গেই দিন-রাত, পর্যটনের অন্য স্বাদ ফিশ ট্যুরিজমে]
বর্তমানে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ও ফালুট রুটে ল্যান্ডরোভারে সাফারি হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঘুম স্টেশনেও দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী এই গাড়িটির। ঘুম থেকে তাকদা ও বিজনবাড়ি রুটেও ল্যান্ডরোভার চলে। আগে প্রায় ৭০টির মতো ছিল। একসময় দার্জিলিংয়ের পাথুরে রাস্তায় জিপ আর ল্যান্ডরোভার ছাড়া সেভাবে অন্য গাড়ি চলত না। ফলে ল্যান্ডরোভারের চাহিদা ছিল দারুণ। পরবর্তীকালে যন্ত্রাংশের অভাবে পাহাড়ের গাড়ি মালিকদের অনেকেই ল্যান্ডরোভারের স্বতন্ত্রতা ধরে রাখতে পারেননি। কেউ কেউ সেগুলিকে অাধুনিক গাড়ির রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি পরিবারের সদস্য হিসাবেই আগলে রেখেছেন ৬৫ বছর পেরনো ল্যান্ডরোভার! “এই গাড়ি তো আমাদের পূর্বপুরুষের সমান। পরিবারের অঙ্গ। একে বিক্রি করব কীভাবে!” জিজ্ঞেস করতেই বলেন মানেভঞ্জনের বিনোদ গজমের।
[হাত বাড়লেই সবুজের রাজ্য, মন ভাল করার রসদ জঙ্গলমহলে]
ফলে শুধু সাফারি নয়, ল্যান্ডরোভারে চড়ে পাহাড়ি পথে চলতে চলতে অনেক অজানা গল্পও শোনা যেতে পারে। আর সেই গল্প শোনাতেই তৈরি পাহাড়ের গাড়িচালকরা। জিটিএ–র প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং বলেছেন, “সব পর্যটককেই আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। এই উৎসবের প্রাঙ্গণ থেকেই আমরা পাহাড় পর্যটনের অজানা দরজা খুলে দিতে চাই। পর্যটকদের জন্য অনেক রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে।” অন্যদিকে ২৫ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিম সিকিমের পেলিংয়ে শুরু হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা উইন্টার টু্রিজম ফেস্টিভাল। উৎসবকে কেন্দ্র করে থাকছে প্রদর্শনী, জিভে জল অজানা পাহাড়ি খাবারের স্টল। থাকছে ট্রাডিশনাল নাচ-গান, পুস্প প্রদর্শনী, ফ্যাশন শো, প্যারাগ্লাইডিং, ম্যারাথন, ট্রেকিং। নেচার ওয়াক থেকে শুরু করে প্রকৃতিকে উপভোগের ব্যবস্থা। উৎসব চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
The post পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন? নিখরচায় সাফারির সুযোগ ব্রিটিশ আমলের ল্যান্ডরোভারে appeared first on Sangbad Pratidin.