shono
Advertisement

‘কড়ক সিং’ হিসেবে পঙ্কজ ত্রিপাঠীকে পাওয়া কতটা কঠিন ছিল? জানালেন অনিরুদ্ধ

একান্ত আলাপচারিতায় বাংলা ছবি নিয়েও নানা কথা বললেন পরিচালক।
Posted: 04:45 PM Dec 01, 2023Updated: 04:45 PM Dec 01, 2023

Zee5 প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে পঙ্কজ ত্রিপাঠী, জয়া আহসান অভিনীত ‘কড়ক সিং’। তার আগে বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়ের মুখোমুখি পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী (Aniruddha Roy Chowdhury)।

Advertisement

৫৪তম ‘ইফি’-তে ‘কড়ক সিং’ দেখানো হয়েছে। কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। পাঁচশোর বেশি সংখ‌্যক আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছিল দর্শকে। এবং ছবির বিশেষ বিশেষ দৃশ্যে হাততালি পড়েছে যেটা আমরা আশা করিনি। পঙ্কজ ত্রিপাঠী নিজে ছবিটা দেখতে গিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন।

ট্রেলার অনেক প্রশ্ন উসকে দিয়েছে। আপনার মুখে শুনতে চাই ছবির বিষয়।
থ্রিলার ধর্মী ছবি। হু ডান ইট, হাউ ডান ইট– দুটো ব‌্যাপারই আছে। কেন্দ্রে রয়েছে একটা ডিসফাংশনাল ফ‌্যামিলি এবং একটা অঘটন কীভাবে সেই পরিবারকে এক করে দেয়। অনেক স্তর রয়েছে সম্পর্কের। এক ব‌্যক্তির জীবনে তিনজন নারী, তার মেয়ে, বান্ধবী এবং একজন নার্স। এবং প্রতিটি সম্পর্ক থেকেই একটা উত্তরণ ঘটে।

‘কড়ক সিং’ পরিচালনার দায়িত্ব কীভাবে এল?
এই ছবির মূল প্রযোজক বিরাফ সরকারি, ২০১৬-তে আমাকে একটা গল্প শোনায়। সেখানে বাবা-মেয়ের একটা সংঘাতের দৃশ‌্য আমার মনে ধরে যায়। সেখান থেকে শুরু। যে ছবিই করি, আমার চারপাশ থেকে তার উপাদান নিয়ে থাকি। যে গল্প রিয়‌্যাল নয়, সে গল্প আমাকে কানেক্ট করে না, সেটা নিয়ে কাজ করতে পারব না। তারপর গল্পটার অর্গানিক গ্রোথ হয়, সাত-আট বছর ধরে।

লিখতে গিয়ে সত্যি কোনও ঘটনা আপনাকে ইন্সপায়ার করেছে?
অনেক ঘটনা আছে যা জীবন থেকে নেওয়া। বাবা অসুস্থ থাকার সময়, আমার এক দিদি এসে বাবার দাড়ি কামিয়ে দেয়। ক‌্যাফেতে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়, যারা পরস্পরকে চিনত না, কিন্তু ক‌্যাফেতে দেখা করত। এমন অনেক টুকরো টুকরো ঘটনা চিত্রনাট্যে ঢুকে পড়েছে। বা একটা স্ক‌্যাম সেটা তো আমাদের দেশে ঘটেছে।

আপনার আগের ছবি ‘লস্ট’-এর চরিত্ররাও কলকাতার, এখানে এ. কে. শ্রীবাস্তব ফিনান্স দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগে– সেও কলকাতার। কলকাতা কেন জরুরি?
কলকাতা আমার শহর, আমার চেনা পরিবেশ। আর ‘কড়ক সিং’-এ কলকাতাও একটা চরিত্র হয়ে ওঠে। আমার বেশির ভাগ ছবির প্রেক্ষাপট কলকাতা। এটা পক্ষপাতিত্ব বলতে পারো। দিল্লি ভেবেছিলাম, কিন্তু দিল্লির ল‌্যান্ডস্কেপ পছন্দ হয়নি। সম্পর্কের ছবি বলেই কলকাতার ডায়নামিক ব‌্যাকড্রপ দরকার ছিল।

পঙ্কজ ত্রিপাঠীকে পেতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়?
খুবই সহজ ছিল ব‌্যাপারটা। ওঁকে স্ক্রিপ্ট পাঠানো হয়েছিল। আর ওঁর কাছে কোনও ডেট ছিল না। উনি এত ব‌্যস্ত। কিন্তু রাতে স্ক্রিপ্ট পেয়ে সকালে ফোন করে বলেন, অ‌্যাম অন। তারপর মাড আইল‌্যান্ডের বাড়িতে দেখা করি। সেখান থেকে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হল। প্রচুর কথা হল। উনি ওয়ার্কশপও করলেন।

কড়া মেজাজের বাবা এবং সন্তানের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ক, এই বিষয়টা এখন দেখছি ট্রেন্ডিং। রণবীর কাপুর অভিনীত ‘অ‌্যানিমাল’-এও সেই টক্সিক ছোঁয়া। ‘কড়ক সিং’-এও তাই? কী মনে হয়, ক্ল‌্যাশ হতে পারে?
না, না। সব ছবিরই একটা নিজস্ব জায়গা আছে। সেটা নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। দুটো ভিন্ন ধরনের ছবি। কিন্তু আমাদের ছবিতে কোনও টক্সিক সম্পর্ক নেই। অনুভূতির সম্পর্ক আছে, বোঝাপড়ার সম্পর্ক আছে, একটা খুঁজে পাওয়ার তাগিদ আছে, সত‌্য জানার ইচ্ছে আছে আর যেটা আছে সেটা হল দায়িত্ববোধ।

