shono
Advertisement

Breaking News

আঁধারঘন জীবনের গল্প ‘নীহারিকা’, প্রকৃতির ক্যানভাসে একাকীত্বের কিছু একান্ত আপন কথা

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভয়’ গল্প অবলম্বনে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন ইন্দ্রাশিস।
Posted: 02:16 PM Jul 22, 2023Updated: 03:14 PM Jul 22, 2023

শম্পালী মৌলিক: জীবনটা হল আকাশের মতো। মেঘের পরে মেঘ জমবে, বৃষ্টি হবে। আকাশ-জোড়া মেঘ ভাসতে ভাসতে সরেও যাবে। কখনও বা রামধনু উঠবে, ঝিলমিল করা আলো দেখা দেবে। ঝিলমিল করা মুহূর্তের বড় অভাব দীপার (অনুরাধা মুখোপাধ‌্যায়) জীবনে। ইন্দ্রাশিস আচার্যর নতুন ছবির কেন্দ্রচরিত্র এই দীপা। তার নিস্তরঙ্গ, আঁধারঘন জীবন নিয়ে ছবি করার সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক। আজকের থ্রিলার-গোয়েন্দা ছবির রমরমার যুগে এমন একটি কাহিনি বেছে নেওয়ার জন‌্য কুর্নিশ পরিচালককে।

Advertisement

বক্স অফিসের তোয়াক্কা না করে মনের নিভৃত কথনকে ধরতে চেয়েছেন তিনি। সঞ্জীব চট্টোপাধ‌্যায়ের ‘ভয়’ গল্পটি ধরে এ ছবি এগিয়েছে। ‘নীহারিকা’-র ক‌্যানভাস বিশাল প্রকৃতির কোলে, ছবির সবচেয়ে জোরাল দিক সেটা। পাহাড়, আকাশ, গাছ, রুক্ষ্ম প্রান্তর আর মানুষের মন জড়িয়ে নিয়ে গল্প এগোয়।

কেমন সেই কাহিনি? দীপার ছোটবেলা আশান্তিময়, অন্ধকার। বাবার হাতে মাকে প্রত‌্যেকদিন নিগৃহীত হতে দেখেছে সে। ছোট কাকার অস্বস্তিকর স্পর্শ তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। যৌনতার সঙ্গে তার পরিচয় হয় খুব খারাপ পরিবেশে। নিজেকে খুব ভাল করে চিনতেও পারেনি তখন। মায়ের মৃত‌্যুতে চরম একাকিত্বে ডুবে যায় একসময়। মন তখন খুঁজছে একটুখানি ভালবাসার স্পর্শ। অসুস্থ দাদুর এক নার্সের কাছে সে মাথা রাখার কাঁধ পায়।

কিন্তু এ পাওনা কি ভালবাসা? জানে না দীপা। শরীরে শরীর মিলে যায়, কিন্তু মন? বাবা একসময় দীপার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। মামাবাড়ি পাঠিয়ে দেয় তাকে। ছোটমামার (শিলাজিৎ মজুমদার) সঙ্গে তার সুন্দর সম্পর্ক। একটা নির্ভরতার জায়গাও আছে। শিমূলতলায় যেতে বোঝে মামিও (মল্লিকা মজুমদার) তাকে ভালবাসে। কিন্তু মামাবাড়ির জটিলতাও দীপাকে গ্রাস করে।

[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে কাকভেজা! রেস্তরাঁয় খেয়েই ‘ওপেনহাইমার’ দেখতে ছুটলেন অর্জুন-রণবীররা]

গল্পের ডিটেলে যাচ্ছি না। শিমূলতলার প্রকৃতি দীপার জীবনের দোসর হয়ে ওঠে যেন। ঠিকানাহীন মেয়েটা ওই বাড়িটাকে আপন করে নেয়। কিন্তু মনের অন্দরে চলে চাপানউতোর। নিজের ভিতরের অপরাধবোধ, ভাললাগা-খারাপলাগা বলবে কাকে? নাকি বাকি জীবনটা ভান করে কাটিয়ে দেবে? মামির সঙ্গে তার সুন্দর সম্পর্ক দেখানো হয়েছে ছবিতে। অতীত স্মৃতি, অন্ধকার পেরিয়ে দীপা ভাসতে ভাসতে একসময় ভালবাসার মানুষের কাছে নোঙর ফেলে।

কিন্তু তা স্থায়ী হয় কি? শারীরিক নির্যাতন, বিকৃত কামের স্মৃতি তো ঝাপসা হওয়া কঠিন। তবু প্রকৃতির আশ্রয়ে দীপা ঠাঁই পায়। বাকিটা সিনেমা হল-এ দেখাই ভাল। কারণ এ ছবির ফ্রেম চোখের আরাম। চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি (শান্তনু দে)। জয় সরকারের আবহসংগীত মনে ছাপ রেখে যায়।

অভিনয় প্রসঙ্গে বলি, অনুরাধা কেন্দ্রচরিত্রের ভার নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আপ্রাণ। মল্লিকা অনেকদিন পর অভিব‌্যক্তিতে মন ছুঁয়ে গেলেন। শিলাজিৎ তাঁর চরিত্রের চাহিদা মিটিয়েছেন। ছোট চরিত্রে অনিন্দ‌্য সেনগুপ্ত খুব ভাল। এ ছবি অস্বিত্বের সংকট অতিক্রম করে নিজেকে খোঁজার গল্প। তবে চিত্রনাট‌্যের চড়াইউতরাই নেই তেমন। আরেকটু টান টান হতে পারত ছবিটা। যাঁরা দেখবেন প্রকৃতিই তাঁদের মনযোগ ধরে রাখবে আগাগোড়া। ইন্দ্রাশিস মন দিয়ে ছবিটা করেছেন। তাঁর পরের ছবির অপেক্ষা রইল।

সিনেমা – নীহারিকা
অভিনয় – অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, শিলাজিৎ মজুমদার, মল্লিকা মজুমদার, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোহিনী চট্টোপাধ্যায়
পরিচালনা – ইন্দ্রাশিস আচার্য

[আরও পড়ুন: ‘মহিলা সহকারীর সঙ্গে সহবাস, স্বামীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী!’, রেখার আত্মজীবনী ঘিরে তুঙ্গে চর্চা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement