সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশপ্রেমের ঝাঁজ ধরতে গিয়ে বিতর্কে জড়ালেন এ আর রহমান। ভারতীয় সঙ্গীত সংস্কৃতিতে রিমেক গান একাধিকবার যেমন স্বাগত হয়েছে, ঠিক তেমনই সমালোচনার জালেও জড়িয়েছে! এবার ‘পিপ্পা’ ছবিতে দেশাত্মবোধ চাগার দিতে যেভাবে কাজী নজরুল ইসলামের গান ধার করে তাতে রংচঙে মোড়কে পরিবেশন করেছেন রহমান, তাতে ক্ষুব্ধ শ্রোতারা। বিশেষ করে, খেপে উঠেছে বাঙালি বলয়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার সঙ্গীত জগতেও ক্ষোভের আঁচ!
রহমানকে কোনওরকম রেয়াত না করে বাঙালি গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এই গানটি আপনার একান্ত সম্পত্তি নয় মিস্টার রহমান! বাঙালি হিসেবে ছোটবেলা থেকে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি শুনে বড় হয়েছি আমরা। যা কিনা কবি নজরুল ইসলামের লেখা এবং কম্পোজ করা। বাংলার একজন গায়ক হিসেবে আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না মিস্টার রহমান যেভাবে আপনি এই যুগান্তকারী গানটিকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে? এই গান এক্ষুণি বয়কট করা উচিত।” এখানেই অবশ্য থামেননি রাঘব!
গায়ক কটাক্ষ করেন তাঁদেরও যাঁরা বাঙালি হিসেবে এই গান গাওয়ার সময়ে কোনওরকম প্রতিবাদ তো দূর অস্ত! উচ্চবাচ্য অবধি করেননি। রাঘবের মন্তব্য, “এই রিমেক গানটি তো বাঙালি শিল্পীদের দিয়েই গাওয়ানো। তারাও কোনও প্রতিবাদ করল না। তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, একবার রহমানের গান যখন রিমেক হল. তখন তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। এবার নিজেই কেন সেই একই কাজটি করলেন জনপ্রিয় গায়ক-গীতিকার?” প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন রাঘব চট্টোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: ‘রাম-সীতা শুধু ঈশ্বর নন ভারতের সম্পদ’, জাভেদ আখতারের মুখে ‘জয় সিয়া রাম’ ধ্বনি]
‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের রিমেকে ক্ষুব্ধ হৈমন্তী শুক্লাও। বিরক্তি প্রকাশ করে প্রবীণ গায়িকার মন্তব্য, “এগুলো সহ্য হয় না। অসভ্যতা! আমাদের তো বয়স হয়েছে। এগুলো কী চলছে? বাংলা গান নিয়ে এটা কী হচ্ছে?” একই সুর শিলাজিতের। বলছেন, “অন্য প্রদেশের মানুষরা হয়তো এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, তা নষ্ট হয়েছে। রহমানের কোনও গানের সঙ্গে যদি এরকম হত, উনি কী বলতেন?”
প্রসঙ্গত, পরিচালক রাজাকৃষ্ণ মেননের ছবি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহার হয়েছে নজরুলের এই গান। ১৯৭১ এর ভারত-পাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে নজরুল ইসলামের লেখা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি। সেই গানকেই নতুনভাবে রিমেক করছেন এ আর রহমান। আর তা শুনেই রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নেটিজেনদের একাংশ। রহমানকে কটাক্ষ করে অনেকে লেখেন, ‘মনটা ভেঙে গেল। এআর রহমান এত সুন্দর গানটির পুরো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।’ কেউ কেউ আবার লেখেন, ‘সঠিক সুরে সঠিকভাবে গানটি বানালে ভালো হতো। আসল গানটা শুনলে যে অনুপ্রেরণা পাই, এটা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। গানের আত্মাটাই নষ্ট।’ এবার প্রতিবাদী কণ্ঠ বাংলার সঙ্গীতদুনিয়ায়।