[আরও পড়ুন: রণবীরের ‘ওয়ান ম্যান শো’, প্রতিশোধস্পৃহ মানসিকতার ভয়ঙ্কর অবতার ‘অ্যানিম্যাল’, পড়ুন রিভিউ]

‘লস্ট’-এর একটা রাজনীতি ছিল। ‘কড়ক সিং’-এ সেই ছোঁয়া থাকবে? কতটা পলিটিকাল?
পলিটিকাল মানে তো শুধু সো-কলড পলিটিক্স নয়। হিউম‌্যান সাইকোলজিকাল পলিটিক্স ইজ অলসো আ পলিটিক্স! আমার পলিটিক্স কী? সেটা কোনও দলীয় রাজনীতি নয়, আমার পলিটিক্স, আমার ভাবনা-চিন্তা। সেটা তো আছেই।

পরপর তিনটে হিন্দি ছবি। কলকাতার ‘টনিদা’ এখন জাতীয় স্তরে– প্ল‌্যান করেই এভাবে এগনো?
অর্গানিকালিই হয়েছে, বলা যায়। প্রথমটার পর, পরের হিন্দি ছবির সুযোগও পেয়ে যাই। কিন্তু আমার বাঙালিয়ানাকে ভুলিনি। আমার সেনসিটিভিটি একেবারে পিওর বাঙালি। আমার মনে হয়, লোকাল ইজ নিউ গ্লোবাল। মালয়ালম ভাষায় ছবি করার কথা হচ্ছে। বাংলাদেশে ছবি করার ইচ্ছে আছে। হিন্দিতে দুটো ছবির কথা রয়েছে এবং হিন্দিতে বেশি কাজ করি কারণ, এটার রিচ বেশি। এক্সপেরিমেন্টও করা যায়। দুটো বাংলা স্ক্রিপ্ট রেডি আছে। সেটাও শিগগির শুরু করব।

বাংলা ভাষায় ছবি করলে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ কম?
একটু হয়তো কম…উমম…আমাদের আরও বেশি এক্সপেরিমেন্টাল হতে হবে। আরও একটু বেশি নির্ভীক হয়ে বাংলা ছবি বানাতে হবে। তারপর দেখা যাক না কী হয়।

আপনার পরবর্তী বাংলা ছবি আগামী বছর গোড়াতেই শুরু করছেন…
হ্যাঁ, তেমনই কথা রয়েছে। মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে ছবি, কাস্টিং ফাইনাল হয়নি। তবে দু’একটি নাম উঠে এসেছে।

পঙ্কজ ত্রিপাঠীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
ওঁর সঙ্গে দারুণ বন্ডিং হয়ে যায়। খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসেন। ওঁর বাড়িতে তেমন আড্ডায় আমাদের একটা চুক্তি হয়েছিল, ‘আচ্ছা খায়েঙ্গে, আচ্ছা পিয়েঙ্গে, বচা যো টাইম মিলেগা, উসমে হাম ফিল্ম বনায়েঙ্গে’। পঙ্কজ গানবাজনাও খুব ভালোবাসেন। ওঁর বাড়িতে সব ধরনের মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট আছে। শেষ যেদিন গেলাম, প্রচুর গানবাজনা হল। পাপন এসেছিল। এটাকে আমরা বলি ‘লয়কারি’। সেটা হচ্ছে মেজাজে থাকা, আনন্দে থাকা আর কাজও করা। ভালো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। সিনেমা তো কোলাবোরেটিভ আর্ট। এই যে ক্রিয়েটিভ আইডিয়ার আদান প্রদান সেখান থেকে একটা সৃষ্টি –পার্টিসিপেন্টরা ভালো হলে, কাজটাও ভালো হয়।

‘কড়ক সিং’-এ তিনজন নারী চরিত্র, সঞ্জনা বলিউড, জয়া বাংলাদেশ এবং পার্বতী দক্ষিণ থেকে– ভিন্ন জায়গা থেকে কাস্টিং-এর কারণ কী?
লিখতে লিখতে আমি কাস্টিং করি না। লেখার পর মুখগুলো ভেসে ওঠে। পার্বতীকে আমি কাজের কথা বলি ২০১৬-তে। বান্দ্রার একটা ক‌্যাফেতে ওকে মিট করি। ওর অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে। তক্কে-তক্কে ছিলাম। বাবা যখন নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন, আমি দেখেছি নার্স, বা হেড নার্স সবাই মালয়ালি। তখন ওর কথা মনে হল। এত ছোট কাজ তবু অফার করলাম। ও রাজি হয়ে গেল। দেখো, কী সুন্দর কাজ করেছে। আমাদের এমনও কথা হয়, যে চল একটা বাংলা ছবি একসঙ্গে করি। জয়ার সঙ্গেও অনেকদিন ধরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। এই চরিত্রের সঙ্গে জয়ার একটা মিল পেলাম। ওর একটা আভিজাত‌্য আছে, সাইলেন্স আছে, গভীরতা আছে। এই দুজনের সঙ্গে কাজ করে এত ভালো লেগেছে, ইচ্ছে করছে ওদের দুজনকে নিয়ে একটা ছবি করি। সঞ্জনাও নতুন, খুব পিওর, কাদার তালের মতো ছিল। অনেক কথা বলেছি, ওয়ার্কশপ করেছি। ওর মধ্যে থেকে আমি ‘সাক্ষী’ পেয়ে গেলাম। শুটিং তো এগজিকিউশন, আসল কাজটা আগেই হয়ে যায়।

[আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মুখে শাহরুখ! বাদশাকে দেখে জানেন কী করলেন নিরাপত্তারক্ষী? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement