বিশ্বদীপ দে: “দুইটা কথা মনে রাখবেন। এক, নামটা হচ্ছে হারুন। দুই, হারুন এত সহজে হারে না।” টিজারেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘ওসি হারুন’। পরিচালক আশফাক নিপুনের ‘মহানগর’ মন জিতেছিল এপার বাংলার। চঞ্চল চৌধুরীর সমান্তরালে বাংলাদেশের আরেক অভিনেতা মোশারফ করিমকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল দর্শক। সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল পরের পর্বের প্রতীক্ষা। ‘মহানগর ২’-এর (Mohanagar 2) টিজার মুক্তি পেতেই সেই প্রতীক্ষার পারদ চড়চড় করে চড়েছিল। অবশেষে সার্থক হয়েছে প্রতীক্ষা। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বও মন জিতে নিয়েছে সকলের। আরও একবার দুর্নীতিগ্রস্ত সেই অফিসার তাঁর জাদুতে চমকে দিয়েছেন।
বাংলাদেশি এই ওয়েব সিরিজ (Bangladeshi series) হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে দিন দশেক আগে। আর তখন থেকেই কৌতূহল তুঙ্গে উঠেছে দর্শকের মধ্যে। ওসি হারুনের কায়দায় বলা যায়, ‘দুইটা’ দিকে লক্ষ্য ছিল সকলের। এক, দ্বিতীয় পর্বেও কি দর্শককে ধরে রাখতে সক্ষম হবে সিরিজটি? দুই, মোশারফ করিম কি দর্শকদের প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন? আসলে কিন্তু এই দুই প্রশ্নের উত্তর বোধহয় একটাই। মোশারফ করিম। তিনিই ধরে রাখেন দর্শককে। আর তাতেই আগাগোড়া সিরিজটি দেখে যেতে ক্লান্ত হন না দর্শক।
[আরও পড়ুন: পুকুরে স্নানে নেমে অঘটন, জলে ডুবে মৃত্যু দুুই ভাইয়ের]
কেবল পঞ্চাশোর্ধ্ব মোশারফ করিমই (Mosharraf Karim) মুগ্ধ করেছেন, একথা বললে চূড়ান্ত ভুল বলা হবে। বরং উলটে বলা যায়, প্রায় সকলেই চমৎকার কাজ করেছেন। মাসুম চরিত্রে দিব্যজ্যোতি ও তার দিদির চরিত্রে তাঞ্জিকা কিংবা ইন্টেলিজেন্স অফিসার বাবরের ভূমিকায় ফজলুর রহমান বাবু খুবই ভাল। কিন্তু তবুও এই সিরিজের মূলবিন্দু মোশারফ করিমই। কাহিনি ঘোরাফেরা করে তাঁকে ঘিরেই। সময়ে সময়ে টানা সংলাপে গল্পের গতি একটু ঢিলে যে হয়নি তা নয়। তবুও যে একেকটি পর্ব শেষ করেই পরের পর্বে যাওয়ার আগ্রহ তুমুল হয়ে ওঠে তা মূলত মোশারফের জাদুতেই।
এই পর্বে তাঁকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। কাজটা ছিল বেশ কঠিন। কেননা প্রথম পর্বে চরিত্রটি একই ভাবে অভিনয় করে যেতে পেরেছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে গল্প এগিয়েছে দু’টি টাইমলাইন ধরে। এক, বর্তমান সময়। দুই, দু’বছর আগের সময়কাল। প্রথম ক্ষেত্রে মোশারফ করিম বন্দি রয়েছেন উচ্চপদস্থ অফিসারদের হাতে। ফলে তাঁর চোখেমুখে একই সঙ্গে সংশয়, ভয় ও উৎকণ্ঠার পাশাপাশি স্বভাবোচিত ডোন্ট কেয়ার ভাবটা বজায় রাখতে হয়েছে। ফ্ল্যাশব্যাকে মূলত দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওসির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। তিনি দক্ষতার সঙ্গে সবটাই করেছেন। যেভাবে কেবল চোখের ভাষাতেই দৃশ্যের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে প্রকাশ করেছেন মোশারফ করিম, তা বুঝিয়ে দেয় কতটা শক্তিশালী অভিনেতা তিনি।
[আরও পড়ুন: মাতৃবিয়োগের পর থেকে অনুব্রতকন্যার ছায়াসঙ্গী, জেনে নিন কে এই সুতপা]
খুব অল্প বয়সে থিয়েটারে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। নয়ের দশকের গোড়ায় ‘নাট্যক্ষেত্র’ নামের নাটকের গ্রুপে অভিনয় শুরু করেন তিনি। লাগাতার ১৬ বছর ধরে নানা চরিত্রে নিজেকে সেঁকেবেড়ে তুলেছেন। ১৯৯৯ সালে টিভি নাটক ‘অতিথি’-তে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোটপর্দায় আত্মপ্রকাশ। ২০০৪ থেকে শুরু চলচ্চিত্রে অভিনয়। সব মিলিয়ে তিন দশকের অভিনয়ের অভিজ্ঞতায় যতই সময় গিয়েছে ততই যেন খাঁজকাটা হিরের মতো বৈচিত্রময় হয়ে উঠেছেন মোশারফ। সেই ‘হিরে’র দ্যুতিই ঝলমল করে উঠছে ‘মহানগর ২’-তে। শেষ করার পর তাই তৃতীয় পর্বের অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে আবার এপার বাংলার এক জনপ্রিয় অভিনেতা থাকছেন। দ্বিতীয় পর্বের একেবারের শেষের চমককে মাথায় রেখেও অনুমান করাই যায়, তৃতীয় পর্বেও আগাগোড়াই উপস্থিত থাকবেন ওসি হারুন। কাউন্ট ডাউন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। অসামান্য শেষ চমকে সেই কাউন্ট ডাউনকে আরও অধীর করে তুলছে।