সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খাতায় কলমে দিওয়ালি শেষ৷ কিন্তু সিনেপ্রেমীদের কাছে যেন শেষ হয়েও তা শেষ হয় না৷ শেষ রোশনাইটুকুর জন্য থাকে অপেক্ষা৷ নভেম্বরের প্রথম দিনটা গড়িয়ে গেলেই তাই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান মন্নতের দরজায়৷ জ্বলে ওঠে আতশবাজি৷ আর সেই রংমশালের গায়েই যেন লেখা থাকে হ্যাপি বার্থ ডে বলি-বাদশা৷
শূন্য থেকে শুরু করে শীর্ষে পৌঁছানো বলিউডি কাহিনীর খুব চেনা ছক৷ অনেক অপ্রাপ্তির ভিতর এই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হয়ে ওঠাটুকুই দু’দণ্ডের শান্তি দেয় দর্শককে৷ শেক্সপিয়র যেমন বলেন, মানুষ এতটাই ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত যে, হাজারও ইচ্ছে থাকলেও, ইচ্ছের পরিণতি তার হাতে নেই৷ ঠিক এখান থেকেই শুরু সিনেমার৷ কেননা মানুষের না-পাওয়া ভুলিয়ে, ইচ্ছার দুনিয়ার সঙ্গে সে এক সংগতি স্থাপন করে৷ আরও একধাপ এগিয়ে সিনেমা সম্পর্কে বলা হয়, তা এতটাই খেলুড়ে যে, সে শুধু ইচ্ছেপূরণের দুনিয়াতেই হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় না, বরং ইচ্ছের দুনিয়াটা কীরকম হবে তাও শেখায়৷ মানুষ জানে, তা বাস্তব নয়, প্রতি সেকেণ্ডে ২৪ ফ্রেমের মিথ্যেমাত্র, তবু এই ছদ্ম বাস্তবতার কাদম্বরী তাকে বুঁদ করে রাখে৷ আর চিত্রনাট্যের এ চেনা ছক যখন সত্যি সত্যিই বাস্তবের প্রশ্রয় পায়, তখন তা জন্ম দেয় এক অতিকথনের৷ বাস্তবের চেনা চৌহদ্দির ভিতর থেকে তখন জন্ম হয় তারকার, যিনি রক্তমাংসের মানুষ হয়েও অতিক্রম করে যান বাস্তবতার ধুলোময়লা৷ অমিতাভ বচ্চন পরবর্তী হিন্দি ছবির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেই তারকার আসনটি শাহরুখেরই৷ কোনও গডফাডার না থেকেও শাহরুখের বলিউডের শীর্ষে পৌঁছানো এক বাস্তবিক লার্জার দ্যান লাইফ চিত্রনাট্য, যাকে বলিপাড়ার ভাষায় ব্লকবাস্টার বলা যায়৷
Crowd Outside Mannat To Wish Happy Birthday To Baadshah Of Bollywood Shah Rukh Khan.#HappyBirthdaySRK
RT If U
Himpic.twitter.com/zFlUDRKlJi
— Sir Ravindra Jadeja (@SirJadeja) November 1, 2016
নব্বইয়ের দশক নানা কারণে ভারতের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশ্বায়ন পরবর্তী দেশের বদলে যাওয়া আর্থ-সামাজিক মানচিত্র চাইছিল নতুন এক তারকাকে যিনি নয়া দশকের আত্মবিশ্বাস আর আকাশছোঁয়া স্বপ্নের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেন৷ ঠিক এই প্রেক্ষাপট থেকে উত্থান স্টার শাহরুখের৷ সত্তরের ঢেউ সামলে আশির স্থিতাবস্থায় ভর করে নব্বই যখন নোঙর তুলছে, বিগত দশকগুলির নানা ক্ষয়ক্ষতি সামলেও নতুন একটা দিশা খোঁজার চেষ্টা যখন দেশের অভ্যন্তরে, তখন শাহরুখি সংলাপে শোনা গেল হারতে হারতেও শেষমেশ জিতে যাওয়ার কথা৷ নানা সামাজিক ভাঙনের ভিতর দাঁড়িয়েও পরিচালকদের প্রশ্রয়ে শাহরুখ হয়ে উঠলেন সেই ছেলেটা যে ওষুধ নেওয়ার ছুতোয় বিয়ার নিয়ে পালাতে পারে, কিন্তু একা ঘরে বান্ধবীকে পেয়েও কোনও কুমতলব যার ভাবনায় আসে না৷ শাহরুখ হয়ে উঠলেন সেই কাঙ্খিত প্রেমিকটি যিনি প্রেমের ভিতর বন্ধুতাকেই দেখেন বড় করে৷ অপেক্ষা করেন প্রেমাষ্পদের ফিরে তাকানোর জন্য৷ শাহরুখ হয়ে উঠলেন সেই ভারতীয় যুবক যিনি অপেক্ষা করেন কখন প্রেমিকার বাবা সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে পুরুষটির হাতে হাত মিলিয়ে দেবেন নারীটির৷ সামাজিক মূল্যবোধগুলি শোণিতপ্রবাহে নিয়ে যে আধুনিকতার স্বপ্ন দেখে সমাজ, শাহরুখ ফ্রেমে ফ্রেমে হয়ে উঠলেন তারই প্রতিনিধি৷ ফলত ভারতীয় দর্শকও তাঁকে বাজিগরের তকমা দিতে দ্বিধা করেনি৷ একই সঙ্গে হিন্দি ছবির ‘ডায়াস্পরা ডার্লিং’ও হয়ে ওঠেন তিনিই৷
খাঁটি অভিনেতা ও তারকার মধ্যে দূরত্বটুকু ভারতীয় সিনেমায় বারবার স্বীকৃত হয়েছে৷ সে উত্তম-সৌমিত্র হোক কিংবা অমিতাভ-নাসির, বরাবর সিনেপ্রেমীরা এই দ্বন্দ্বে মেতেছেন৷ কিন্তু এর ফয়সালা একান্তই সময়ের হাতে নির্ধারিত৷ ফলে দ্বন্দ্বের পরিসরটুকুই থাকে মাত্র, আর অতিকথনের আশ্রয়ে নক্ষত্রের আলো কখন যেন ইতিহাস অভিমুখী হয়ে পড়ে৷ আজ যখন শাহরুখকে বলি বাদশার খেতাব দেওয়া হয়, তখন সেই চেন ছবিটিই আরও একবার ফিরে আসে৷
আর তাই আবারও জ্বলে ওঠে আতশবাজি৷ রংমশালের আলো ধুয়ে দেয় মন্নতের মার্বেল৷ দুনিয়া জোড়া ‘জাবরা’ ফ্যানরা ভিড় জমায়৷ আসলে শাহরুখের জন্মদিন বোধহয় ছুতো, ভারতীয় দর্শক প্রতি ২ নভেম্বর সেলিব্রেট করে সিনেইতিহাসে নক্ষত্রজন্মের ট্রাডিশনটিকেই৷
The post বাদশার জন্মদিন সেলিব্রেশনে বলিপাড়ায় দিওয়ালির রোশনাই appeared first on Sangbad Pratidin.