shono
Advertisement
Literature

প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নিরন্তর সাহিত্যচর্চা, ইতি টেনে চলে গেলেন 'বৃক্ষমানব' কমল চক্রবর্তী

একাধিকবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন তিনি, ভেন্টিলেশনে ছিলেন। শনিবার দুপুরে নিভল তাঁর প্রাণপ্রদীপ।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 05:09 PM Aug 30, 2024Updated: 08:05 PM Aug 30, 2024

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাগরিক জীবনের চাকচিক্য ভালো লাগত না। দ্রুতই বুঝে গিয়েছিলেন, এ জীবন তাঁর জন্য নয়। বিরাট প্রকৃতি, অরণ্য ডাকছে তাঁকে। তাই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থেকে বৃক্ষদের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন নিজের সাহিত্যচর্চা। 'বৃক্ষমানব' বলে পরিচিত সেই কমল চক্রবর্তী এবার তাঁর নিজের গড়ে তোলা জগৎ ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন। বয়স পেরিয়েছিল ৭০ বছর। শুক্রবার দুপুর নাগাদ তাঁর মৃত্যু (Death) সংবাদ পেয়ে সাহিত্যমহলে শোক আছড়ে পড়েছেই। তবে বেশি শোকাহত পরিবেশপ্রেমীরা।

Advertisement

'বৃক্ষমানব' কমল চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

নগরজীবন ছেড়ে ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গের (Jharkhand-West Bengal) সীমান্ত জেলা পুরুলিয়ার দলমা-রুয়াম পাহাড় বেষ্টিত এক নির্জন এলাকাকে বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাহিত্যিক কমল চক্রবর্তী। নাম তার ভালোপাহাড়। একদিকে কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ সৃষ্টি, আরেকদিকে কাস্তে-কোদাল নিয়ে জমিতে কাজ, বীজ রোপনের কাজ চলত। তিনি বলতেন, ''সাহিত্য বিশ্বকে বাঁচাবে না, বাঁচাবে বৃক্ষ। বৃক্ষ আছে, ছিল, থাকবে। বিশ্বকে বাঁচাতে গাছ লাগাও। বহুদিন থেকে বৃক্ষ বন্দনাই আমার দর্শন। বৃক্ষ ছাড়া প্রাণী বাঁচতে পারে না। আমরা যে খাবার খাই তা বৃক্ষজাত, আমাদের জামাকাপড়, ব্যান্ডেজ, তুলা বৃক্ষজাত। আমাদের পেট্রল-কয়লার মূল উপাদান বৃক্ষ, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস অক্সিজেনে বৃক্ষের অবদান, আমাদের গৃহে বৃক্ষের উপাদান। মানুষ যে ধর্ম-দর্শনেরই হোক, বৃক্ষের কাছে তার বাছবিচার নেই, সবাইকে সে ছায়া দেয়।’’

[আরও পড়ুন: রুশ হামলায় চূর্ণ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান! মার্কিন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হারিয়ে চাপে ইউক্রেন]

ষাটের দশকের শেষে জামশেদপুরে (Jamshedpur) সমমনস্ক পাঁচবন্ধু খ্যাতি কুড়িয়ে ছিলেন - বারীন ঘোষাল, কমল চক্রবর্তী, সুভাষ ভট্টাচার্য, অরুণ আইন, শক্তিপদ হালদার। কমল চক্রবর্তী রচিত ‘কৌরব’ নাটক মঞ্চায়ন করতে গিয়ে তাঁরা একজোট হন। কাব্য ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বা বলা ভালো, সাহিত্য জগৎ আর প্রকৃতিকে একত্রে মিশিয়ে দিতে তাঁরা বন-পাহাড়-সমুদ্রতীরে কবিতার শিবির শুরু করেন। পরে প্রকাশিত হয় তাঁদের ‘কৌরব’ পত্রিকা। কমল চক্রবর্তীর (Kamal Chakraborty) হাতে রচিত হয়েছে 'হে বৃক্ষনাথ’ নামে এক পুস্তিকা। নাটক, কবিতার মধ্য দিয়ে লেখালিখি শুরু করলেও একের পর এক গোটা ২৫ উপন্যাস লিখেছেন বৃক্ষমানব। ঝুলিতে রয়েছে জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ ‘মিথ্যেকথা’। রয়েছে 'অলীক গসপেল', 'বৃক্ষ', 'ব্রহ্মভার্গবপুরাণ', 'আমার পাপ'-সহ অনেক আলোচিত উপন্যাস।

[আরও পড়ুন: ‘৪৭ শতাংশ বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন’, প্রতিবন্ধকতাকে ‘অস্ত্র’ করে চাকরি ফেরাতে মরিয়া পূজা]

এভাবেই কোলাহলের বাইরে সবুজ এক জীবন যাপন করছিলেন কমল চক্রবর্তী। কিন্তু শরীর আর বেশিদিন সঙ্গ দিল না। গত ২০ তারিখ মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে যান তিনি। পরদিন আবার একই সমস্যা। ব্ল্যাক আউট হয়ে মাথার পিছনে মারাত্মক আঘাত লাগে। রক্তপাতও হয়। জামশেদপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পর থেকেই সংজ্ঞাহীন ছিলেন কমলবাবু। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল।দিতে হয়েছিল ভেন্টিলেশন। অনেকটা ব্রেন ডেথের মতো হয়ে গিয়েছিল। শনিবার, দুপুর নাগাদ প্রাণপ্রদীপ একেবারেই নিভে গেল বৃক্ষমানবের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement