shono
Advertisement

Breaking News

চিত্রনাট্যেই বাজিমাত, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ‘মায়ার জঞ্জাল’ভাবনাকে উসকে দেয়, পড়ুন রিভিউ

বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ ছবির বড় প্রাপ্তি।
Posted: 03:57 PM Feb 24, 2023Updated: 04:20 PM Feb 24, 2023

শম্পালী মৌলিক: ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির তৃতীয় ছবি ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তি পেয়েছে সদ‌্য, ভারত-বাংলাদেশে একই দিনে। এত যত্নে বোনা ছবির চিত্রনাট‌্য, একবার দেখলেই চরিত্রগুলো মনে বসে যায়। দেখতে দেখতে মনে হয়, এই তো সিনেমা! ভয়েস ওভারের মাধ‌্যমে গল্প বলা নয়, মূল চরিত্রের চলন থেকেই ইমপ্রেশন তৈরি হয়, সিনেমার কাহিনি তার শিকড় ছড়াতে শুরু করে। আর ধরা পড়ে এই সময়কাল। নিদারুণ অবক্ষয়ের ছবি, তীব্র মায়ার ছবি, ভালবাসার নিষ্ফল হাহাকারের ছবি, দমচাপা ধ্বংসের প্রেক্ষাপট দেখায় ‘মায়ার জঞ্জাল’। নিজেদের নিয়ে ঠিক কী করবে জানে না মানুষ, তবু বেঁচে থাকার, ভেসে থাকার আকুতি থাকে। সব ধরনের আর্থ-সামাজিক স্তরেই যা কঠোর বাস্তব। দরিদ্র, মধ‌্যবিত্ত, নিম্নমধ‌্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত– সমাজের প্রত‌্যেকটা শ্রেণি একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে। এ যেন এক পিরামিড শৃঙ্খল, একটু টানাটানি হলেই ভেঙে পড়বে। প্রত‌্যেকটা চরিত্রের মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব, সূক্ষ্ম টানাপড়েন, এত সুন্দরভাবে ধরেছেন পরিচালক যে সমাজের চালচিত্রটা স্পষ্ট দেখা যায়।

Advertisement

ছবির মূল গল্পের খাঁচাটা মানিক বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের ‘বিষাক্ত প্রেম’ ও ‘সুবালা’ গল্প দু’টি ধরে হলেও, অত‌্যন্ত সমকালীন এই চিত্রনাট‌্য। অন‌্যতম প্রধান চরিত্র চাঁদু (ঋত্বিক চক্রবর্তী) প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করত। পরে এটিএম-এর দারোয়ানের কাজ জোগাড় করে, সেটাও যায়। অতএব তার চূড়ান্ত আর্থিক সংকট। এদিকে বউ সোমাকে (অপি করিম) অন‌্যের বাড়ির কাজ করতে দেবে না। বউ রোজগার করবে চাঁদুর ইগোয় লাগে। ভাবতে শুরু করে – মেয়েদের বাইরের নেশা ডেঞ্জার। কী করে কাজটা ছাড়ানো যায়। চাঁদুর কিচ্ছু নেই কিন্তু মিথ‌্যে পৌরুষের অহংকার আছে। উচ্চমাধ‌্যমিক পাস বউ ভাবে চাঁদুর ভালই তার ভাল। স্বামীর সামান‌্য রোজগারের সম্ভাবনায় কাজ ছড়ার কথা ভাবতেও দ্বিধা করে না। চাঁদু-চিনু-সোমার সংসারের এক অভাবদীর্ণ ছবি দেখি আমরা।

[আরও পড়ুন: একঘেয়ে গল্পে ডুবল ‘শেহজাদা’, বলিউডের রাজপুত্র হতে পারলেন না কার্তিক আরিয়ান]

