সন্দীপ্তা ভঞ্জ: “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী আদতে সমাজের কত জন আমরা ঠিক মানি? মানেন বইকী! তবে সেই সংখ্যাটাও খুবই কম। অন্তত সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য পশুপ্রেমীর সংখ্যা নেহাতই কম। সেইজন্যই আজও পশুরা কিছু মুনাফা লোটা স্বার্থান্বেষী মানুষদের ক্যাশবাক্স ভারী করার ‘বস্তু’ হয়ে ওঠে! এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অস্ত্র ‘পোচার’ সিরিজ (Poacher Review)।
হাতির দাঁত পাচার ভারতে নতুন ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে শুধুমাত্র মুনাফা লোভী, স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য কত শত হাতির নির্মম পরিণতি ঘটেছে। শুধু তাই নয়, সচেতনতা বা অবহেলার কারণেও বহু হাতির মৃত্যু ঘটেছে এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জঙ্গলে। যার মুনাফা লুটেছে পাচারকারীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে কখনও তাদের চামড়া আবার কখনও বা তাদের দাঁত-সিং বিক্রি হয়েছে কোটি কোটি টাকায়। আমাজন প্রাইম ভিডিও প্ল্যাটফর্মে রিলিজ করা ‘পোচার’ সিরিজেও সমাজের সেই নৃশংস রূপ তুলে ধরেছেন পরিচালক রিচি মেহেতা। যা কিছুটা হলেও প্রশাসনের ‘ঢিলেমিকে’ও বেআব্রু করেছে।
২০১৫ সালে ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরালাতে চোরাশিকারিদের একটা বড় ব়্যাকেট ধরা পড়ে প্রায় ৯ মাসের তদন্ত, ছোটাছুটির জেরে। সেই বাস্তব ঘটনা অবলম্বনেই এমি পুরস্কার জয়ী রিচি মেহেতা চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন। আটটি পর্বের সিরিজ। একেকটার দৈর্ঘ্যও ৪০ মিনিটের উপরে। এত বেশি সময়ের হলেও ‘স্লো কুক’ সিরিজ ‘পোচার’ দেখতে একঘেয়ে লাগে না। কারণ এর সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং প্রতিটা দৃশ্যের গভীরতা। একেকটা সংলাপও গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরাধাম যে মানুষ নামক জীবের পাশাপাশি পশুদেরও সমান ঠিকানা, সেই বিষয়টি বেশ কিছু দৃশ্যে জন্তুদের সিগনিফিকেন্টভাবে দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এককথায়, এই সিরিজে কোনও অতিরঞ্জিত বিষয় নেই। একেবারে অথেন্টিক। নিমিশা সাজাইয়ান, রোশান ম্যাথিউ, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, কানি কুসরুতি প্রত্যেকের অভিনয় দারুণ।
[আরও পড়ুন: কুস্তিগির জন সিনার মুখে শাহরুখের রোমান্টিক গান! শুনে কী প্রতিক্রিয়া কিং খানের?]
এরকম একটা বিষয়কে দর্শকদের প্লেটে রাখার জন্য আলিয়া ভাটও (Alia Bhatt) যেরকম উৎসাহ দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সিংহভাগ প্রযোজকরা যখন বক্স অফিসের নম্বর নিয়ে মাথা ঘামান কিংবা বক্স অফিসের ইঁদুর দৌড়ে শামিল হন, তখন আলিয়া ভাট কিন্তু চিরাচরিত পথে হাঁটলেন না। বরং প্রযোজক হিসেবে কন্টেন্টকেই রাজার সিংহাসনে বসিয়েছেন আলিয়া। তাঁর প্রযোজনা সংস্থা এটারনাল সানসাইন প্রোডাকশন হাউজের ব্যানারে তৈরি হয়েছে ‘পোচার’-এর মতো সিরিজ। যা কিনা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। একজন পশুপ্রেমী হওয়ার সুবাদে দেশের হাতিমৃত্যু ভাঁজ ফেলেছে আলিয়া ভাটের কপালেও। আর সেই ভাবনা থেকেই সমাজ, প্রশাসনকে নাড়া দিতে তিনি টাকা ঢেলেছেন ডকু সিরিজ ‘পোচার’-এর (Poacher) নেপথ্যে। যা কিনা একজন জনপ্রিয় কমার্শিয়াল নায়িকার প্রযোজক হিসেবে নিঃসন্দেহে সাহসী একটা পদক্ষেপ।