আকাশ মিশ্র: স্বর্গ-নরক। সত্য়িই কি মৃত্যুর পর আত্মাদের ঠাঁই দেওয়ার জন্য আলাদা কোনও জগত রয়েছে? সত্যিই কি পাপ করলে নরকে ঠাঁই, পুণ্যে জুটবে স্বর্গ? সব ধর্মেই এমন দর্শন রয়েছে। যার উপর দাঁড়িয়েই পাপ-পুণ্যের হিসাব এবং পুজো-আর্চা। তবে পরিচালক সঞ্জয় পুরণ সিং ছবির বিষয় হিসেবে বাছলেন জেহাদের নামে জঙ্গিদের ব্রেনওয়াশের ধর্মীয় টোপ ‘৭২ হুরে’কে। যা মূলত, ‘দুষ্ট’ মৌলবীদের হাত ধরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় জেহাদের নাম করে। আল্লার নাম করে।
কী এই বাহাত্তর হুরে?
আল্লার পথে চলে জেহাদে অংশ নিলে মৃত্যর পর শুধু স্বর্গ লাভ নয়, সঙ্গে ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করবে বাহাত্তর হুর বা ৭২ অপূর্ব সুন্দরী মহিলারা। ব্যক্তির যত্নে নিজেকে কুর্বান করবে এই ৭২ সুন্দরী। শুধু তাই নয়, এক পুরুষের শরীরে, ৪০ টি পুরুষের শক্তির সঞ্চার ঘটবে। একমাত্র জিহাদে অংশ নিয়ে শহিদ হলেই মিলবে এই সুবিধা।
ছবি শুরু হয় মৌলবীর ‘৭২ হুরে’র দর্শন দিয়েই। তার পরের দৃশ্য়েই দেখতে পাওয়া যায় এই ছবির মূল দুই প্রোটাগনিস্ট হাকিম ওরফে পবন মালহোত্রা এবং বিলাল ওরফে আমির বসিরকে। মানববোমা হয়ে দু’জনেই বিস্ফোরণ ঘটায় মুম্বই গেটে। মৃত্য়ুর পর হাকিম ও বিলাল অপেক্ষা করছে স্বর্গে যাওয়ার জন্য। অপেক্ষা করছে ৭২ সুন্দরীর জন্য। আর এখান থেকেই একে একে মৌলবীর বলা দেখানো দর্শন এবং হাকিম ও বিলালের মৃত্যুর পরের জীবনের দ্বন্দ্ব। গল্প এগিয়ে চলে। বোমায় ছিন্নভিন্ন নিজেদের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাকিম ও বিলাল। চোখে হতাশা থাকলেও, ৭২ হুরের আশায় ভাসছে তারা। কবর দেওয়ার পরেই মিলবে স্বর্গ। স্বর্গ যাওয়ার পথ ও অন্ত্যোষ্টির মধ্যে একে একে হাকিম ও বিলাল উপলদ্ধি করতে থাকে, ৭২ হুরে বলেই সত্যিই কিছুই নেই। বরং নরক রয়েছে। নরক রয়েছে জেহাদের নামে নাশকতার মধ্যে। নরক রয়েছে ধর্মের নাম করে যাঁরা মানুষ খুন করার করার কথা বলে তাদের মনে। তাদের বিশ্বাসী। কারণ, নিষ্পাপের হত্য়া জেহাদ নয়।
[আরও পড়ুন: বিয়ের আগে সেবাধর্ম পালন, হবু স্বামী রাঘবের সঙ্গে বাসন ধুলেন পরিণীতি, দেখুন ভিডিও]
এই ছবির সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয়টি হল সিনেম্য়াটোগ্রাফি। ছবির পর্দায় অদ্ভুত মায়াজাল তৈরি করেছেন পরিচালক। মূলত, ব্যবহার হয়েছে স্টক ফুটেজ। বিশেষ করে ছবির বেশির ভাগ সাদা কালো হওয়ায় আরও বেশি মগজে আঘাত দেয়।
এই ছবিটি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ বা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মতো একেবারেই প্রোপাগান্ডা ছবি নয়। বরং প্রচলিত এক টেক্সট ‘৭২ হুরে’কে প্রশ্ন করে একেবারেই জঙ্গিহানা বা জঙ্গিদের ব্রেনওয়াশের জায়গা থেকে। আর তাই হয়তো ছবি জুড়ে মৌলবাদের আধিপত্য থাকলেও, কোথাও গিয়ে সব ধর্ম এবং তা নিয়ে রাজনীতিকেই প্রশ্ন তোলেন পরিচালক।
অভিনয়ের দিক থেকে পবন মালহোত্রা ও আমির বসির দুজনেই অসাধারণ। পুরো ছবিটা দাঁড়িয়ে ছিল তাঁদের অভিনয়কে কেন্দ্র করেই। চার বছর আগে এই ছবিটি তৈরি করেছিলেন পরিচালক সঞ্জয় পুরণ সিং। তবে ডিস্ট্রিবিউটার না পাওয়ায় ক্যানবন্দিই ছিল এই ছবি। অবশেষে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবির ব্যবসায়ীক সাফল্য দেখেই এই ছবি মুক্তির সিদ্ধান্ত। বিতর্ক নয়, বরং এই ছবি শান্তির কথা বলে।