রয়েছে সিন্ডিকেট-খ‌্যাদানো ছেলে সত‌্য (সোহেল মণ্ডল)। যেকোনওরকম ধান্দা করে রোজগার করতে সে তৎপর। এই সত‌্যর সঙ্গে একপ্রকার লাভ-হেট রিলেশনশিপ রয়েছে যৌনকর্মী বিউটির (চান্দ্রেয়ী ঘোষ)। বর তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল কোনও এককালে। সাতক্ষীরার সরলা সরকার থেকে শিয়ালদহের বিউটি হয়ে আজও বিয়ের ছবি দ‌্যাখে কাজের অবসরে। ভালবাসা সত্ত্বেও সত‌্যর চোখে চোরের চাউনি দেখে বিউটি বিছানাতেও। অন‌্যদিকে তাকে ভালবাসে মাছের আড়তদার গণশাদা (ব্রাত‌্য বসু)। বিউটির সোহাগের বাবু গণশা মাঝেমধ‌্যেই মাছ নিয়ে আসে তাদের সকলের জন‌্য। মাছের দাম জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘সব জিনিসের কি দাম হয় বোন?’ হাওয়া খেতে বেরয় বাবু বিউটিকে নিয়ে। শরীরের থেকে মন বেশি খোঁজে গণশা। এই বাবু গান ভালবাসে। মায়ের স্মৃতি তার মনজুড়ে। ‘সেই মা-ও আর নেই, শিঙি মাছ-ও নেই। সেই জ্বরও আর হয় না।’– অনবদ‌্য সংলাপ। কিন্তু বিউটির একটা বাড়ির স্বপ্ন কি পূরণ হবে? গণশা বলে, ‘সংসারের জঞ্জাল কি একদিনে ছাড়ানো যায়’? জীবন-স্বপ্ন-মায়া-জঞ্জাল হাত ধরাধরি করে হাঁটতে থাকে। এক গল্পের চরিত্র ঢুকে পড়ে অন‌্য গল্পে। সোমা যে হাইরাইজে কাজ করে, সে বাড়ির কর্ত্রী (কমলিকা বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়) পার্লারে যায়। তার পাশের চেয়ারে দেখা যায় বিউটিকে। ধান্দাবাজ সত‌্য, যে নির্মিয়মান বিল্ডিংয়ে আস্তানা গেড়েছে পেলের (অমিত সাহ) সঙ্গে, তাদের সঙ্গেও একসময় দেখা হয়ে যায় চাঁদুর। নিয়তির লিখন যেন! শহরের প্রেক্ষাপটে এই ধনী, দরিদ্র, হতদরিদ্রের সহাবস্থান আদতে বিনি সুতোয় গাঁথা। খণ্ডাবে সাধ‌্য কার? এই দুনিয়ায় অর্থ কত বড় নিয়ন্ত্রক দেখতে দেখতে মুহূর্তের জন‌্য নিয়তিকেও ফিকে লাগে। সমস্ত সম্পর্ক, না-সম্পর্ক, দূর-সম্পর্কের চড়াই-উতরাইয়ের সরণিতে অর্থ আর ভালবাসার দাগ লেগে থাকে। ভালবাসা ফুরলে সব জঞ্জাল হয়ে যায়। সত‌্য-চাঁদু-সোমা-গণশা-বিউটি সকলের পৃথিবীই তেমন। আমরা অবিরত চেষ্টা করি শুধু জঞ্জাল না হতে, বাতিলের খাতায় নাম না তুলতে। কেউ সফল হই, কেউ বা ব‌্যর্থ।

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির ছবিটা মনে থেকে যাবে টিম ওয়ার্ক এবং পরিচালকের ভাবনার স্বচ্ছতা ও প্রয়োগের মুন্সিয়ানার কারণে। বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ ছবির বড় প্রাপ্তি। ইন্দ্রনীল মুখোপাধ‌্যায়ের ক‌্যামেরা ছবির মেজাজের সঙ্গে মানানসই। প্রবুদ্ধ বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের মিউজিক বেশ ভাল। আর ছবির কাস্টিং প্রশংসাযোগ‌্য। ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপি করিম নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। ‘গণশাদা’ ব্রাত‌্য বসু ছাড়া কেউ করতে পারতেন বলে মনেই হয় না। সোহেল মণ্ডল, চান্দ্রেয়ী ঘোষ অনবদ‌্য। স্বল্প পরিসরে ভাল লাগে পরান বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়, কমলিকা বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়, অমিত সাহা, শাওলি চট্টোপাধ‌্যায় ও জয়দীপ মুখোপাধ‌্যায়কে। তাঁদের বাহুল‌্য বর্জিত অভিনয়ের কারণে। ম‌্যান অফ দ‌্য ম‌্যাচ ছবির কাণ্ডারি পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি।

[আরও পড়ুন: নকল টাকার জোরেই ওয়েব দুনিয়ার নতুন ‘ডন’ শাহিদ কাপুর! পড়ুন ‘ফরজি’ সিরিজের রিভিউ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement