শম্পালী মৌলিক: বিয়ে এবং বিভ্রাট, সে তো পায়ে পায়ে হাঁটে। পুরাকাল থেকে জানি আমরা। নব্য যুগের বিবাহ বিভ্রাট প্রেম-বন্ধুত্ব-যৌনতার সরণিতে চলমান। একটু এদিক-ওদিক হলেই তাল কাটতে বাধ্য। সেই পিচ্ছিল রেখাপথ ধরেও মন ঝিলমিল করা ছবি উপহার দিয়েছেন পরমব্রত, আবির এবং লহমা আর পরিচালনায় রাজা চন্দ। নিশ্চিতভাবে ত্রিভুজ-ই ছবির ইউএসপি। কিন্তু না, হিংসা আর প্রেমের একবগ্গা রেষারেষি নয়, এ ছবি মিষ্টি রোমান্টিক কমেডি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গল্প ছাড়া ‘বিয়ে বিভ্রাট’ এমন জমাটি কিছুতেই হত না। ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয়, আহা, সবাই যদি শাক্য-র মতো (আবির চট্টোপাধ্যায়) এমন উদার হতে পারত! আর চন্দ্রমৌলির মতো (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ভ্যাবলা গানের টিচার তো বিলুপ্ত প্রজাতি! এদের দেখে মনে হয়, বন্ধুত্বের সমান্তরাল রেখায় অনেক দিন পাশাপাশি হাঁটা যায়, মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বলেই। কিন্তু সামনে সিন্ডারেলার মতো ‘মোহর’ (লহমা ভট্টাচার্য) থাকলেও কি তা সম্ভব? কঠিন প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই ছবি ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে যায়।
[আরও পড়ুন: জেহাদে শহিদ হলে সত্যিই কি জন্নতে জুটবে একঝাঁক সুন্দরী? প্রশ্ন তুলল ‘৭২ হুরে’, পড়ুন রিভিউ]
গল্পের খাঁচাটা কেমন? শাক্যজিৎ একজন সফল ইউটিউবার, আধুনিক গান গায়, পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। কমিটমেন্ট ফোবিক। বান্ধবী নিকির (স্বস্তিকা দত্ত) জন্য ছ’টা গান লিখলেও, নিকির কাছে বাঁধা পড়তে রাজি নয়। এদিকে মা (সুদীপা বসু) শাক্যর বিয়ে দিতে চায়। পাত্রী খুঁজছে হন্যে হয়ে, শাক্যর ভাষায় মা যেন ‘সস্তার শার্লক হোমস’ এই বিয়ের রহস্য সমাধানে! এমন সময়ে শাক্যর জীবন মোড় নেয় ঝরঝরে সুন্দরী মোহরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। মোহরের বাবা রাগী, মা মিষ্টি। আর মোহর খুবই স্পষ্টবক্তা। সে ন্যাকামি আর নস্টালজিয়া গুলে খাওয়া গান প্লে-লিস্টে রাখে না। শাক্যর গান তেমনই, এমনটাই মনে করে সে! ব্যস, এ মেয়েকে ইন্টারেস্টিং মনে হয় ছেলের। কিন্তু না, একটা আকস্মিক ঘটনায় পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। ক্রমে জানা যায় মোহরের গানের মাস্টার চন্দ্রমৌলি প্রতিভা এবং প্রেম দু’য়েতেই হাজার মাইল যেতে পারে, এমন মৌলিক তার ক্ষমতা। কিন্তু বেচারা নেহাতই মুখচোরা। পেটে বোম মারলেও ঠিক সময়ে ঠিক কথাটা বলে উঠতে পারে না। সাত রাজার ধন এক মোহরকে দেখে দুই খোকারই অবস্থা সঙ্গীন। শাক্য আর চন্দ্রমৌলি সম্পূর্ণ বিপরীত। মিল তাদের ভালবাসায়। কিন্তু মোহর কী চায়, তারা কি কেউ জানতে চায়? ছবিটা দেখতে গিয়ে চেনা ক’টা হিন্দি ছবির কথা মনে পড়তেই পারে, তবে চমৎকার সিচ্যুয়েশনাল কমেডি। রণজয় ভট্টাচার্য খুব ভাল মিউজিক করেছেন। ভাল লাগে নবারুণ বোসের আবহ। সবকটা গানই শ্রুতিমধুর। ‘ঝিলমিল করা’ গানটা চমৎকার গেয়েছেন স্নিগ্ধজিৎ। আর অরিজিৎ সিংয়ের ‘জিয়া তুই ছাড়া’ গানটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
অভিনয় প্রসঙ্গে আসি। আবির স্মার্ট, উদার, মিস্টার ডিপেন্ডেবল শাক্যর চরিত্রে একশোয় একশো। পরমব্রত মুখচোরা, একটু প্রাচীনপন্থী প্রেমিকের ভূমিকায় দুরন্ত। দু’জনেরই কমিক টাইমিং খুব ভাল। লহমা ক্রমশ উন্নতি করছেন। ভারি মিষ্টি দেখিয়েছে তঁাকে। সুদীপা বসু বরাবরের মতো দারুণ সাবলীল অভিনয় করেছেন। আজ মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। সবমিলিয়ে বলা যায়, জীবন আর সিনেমায় লজিকের থেকে ম্যাজিক বেশি লাগে। সেই ম্যাজিকের ছোঁয়ায় হালকা মেজাজের ‘বিয়ে বিভ্রাট’ দেখতে ভালই লাগে।
[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রের লাশ’, পঞ্চায়েত ভোট হিংসা নিয়ে গর্জে উঠলেন ঋদ্ধি, পালটা শুনতে হল ‘বুদ্ধিজীবী’ খোঁটা]