সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিনেমাপাড়ার যাত্রা হয়তো শেষ হবে না। তবে এই সফরে তরুণ মজুমদার আর থাকলেন না। যার ছবির আলোতে, টলিপাড়া পেয়েছিল একেবারে অন্য ঘরানার ছবি, তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে সেই আলো নিভল। তরুণ মজুমদারে জীবন ছিল ঠিক তাঁর ছবির মতনই। ছিমছাম, আড়ম্বরহীন। জীবনের শেষ অধ্যায়টাও যেন আড়ম্বরহীন থাকে সেটাই চেয়েছিলেন তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)।
মৃত্যর পরেও কোনওরকম আড়ম্বর তিনি চাননি। তাঁর শেষ ইচ্ছাকেই সম্মান দিতে চায় তাঁর পরিবার। পরিচালকের মরনোত্তর দেহদানের অঙ্গিকারকে সম্মান জানিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে দেহ দান করা হবে। খবর অনুযায়ী, এই বিষয়ে হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগ এই বিষয় প্রস্তুতি শুরু করেছে।
মৃত্যুর পর তাঁর দেহ নন্দন বা রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হোক তা চাননি তরুণ মজুমদার। তাঁর এই ইচ্ছাকে সম্মান দিতে চায় রাজ্য সরকার। তবে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এনটিওয়ান স্টুডিওয়। সেখানেই অনুরাগীরা শেষশ্রদ্ধা জানাতে পারবেন পরিচালককে। অবশ্য তরুণ মজুমদার চাইতেন না, তাঁর শেষশ্রদ্ধায় তাঁর মৃতদেহতে অনুরাগীরা ফুল, মালা দিক।
[আরও পড়ুন: তরুণ মজুমদার-সন্ধ্যা রায়ের বিয়ের সাক্ষী ছিল গোটা টলিউড, কেমন ছিল আনন্দের সেই দিন?]
যৌথ পরিবারের গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন তিনি। মধ্যবিত্ত বাঙালির টুকরো মুহূর্তগুলিকে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছিলেন ‘বালিকা বধূ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো সিনেমার মাধ্যমে। চলমান চিত্রের এই চিরকালীন সম্পদ রেখে চলে গেলেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)। সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১।
যে সময় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের মতো পরিচালকরা সিনেমার জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই সময়ে বড়পর্দায় পারিবারিক কাহিনি ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন তরুণ মজুমদার। শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে ‘যাত্রিক’ টিম তৈরি করে সিনেমা পরিচালনার কাজ শুরু করেন তিনি। তিন পরিচালকের প্রথম সিনেমা ‘চাওয়া পাওয়া’। অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, তুলসী চক্রবর্তী। ‘যাত্রিক’-এর পরিচালনাতেই তৈরি হয় ‘কাঁচের স্বর্গ’। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি।
‘পলাতক’ ছবির তৈরির পর ‘যাত্রিক’ থেকে বেরিয়ে আসেন তরুণ মজুমদার। ১৯৬৫ সালে ‘আলোর পিপাসা’ এবং ‘একটুকু ভালবাসা’ নামের দু’টি সিনেমা তৈরি করেন তিনি। তারপর থেকে নিজের পরিচালনায় তৈরি করেছেন ‘বালিকা বধূ’, ‘রাহগির’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘গণদেবতা’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘আপন আমার আপন’, ‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো সিনেমা। সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন তরুণ মজুমদার। বনফুল, বিমল কর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকের গল্প নিয়ে ছবি করতেন তিনি। শোনা গিয়েছে রবিঠাকুরের সুর।
একাধিক জাতীয় পুরস্কার রয়েছে তরুণ মজুমদারে ঝুলিতে। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জানা গিয়েছে, গত ২২ বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তরুণ মজুমদার। গত ৬ জুন শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ৯২ বছরের পরিচালকের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন চেস্ট মেডিসিনের চিকিৎসক সোমনাথ কুণ্ডু, মেডিসিনের চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ, নেফ্রলজিস্ট অর্পিতা রায়চৌধুরী, কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসক বিমান রায়ের মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিলেন তাঁরা।