shono
Advertisement

রাজনীতির জগতে ‘অপরাজিত’, সৌমিত্রর প্রয়াণে মর্মাহত ডান-বাম সব শিবিরই

শোকপ্রকাশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অধীর চৌধুরিদের।
Posted: 09:37 PM Nov 15, 2020Updated: 09:41 PM Nov 15, 2020

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ছিলেন আদ্যোপান্ত বামপন্থী (Left)। শেষদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, বামপন্থাই বিকল্প। শেষ লেখা দু’টিও লিখেছিলেন বামপন্থী পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার জন্য। সম্পর্কের চোরাগলিতে নিজেকে বেঁধে রাখেননি। সব দলের সঙ্গে ছিল সুমধুর সম্পর্ক। কাউকেই নিরাশ করতেন না। তাই সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’ বা ‘ফেলুদা’র প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক জগৎ। রাজনীতিতে উথালপাতাল হওয়া কোনও ঘটনায় আর বোঝা যাবে না তাঁর অবস্থান, মিলবে না পরামর্শ। এদিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে আজকের বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সকলেরই মনে বিষণ্ণতার রেশ।

Advertisement

প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) কোনও দিনই কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেননি। দাঁড়াননি কোনও পতাকার নিচে। সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন সভা, সমাবেশ। তবে ছাত্র রাজনীতিতে সমর্থন ছিল। তাঁদের দাবিদাওয়ার পাশে থাকতেন সবসময়। ছাত্রদের উপর আক্রমণ নেমে এলেই ‘হীরক রাজার দেশে’র ‘উদয়ন পণ্ডিত’-এর নেমে আসতেন রিল থেকে রিয়েলে। রাজনৈতিক জগতে ছিল অবাধ গতিবিধি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর (Buddhadeb Bhattacharya) সঙ্গে ‘অপরাজিত’র ‘অপু’র সম্পর্ক কারও অজানা নয়। তাঁদের মধ্যে নিখাদ দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। দু’জনের আড্ডায় উঠে আসত রবীন্দ্রনাথ থেকে মার্কস-লেনিন, সিনেমা থেকে নাটক, কবিতা থেকে সাহিত্য।

রবিবার প্রায় শয্যাশায়ী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাই ‘দাদা’র মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। শোকবার্তায় জানান, ”সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু এক গভীর দু:খজনক ঘটনা। বাংলা চলচ্চিত্র চিরকাল তাঁর কাছে ঋণ স্বীকার করবে। আমি তাঁর পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানাই।” অভিনেতার শেষকৃত্যে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরা। শোকবার্তা পাঠিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

[আরও পড়ুন: গান স্যালুটে বিদায়, পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য]

বিজেপির সঙ্গে অবশ্য তাঁর কখনওই কোনও সখ্য ছিল না। তা সত্বেও ‘ক্ষিদ্দা’র গুণমুগ্ধ ছিলেন গেরুয়া শিবিরের অনেকেই। রবিবার দুঃসংবাদ আসতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় টুইট করেন, “দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত এই অভিনেতা বাংলা সিনেমাকে তুলে ধরতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’ টুইট করে শ্রদ্ধা জানান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন ও সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। রবীন্দ্র সদনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিকেলে নিজের ফেসবুকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শোকপ্রকাশ করে লেখেন, ‘‘বরিষ্ঠ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ বাংলার চলচ্চিত্র জগৎকে শূন্যতায় ভরিয়ে দিল। করোনার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইকে ব্যর্থ করে আমাদের থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।’’ রাজ্য ও দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গেও ‘অপু’র সম্পর্ক ছিল মধুর। শোকবার্তায় সেকথা তুলে ধরেন আবদুল মান্নান, অধীর চৌধুরি।

[আরও পড়ুন: ‘বাবাকে আদর্শ মেনে জীবনকে সেলিব্রেট করব’, চোখের জল মুছে বললেন সৌমিত্রকন্যা]

অন্যদিকে, কৃষ্ণনগরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি। রবিবার দুপুরে অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ সেখানে পৌঁছনমাত্রই শোকস্তব্ধ হয়ে যান সকলে। জীবনের কঠিন যুদ্ধে এভাবে যে হেরে গিয়েছে ‘ঘরের ছেলে’, মানতে পারছেন না কেউ। বিকেলের দিকে দেখা যায়, বাড়িটি ঢেকে গিয়েছে অভিনেতার ছবি দেওয়া শ্রদ্ধা সম্বলিত ব্যানারে।

ছবি: সঞ্জিত ঘোষ
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement