আকাশ মিশ্র: প্রথমেই বলে রাখি। বিক্রম মোতওয়ানির ওয়েব সিরিজ ‘জুবিলি’ কিন্তু অন্যান্য সব সিরিজ থেকে অনেকটাই আলাদা। এই সিরিজকে, সিরিজ হিসেবে না দেখে ফিচার ফিল্ম হিসেবে দেখুন। কেননা, চারের দশকের সিনেমা, মুম্বইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গল্প বলতে গিয়ে ‘জুবিলি’ চোখের সামনে যেন ভারতীয় ছবির ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। তবে তা তথ্যচিত্রের কায়দায় নয়, বরং ফিকশন ও নন ফিকশনের মিশ্রণ ঘটিয়ে। যেখানে আলতো করে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে ‘মুঘল-এ-আজম’ এবং গুরু দত্তর ‘প্যায়াসা’ ছবিকেও। তবে জুবিলি মূলত, ইন্ডাস্ট্রি, স্টুডিও এবং তাঁর স্টার হয়ে ওঠার গল্প, সঙ্গে দেশভাগ, রাজনীতিকে মিলিয়েছে এক দারুণ চিত্রনাট্যে। আর যা ‘জুবিলি’র সবচেয়ে শক্তপোক্ত জায়গা।
‘জুবিলি’ দেখতে দেখতে ভারতীয় ছবির কিংবদন্তি হিমাংশু রায় ও দেবিকা রানির কথা মনে হতে পারে শ্রীকান্ত রায় (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়) ও সুমিত্রা কুমারিকে (অদিতি রায় হায়দরি) দেখে। তবে এই মিল একেবারেই কাকতালীয়। এমনকী, মদন কুমারের চরিত্রটাও অশোক কুমারের আদলে। গল্প বেশি না বলাই ভাল। কারণ, ‘জুবিলি’র গল্পের মারপ্যাঁচে শুধু স্টার হয়ে ওঠার নেপথ্য়ের নানা রাজনীতি। বাকিটা পুরোটাই প্রত্যেকটি অভিনেতার দুরন্ত অভিনয় ও স্ক্রিনপ্লে। আর অবশ্য়ই ছবির ক্য়ামেরা ও শিল্প নির্দেশনা।
[আরও পড়ুন: চারটি এপিসোডেই অনির্বাণের দাপট, পড়ুন ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’ সিরিজের রিভিউ]
পরিচালক বিক্রম মোতওয়ানির পাশাপাশি ‘জুবিলি’র সিনেমাটোগ্রাফার প্রতীক শাহ, সম্পাদক আরতি বাজাজের প্রশংসা অবশ্য়ই করতে হয় বৈকি। প্রত্য়েকটি দৃশ্য়ই অসাধারণ। অমিত ত্রিবেদীর করা মিউজিকও প্রশংসনীয়, সিরিজের গানগুলিও চারের দশকের সিনেমার গানের মতো করেই বানানো হয়েছে। অলোকনন্দা দাশগুপ্তের বানানো ব্যাকগ্রাউন্ট স্কোরও মনে থেকে যায়।
তবে এই সিরিজের স্টার কিন্তু হলেন টলিউডের সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সিরিজের প্রথম থেকে শেষ তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রীকান্ত রায় আসলে তাঁর হাতের মুঠোয়। প্রত্যেকটি দৃশ্য়েই অসাধারণ। এরপর যার নাম নিতে হয় তিনি হলেন অপরাশক্তি খুরানা। বিনোদ দাসের চরিত্রে একেবারে পারফেক্ট। সাধারণ থেকে স্টার হয়ে ওঠার যে পরিবর্তন তাঁর অভিব্যক্তিতে উঠে আসে তা দেখার মতো। ভাল লাগে অদিতি রায় হায়দেরি, শ্বেতা প্রসাদকেও। জয় খান্নার চরিত্রে সিদ্ধান্ত গুপ্তাও বেশ ভাল।
সব মিলিয়ে ‘জুবিলি’ কিন্তু মাস্ট ওয়াচ সিরিজ। সিরিজের গতি ধীরে হলেও এই ছবি আগ্রহ ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত।