সুপর্ণা মজুমদার: মায়ের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের দায়িত্ব মেয়ে নিল কাঁধে। টানা ১৮ বছরের চেষ্টা। সেই চেষ্টাই কৌন বনেগা ক্রোড়পতির (KBC) মঞ্চে নিয়ে যায় বাংলার আলোলিকা ভট্টাচার্য গুহকে (Alolika Bhattacharjee Guha)। তার পর বাস্তবই হয়ে উঠল স্বপ্নের মতো। সাক্ষাৎ অমিতাভ বচ্চনের দেখা পেলেন গড়িয়ার বাসিন্দা। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও। কেমন ছিল অমিতাভকে সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা? “ইশ্বর আমাকে ছুঁয়ে গেছে”, বললেন আলোলিকা।
জলপাইগুড়ির মেয়ে আলোলিকা। এখন গড়িয়ার বাসিন্দা। স্বামী পিনাকী ও চার বছরের ছেলে অর্ককে নিয়ে মধ্যবিত্তের সংসার। বিলাসের চাহিদা আলোলিকার নেই। শুধু হাসতে ভালোবাসেন। আলোলিকার কথায়, “হাসলে তো শরীর ভালো থাকে, ক্ষতি তো হয় না!” তাহলে KBC কেন? আলোলিকার মায়ের স্বপ্ন ছিল টেলিভিশনে কাজ করার। তা করতে পারেননি। তিনি আবার অমিতাভ বচ্চনের (Amitabh Bachchan) ফ্যান। সুতরাং মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই আলোলিকার KBC-তে যাওয়ার চেষ্টা শুরু। টিউশনির প্রথম রোজগার দিয়ে মোবাইল কিনেছিলেন। সেই মোবাইল থেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ২০০৫ সালে।
এতদিনে পেলেন সুযোগ। কিন্তু প্রথমেই ধাক্কা। প্রথম যখন অডিশনের জন্য ফোন আসে মুম্বইয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট কেনার সাধ্য আলোলিকার ছিল না। একরাশ হতাশা নিয়ে কৌন বনেগা ক্রোড়পতির অডিশনের সুযোগ ছেড়ে দেন বাংলার কন্যা। কিন্তু, ভাগ্য তাঁর জন্য অন্য লেখা লিখেছিল। দিন পনেরো বাদে ফের ফোন। এবার অনলাইন অডিশনের সুযোগ। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আলোলিকাকে। এবার ফ্লাইটের টিকিট আর মুম্বইয়ের বিলাসবহুল হোটেলে থাকার ব্যবস্থা KBC কর্তৃপক্ষর।
[আরও পড়ুন: সলমনের সঙ্গে ছবি দিয়ে উচ্ছ্বাস কৌশানির, ‘লিডিং মোস্ট হিরো কাঁদছে’, খোঁটা নেটপাড়ার]
কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগে আবার বিপত্তি। শরীর বেশ খারাপ ছিল আলোলিকার। গায়ে ছিল জ্বর। টের পান মেকআপ আর্টিস্ট। সেটেই ডাক্তার দেখানো হয়। ফলে ফাস্টেস্ট ফিঙ্গার খেলার প্রথম দিকে থাকতে পারেননি আলোলিকা। কিন্তু সেটে যাওয়ার পরই অবাক হওয়ার পালা। খোদ অমিতাভ জানতে চান কেমন আছেন তিনি। আলোলিকার শরীর খারাপের খোঁজ রাখছিলেন বিগ বি। এমনই মানুষ সিনিয়র বচ্চন। একেবারে ঈশ্বরতুল্য, জানালেন আলোলিকা।
অমিতাভ বচ্চনকে প্রথমবার যখন দেখলেন মনের অবস্থা কেমন ছিল? ‘ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছিলাম’, বললেন আলোলিকা। তাঁর কথায়, “মানুষটা যখন দৌড়ে সেটে এলেন। ভাবছিলাম স্বপ্ন দেখছি না তো? একেবারে ওয়ান টেক অভিনেতা।” হটসিটে পৌঁছতে পারবেন ভাবতে পারেননি আলোলিকা। তবে সেদিনটাই তাঁর ছিল। তাই তো হাসতে হাসতেই হটসিটে খেলেছেন। আর গোটা সেটকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছে, ‘কার পাল্লায় পড়েছি রে বাবা!’ এভাবেই সাড়ে বারো লক্ষ টাকা জিতেছেন আলোলিকা। তবে টাকা নয় তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা অমিতাভ বচ্চনের দেখা পাওয়া আর তাঁর করা টুইট। যে টুইটে আলোলিকা রয়েছেন। আলোলিকার মা আজ খুশি। চোখে তাঁর আনন্দাশ্রু। বর কম কথা বলেও বেশ খুশি।
যে টাকা জিতেছেন তা নিয়ে কী করবেন? কিছুটা ছেলের ভবিষ্যতের জন্য রাখবেন। বাকি টাকা ভাইকে দেবেন যাতে তিনি কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারেন। এখনও ভাড়ার বাড়িতে থাকে মা, ভাই। স্থায়ী ঠিকানার জন্য হয়তো কিছুটা লোন নিতে হবে। তাতে যতটা সাহায্য করা যায়!
নিজের জন্য কিছু করবেন না? আলোলিকার বক্তব্য, “আমার তো কোনও চাহিদা নেই। সরকারি চাকরির মেডিক্যাল হয়ে গিয়েছে। এমনিতে শাড়ি-গয়নার কোনও চাহিদা নেই, ফাস্টফুড খাই না। বিয়ের চার বছর পর শুধুমাত্র একটা লালপেড়ে শাড়ি কিনেছিলাম। KBC-র জন্য যে শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম সবই বিয়েতে পাওয়া। আর চাওয়ার কী আছে? শুধু হাসিমুখে থাকতে পারলেই হল।”