সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বিজেপি শাসিত কর্ণাটকের কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এমনকী, এই নিয়ে মামলাও ওঠে আদালতে। আর এর মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও এই বিতর্কের আগুনে আরও ঘৃতাহুতি দিল। গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে হিজাব-বিতর্কের গনগনে আগুন।
কর্ণাটকের (Karnataka) একটি কলেজে একদল উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদী যুবকের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির পালটা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তুলে খবরে আসেন বোরখা পরা এক শীর্ণকায় মুসলিম তরুণী। নেট মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওই তোলপাড় তুলে দিয়েছে গোটা দেশে। দেশের সব মহল এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কর্ণাটকের এই ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন বলিউডের জনপ্রিয় গীতিকার জাভেদ আখতার। বৃহস্পতিবার টুইট করে গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন তিনি।
টুইট করে জাভেদ আখতার লিখলেন, ”আমি কোনও দিনই হিজাব বা বোরখার সমর্থন করি না। সেই মনোভাব এখনও আমার বদলে যায়নি। তবে সম্প্রতি কর্ণাটকের কলেজের স্বল্প সংখ্যক মেয়েদের উপর একদল দুষ্কৃতী যেভাবে চড়াও হল, সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। তবে তারা অসফল। কিন্তু আমার প্রশ্ন এটাকেই কি পুরুষত্ব বলে! গোটা ঘটনায় আমি একেবারেই হতাশ।”
[আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া পড়ুয়াদের পালটা, ‘আল্লাহু আকবর’ সুর চড়ালেন মুসলিম ছাত্রী]
পোশাক নিয়ে কর্ণাটকের এই বিতর্ক অবশ্য আজকের নয়। কর্ণাটক শিক্ষা আইন, ১৯৮৩-র ১৩৩ (২) ধারা অনুযায়ী, সমস্ত পড়ুয়াকেই কলেজ কমিটির বেছে দেওয়া পোশাক পরেই কলেজে আসতে হবে। চলতি বছরের গোড়া থেকেই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছিল এই বিতর্ক। সেই সময় উদুপি ও চিকমাগালুর কলেজের কিছু পড়ুয়া হিজাব পরা শুরু করলে শুরু হয় বিক্ষোভ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কর্ণাটক সরকারের সমালোচনা করে বলেছিলেন, দেশের মেয়েদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে চাইছে এই সরকার। অন্য দিকে গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য ছিল, এই নিষেধাজ্ঞায় কোনও ভুল নেই। গত শনিবার টুইটারে রাহুল গান্ধী লেখেন, “শিক্ষার পথে হিজাবকে বাধা হতে দিয়ে আমরা ভারতের মেয়েদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছি। মা সরস্বতী সকলকে জ্ঞান দান করেন। তিনি বিভেদ করেন না।” পালটা তোপ দেগেছে কর্ণাটক বিজেপি। তাদের অভিযোগ, শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা ঢোকাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা।
উল্লেখ্য, মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিছু কলেজে হিজাব পরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বটে, তবে ছাত্রীরা ওই পোশাক পরে ক্লাস করতে পারবেন কিনা, সেই বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে মুসলিম ছাত্রীদের দাবি, তাঁদের হিজাব পরেই ক্লাস করার অনুমতি দিতে হবে। সব মিলিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণের রাজ্যটি। আর এই উত্তপ্ত রাজ্যের ঘটনাপ্রবাহে গোটা দেশ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। জাভেদ আখতারও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।