shono
Advertisement

Breaking News

চলচ্চিত্র উৎসবে মেসির ড্রিবল! জীবনের লড়াইয়ের কথা বলে অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি

মুগ্ধ করল একসঙ্গে প্রদর্শিত বাকি তিনটি শর্ট ফিল্মও।
Posted: 08:43 PM Dec 07, 2023Updated: 08:45 PM Dec 07, 2023

বিশ্বদীপ দে: জীবন আসলে মুহূর্তের কোলাজ। সেই কোলাজকে লেন্সবন্দি করে তৈরি হয় চলচ্চিত্র। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের পাশাপাশি ছোট ফর্ম্যাটেও। যাকে বলে ‘বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন’। ২৯তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF 2023) ‘শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি’ বিভাগে তথ্যচিত্রের পাশাপাশি রয়েছে শর্ট ফিল্মও। বুধবার, ৬ ডিসেম্বর শিশির মঞ্চে একসঙ্গে চারটি শর্ট ফিল্ম প্রদর্শিত হল। যার মধ্যে তিনটি হিন্দি, একটি বাংলা। বাংলা ছবিটির পরিচালক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায় (Anilava Chatterjee)। তাঁর ছবি ‘মেসি’ সত্যিই রোমাঞ্চিত করে। বাকি ছবিগুলিও ভাবায়, আবিষ্ট করে একই ভাবে।

Advertisement

নামী ক্রীড়া সাংবাদিক ছবি বানানোর জন্যও বেছে নিয়েছিলেন খেলার মাঠকেই। বিশ্বজয়ী ফুটবলার মেসির (Lionel Messi) নামে শর্ট ফিল্ম হলেও তা আসলে এক বঙ্গসন্তানের লড়াইয়ের গল্প। নাম তার অপু। মাঠে একবার পায়ে বল পেলে ফুল ফোটাতে পারে সে। পাড়ার লোকে তাকে ‘মেসি’ বলে ডাকে। সেই ডাক পৌঁছে গিয়েছিল ভিনপাড়াগুলোতেও। ক্রমশ নাম ছড়াচ্ছিল তার। সে নিজেও মেসির অন্ধ ভক্ত। কিন্তু ময়দানের তিন মাসের মরশুমে ‘সারভাইভ’ করাটাই যে চ্যালেঞ্জ! অগত্যা খেপ খেলে মাসে দশ-পনেরো হাজার টাকা রোজগার। আর তা করতে গিয়েই লিগামেন্টে চোট। এর পর কেবলই টিকে থাকার লড়াই। বিশ্বকাপের ময়দানের ‘সুপার হিরো’ মেসি নয়, জীবনের ময়দানে কাটাকুটি খেলা অপুকেই সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন অনিলাভ। মাঠ আর জীবনের ময়দান সেখানে একাকার হয়ে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: বৃষ্টিভেজা নন্দন চত্বরে হাজির মাঙ্কিম্যান! তাক লাগালেন আজব কীর্তিতে]

এছাড়াও স্তব্ধ করে দেয় ‘গিধ- দ্য স্ক্যাভেঞ্জার’। মাত্র ২৪ মিনিটের এই ছবি কতদূর যে আমাদের নিয়ে যায়! মণীশ সাইনি পরিচালিত ছবিটির প্রোটাগনিস্ট বর্ষীয়ান অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্র প্রায় নির্বাক অভিনয়ে কেবল শরীরী ভাষায় এক দরিদ্র মানুষকে যেভাবে এঁকেছেন তা অভাবনীয়। চূড়ান্ত দারিদ্রের ছোবলে জেরবার যাঁর জীবন। শয্যাশায়ী ছেলের মৃত্যুর পরে তিনি যথার্থই নিঃসঙ্গ। পেট খালি, সংসারও। কাজ নেই। কেবল শ্মশানের গাছে ঝুলে থাকা মৃতদের পোশাককে কেচে বিক্রি করে সেই অর্থেই কোনওমতে বেঁচে থাকা। এমন নির্মম সত্যিকে শিল্পে জারিত করেছেন পরিচালক। তাঁকে কুর্নিশ।

‘ইয়েস স্যার’ ছবিটির পরিচালক মুদিত সিংহল। বাকি তিনটি ছবির নির্মাণ সিরিয়াস আবহে। কিন্তু এই ছবিতে একটা চমৎকার মুচকি ভাব আগাগোড়া বজায় থাকে। ‘উঁচু জাতের’ মিশ্রজিকে কাজ করতে হয় তথাকথিত ‘নিচু জাতের’ এক মানুষের অধীনে। সরকারি চাকরি। ছাড়ার উপায় নেই। কিন্তু মনেপ্রাণে তিনি ঘৃণা করেন তাঁর ‘বস’কে। দেওয়ালে ঝোলানো বি আর আম্বেদকারের ছবি বারে বারে মনে করিয়ে দিতে থাকে ভারতবর্ষকে ছুৎ-অচ্ছুতের সীমানার বাইরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের কথা। মানুষ যে শেষপর্যন্ত মানুষ, এই সরল সত্য মিশ্রজির মতো মানুষরা বুঝতে পারেন না। আসলে বুঝতে চান না। শেষ পর্যন্ত কী করে তিনি এই সারসত্যের দিকে এগোলেন সেকথাই বলে ছবি।

[আরও পড়ুন: ‘বিহারের চেয়ে তেলেঙ্গানার DNA ভালো’, রেবন্তের মন্তব্যে বিতর্ক, ‘দেশভাগের চেষ্টা’, তোপ BJP-র]

‘বেটেলগজ’ ছবিটির বিষয়বস্তুও অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা। জীবনের বিষাদ কাটিয়ে উঠে এত তরুণীর জীবনে ফেরার গল্প। মহাকাশবিজ্ঞানী হয়ে ওঠার স্বপ্ন যার চুরমার করে দেয় একটি দুর্ঘটনা। সুদূর আকাশের নক্ষত্র বেটেলগজ, যে ৭০টা সূর্যের সমান, সেটির মহাজাগতিক দীপ্তি তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। মূক-বধির শিশুর বাজনা চমকে দেয়। বুঝিয়ে দিতে থাকে জীবন পড়ার গল্প নয়, ওড়ার গল্পও বলে। কেবল সেটা শুনতে পাওয়ার অপেক্ষা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement