shono
Advertisement

Raktabeej Review: অচেনা পিচে সাহসী ব্যাটিং নন্দিতা-শিবপ্রসাদের, পুজোর আবহে টানটান থ্রিলার ‘রক্তবীজ’

ছবির 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' কে?
Posted: 06:34 PM Oct 19, 2023Updated: 06:38 PM Oct 19, 2023

দর্শকের নাড়ির গতি বুঝতে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায় যে কতখানি অব‌্যর্থ ‘রক্তবীজ’ বুঝিয়ে দিল। আবির-মিমির রসায়ন মন ছুঁয়ে গেল। শম্পালী মৌলিক

Advertisement

না, এ ছবি ধারাবাহিকের মতো নয়। তবে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ‌্যায়ের ধারাবাহিক সাফল্যের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকল ‘রক্তবীজ’। বারো বছর অপেক্ষার পর তাঁরা ছবি এনেছেন দুর্গাপুজোর সময়ে। এ ছবি হিটমেকার পরিচালক জুটির অ‌্যাওয়ে ম‌্যাচ বলা যায়। উৎসবের আবহে তাঁরা নিজেদের পরিচালনার ছবি নিয়ে এলেন প্রথমবার। এবং থ্রিলার ঘরানার অ‌্যাকশন প‌্যাকড ছবি তাঁরা আগে করেননি। তুলনামূলকভাবে অচেনা পিচেও তাঁদের সাহসী ব‌্যাটিং মুগ্ধ করল। এতদিন দেখেছি উইন্ডোজ-এর ছবি মানেই পারিবারিক বিনোদন আর সামাজিক বার্তার স্বাদু ককটেল। সেই জনার থেকে সরে এসে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার উপহার দিলেন তাঁরা। সন্ত্রাসের বারুদ-গন্ধ আর শিউলি-সৌরভ মিলেমিশে একাকার। দর্শকের নাড়ির গতি বুঝতে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ যে কতখানি অব‌্যর্থ ‘রক্তবীজ’ বুঝিয়ে দিল। ওটিটি-অভ‌্যস্ত দর্শককে একটি নির্ভেজাল বাঙালি-থ্রিলার উপহার দিলেন তাঁরা।

জিনিয়া সেন এবং শর্বরী ঘোষালের চিত্রনাট‌্য ও সংলাপ এ ছবির কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে। আর মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের পরিচালন শৈলী। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড এবং সেই তদন্তের সূত্র ধরে ছবির কাহিনি বাঁধা কমবেশি সকলেই জানেন। সেই সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রণব মুখোপাধ‌্যায়। তিনি পুজোর সময় বর্ধমানে তাঁর আদি নিবাসে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন। তেমন সময়ে দেশের প্রথম নাগরিকের বাড়ির কিছুদূরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। শুধু চরিত্রের নাম এবং স্থান বদলে গিয়েছে সিনেমার স্বার্থে। গল্পের প্রেক্ষাপট এইরকম- সাজাপ্রাপ্ত এক জঙ্গির মার্সিপিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে সেই জঙ্গির ফাঁসি হয়ে যায়। এবার একটি নির্দিষ্ট জঙ্গি সংগঠন প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র করে। যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস-জালের যোগ রয়েছে। দুষ্কৃতীরা ছক কষে পুজোয় রাষ্ট্রপতি যখন গ্রামের বাড়িতে দিদির কাছে আসবেন, সেই সময় নিকেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। রাষ্ট্রপতি এখানেঅনিমেষ চট্টোপাধ‌্যায় (ভিক্টর বন্দ্যোপাধ‌্যায়) আর দিদি গৌরীদেবী (অনসূয়া মজুমদার)। এই হত‌্যা-ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়ে যায় পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশ যৌথভাবে কাজে নামে। রাজ্যের পুলিশকে নেতৃত্ব
দেয় এসপি সংযুক্তা মিত্র (মিমি চক্রবর্তী) আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতিনিধি হয়ে আসে পঙ্কজ
সিংহ (আবির চট্টোপাধ‌্যায়)। যে এই মিশনের কান্ডারি। স্টেট এবং সেন্ট্রালের যুগলবন্দি দেখতে চমৎকার লাগে। আর সেখান থেকেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, রক্তস্নানের মাঝেও প্রেমের হালকা সুবাস মন ছুঁয়ে যায়। পঙ্কজ-সংযুক্তার মতো দুটি বিপরীত মেরুর মানুষ কাজেরদায়বদ্ধতার সূত্রে কোথাও গিয়ে মিলে যায়।

