Nirbhaya Movie Review: নির্যাতিতার নয়, মাতৃত্বের গল্প বলে ‘নির্ভয়া’, দুর্বল চিত্রনাট্যের মাঝে অভিনয়ই একমাত্র প্রাপ্তি

07:23 PM Nov 13, 2021 |
Advertisement

বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়: অংশুমান প্রত্যুষ পরিচালিত ‘নির্ভয়া’ পুরনো স্মৃতি উস্কে দিলেও এই ছবি আরও অনেক কিছু নিয়ে। মফস্‌সলের মেয়ে ১৩ বছরের পিয়ালীর (অভিনয়ে হিয়া) গণধর্ষণ হয়। চার ধর্ষকের রাজনৈতিক যোগ থাকায় সহজেই তারা ফেরার হয়। এবং পিয়ালী কোমায় থাকাকালীন তার গোটা পরিবার একটি অগ্নিকাণ্ডে মারা যায়। চেতনা আসার পর পিয়ালী জানতে পারে সে সন্তানসম্ভবা।

Advertisement

এরপর আসল ছবি শুরু। পিয়ালীর সাহায্যে এগিয়ে আসে সমাজসেবী নন্দিতা (অভিনয়ে শ্রীলেখা) এবং তার পরিচিত তরুণ আইনজীবী ঋত্বিক দত্ত (অভিনয়ে গৌরব)। তারা কোর্টে পিয়ালীর পক্ষ হয়ে অ্যাবরশনের পিটিশন দেয়। অন্যদিকে সরকারি দুঁদে আইনজীবী ঋতব্রত (অভিনয়ে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) এবং তার সহকারী আরাত্রিকা (অভিনয়ে প্রিয়াঙ্কা) এর বিরোধিতা করে।

গোটা ছবিটাই কোর্ট রুম-এর ট্রায়াল নির্ভর। কোর্টে যেভাবেই হোক ঋত্বিককে হারাতে মরিয়া সিনিয়র আইনজীবী ঋতব্রত। এবং তাকে সাহায্য করে আরাত্রিকা। তবে ঋত্বিক এবং আরাত্রিকার যে পূর্বে সম্পর্ক ছিল তা বোঝা যায়। পরে অবশ্য জানা যায় তারা স্বামী- স্ত্রী। অ্যাবরশনের পিটিশন খারিজ হয়ে যায় এবং পিয়ালী এই সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়। এরপর আরাত্রিকা এগিয়ে ঋত্বিকের পাশে দাঁড়ায়। তারা নতুন পিটিশনের আবেদন করে যেখানে তারা পিয়ালীর শিশুকে দত্তক নিতে পারবে এবং সে অনাথ আশ্রমে বড় হবে না।

Advertising
Advertising

 

[আরও পড়ুন: এবার প্রকাশ্যেই নুসরতের সঙ্গে ‘ইশক’ যশের! নজর রাখতে পারবেন আপনিও, ব্যাপারটা কী?]

আগেই বলেছি কোর্ট রুম ড্রামা হিসাবে এই ছবি ভালই লাগবে। তবে কিছু প্রশ্ন তুলতেই হয় এবং তার সঙ্গে মিশে থাকে ভ্রু-কুঞ্চন! পরিচালক একজন নির্যাতিতার গল্প বলতে গিয়ে আরও অনেক কিছুর ইঙ্গিত করেছেন, সেটা সচেতনভাবে কি না বোঝা যাচ্ছে না! এই ছবিতে একজন ধর্ষিতাকে প্রথমে জোর করে মাতৃত্ব সঁপে দেওয়া হল। এবং পরবর্তীকালে দেখা গেল মেয়েটি মা হয়ে খুশি। নিশ্চয়ই তেমনটা হতে পারে। কিন্তু সিনেমায় সেটাকে উদযাপন করা মানে এইটা বলতে চাওয়া মা হওয়ার চাইতে মহান কিছু হতে পারে না। মা হও এবং সব দুঃখ, অপমান, অন্যায় ভুলে এতেই মনোযোগ দাও, কারণ তোমার কাছে আর কিছুই নেই। তাই পরিচালক পিয়ালীকে খুশি মনে তার সন্তানকে গ্রহণ করার দিকে ঠেলে দিলেন। এখানেই শেষ নয়। আরাত্রিকা এবং ঋত্বিকের ছাড়াছাড়ি হয় কারণ আরাত্রিকা অ‌্যাবরশন চেয়েছিল এবং করেছিল। এবং পরিচালক এই স্বাধীনচেতা নারী চরিত্রটিকে অপরাধবোধের দিকে ঠেলে দিলেন। সে মেনে নিল তার স্বামীর কাছে যে সন্তানটি নষ্ট করা উচিত হয়নি। এবং তারপর দু’জন মিলে এই নতুন পিটিশন-এর যুদ্ধে যোগ দিলেন! যেখানে পিয়ালীর সন্তানের ভার তারা পাবে। একজন ধর্ষিতা নারীর যন্ত্রণা, সমাজের দায়ভার, দোষীদের শাস্তি পাওয়ার থেকেও বড় হয়ে উঠল মাতৃত্ব। সমাজে নারীর এর চেয়ে বড় কোনও দিক যেন থাকতেই পারে না। ২০২১-এ দাঁড়িয়ে নারী মানেই মাতৃত্ব এই থিওরি আর খাটে না। মা হওয়া একটি চয়েস এবং প্রতিটি নারীর স্বাধীনতা আছে সে এর পক্ষে কিংবা বিপক্ষে নিজের জীবন চালনা করবেন। তবে এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে পরিচালক জোর দিতে চাইলেন যে অ্যাবরশন করা মোটেই ভাল কাজ নয়। তার প্রমাণ স্বরূপ হেরে যাওয়া আইনজীবী ঋতব্রতর সংলাপ। আরাত্রিকা-ঋত্বিককে তিনি বলেন, ‘আমাকে তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আগের পিটিশনে তোমাদের হারিয়ে দিয়েছিলাম বলেই তো পিয়ালীর বাচ্চা হল। আর তোমরা বাবা মা হলে!’

কী সুন্দর যুক্তি। সত্যি তো তেরো বছরের মেয়েটা মা না হলে কী আর সিনেমার গল্প এগোয়! কিংবা মাতৃত্বের জয় হয়! বিচারের দিক থেকে দেখতে গেলে, প্রথম ভুলটাকে পরে কোনও মতে জোড়া তাপ্পি দিয়ে ঠিক করলে কি প্রথম ভুলটা আর ভুল থাকে না? এই ছবির রাজনীতি একটু গোলমেলে। তাও ভাল সব্যসাচী চক্রবর্তী (বিচারক অরবিন্দ সান‌্যালের চরিত্রে) শ্রীলেখা, গৌরব চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় এবং প্রিয়াংকা সরকারের মতো অভিনেতারা ছিলেন। কোর্ট রুমে তাঁদের উপস্থিতি এই ছবিকে ধরে রাখে এবং এটাই ছবির একমাত্র এক্স ফ‌্যাক্টর।

[আরও পড়ুন: স্বরযন্ত্রে রক্তক্ষরণ, এক মাস গান গাইতে পারবেন না সাহানা বাজপেয়ী ]

Advertisement
Next