আবির-মিমি জুটিকে প্রথমবার পর্দায় দেখতে দারুণ লাগে। অথচ তাঁদের সরাসরি প্রেমের কোনও দৃশ‌্যই নেই! এ হল পরিচালকদের মুনশিয়ানা যার জোরে শেষ অবধি সিট আঁকড়ে বসে থাকতে হয়। ‘রক্তবীজ’ কথাটা সাম্প্রতিককালে একটি হিন্দি ছবিতে আমরা বহুবার শুনেছি। তবু বাংলা ‘রক্তবীজ’ এতটাই মাটির গন্ধমাখা এবং বিশ্বাসযোগ‌্য যে পুজোয় বাজিমাত করবেই। তবু বলতেই হয়, চরিত্রনির্মাণে আরও প্রত‌্যাশা ছিল।
রাষ্ট্রপতির চরিত্রে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ‌্যায় বেশ ভালো। কিন্তু ক‌্যারেক্টারগ্রাফ কিছুটা একমাত্রিক। তাঁর দিদির ভূমিকায় অনসূয়া মজুমদার বেশ মানানসই। তার সঙ্গে আদরের পুলুর (অনিমেষ) কথোপকথনের দৃশ‌্য মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত আর ক্ষমার প্রসঙ্গ উঠে আসে। দিদির সঙ্গে তার বাড়ির সদস‌্যদের সম্পর্কও দেখার মতো।

এবারে আসি প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর দুই প্রধানের কথায়। সৎ, দায়িত্ববান, স্থিতধী পঙ্কজের চরিত্রে আবির একেবারে নিখুঁত। তাঁর ঝাঁঝালো অ‌্যাকশন অবতার দুরন্ত। আগের করা চরিত্রগুলোর তুলনায় আবির নিজেকে অনেকখানি বদলে ফেলেছেন এ ছবিতে। ‘ম‌্যাডাম-স‌্যর’ সংযুক্তার চরিত্রে মিমির কাজটা কঠিন ছিল। তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। একটি দৃশ‌্য মনে থেকে যাবে–যখন ছায়াঘন প্রান্তরে দৌড়চ্ছে এই দুটি মানুষ, পঙ্কজ বলে ওঠে, ‘পাড়লেন মায়ের কাছে আমার কথা?’ অনবদ‌্য দৃশ‌্যায়ন! লোকাল থানার ওসি নিত‌্যানন্দর ভূমিকায় কাঞ্চন মল্লিক বরাবরের মতোই মসৃণ। সাংবাদিকের চরিত্রে অম্বরীশ ভট্টাচার্য একেবারে খাপেখাপ। তাঁর আর কাঞ্চনের রসায়ন বেশ মজার। যেখান থেকে পুলিশ-প্রশাসনের ছবিটা কিছুটা উঠে আসে। এছাড়া বলতেই হবে, মুনিরের রোলে দেবাশিস মণ্ডল তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কয়েক ঝলকে নিজের জাত চিনিয়েছেন গুলশনারা খাতুন। মালার চরিত্রে উমা বন্দ্যোপাধ‌্যায় আগাগোড়া বিশ্বাসযোগ‌্য। স্বল্প পরিসরে ভালো লাগে সত‌্যম ভট্টাচার্য, দেবলীনা কুমার এবং পারমিতা মুখোপাধ‌্যায়কে। স্পেশাল অ‌্যাপিয়ারেন্সে চমকে দিয়েছেন অঙ্কুশ হাজরা। পুজোর দিনগুলো ধরে একটু একটু করে কাহিনি তুঙ্গ মুহূর্তের দিকে এগিয়েছে। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের ব‌্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছবির উপযুক্ত আবহ নির্মাণ করেছে। সংগীত পরিচালনায় অনিন্দ‌্য চট্টোপাধ‌্যায়, সুরজিৎ চট্টোপাধ‌্যায় ও ‘দোহার’-এর যৌথতা ছবিতে বৈচিত্র যোগ করেছে। প্রতীপ মুখোপাধ‌্যায়ের ক‌্যামেরা বেশ কার্যকর। সব মিলিয়ে ‘রক্তবীজ’ যেখানে শেষ হয়, নতুন মিশন দেখার প্রত‌্যাশা জন্ম দেয়। প্রিমিয়ারে দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানান দিল, নন্দিতা-শিবপ্রসাদ তাঁদের হাউসফুলের ট্র‌্যাকরেকর্ড এই পুজোতেও ধরে রাখবেন। এ পর্যন্ত এটাই তাঁদের সেরা ছবি।

ম‌্যান অফ দ‌্য ম‌্যাচ : আবির

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement