shono
Advertisement
Lahari Film Review

ইকো রিসর্টের চক্করে প্রকৃতিই বিপন্ন? প্রশ্ন ছুড়ল অমর্ত্য ভট্টাচার্যের ‘লহরী’

৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এই ছবি।
Published By: Akash MisraPosted: 02:54 PM Dec 11, 2024Updated: 02:54 PM Dec 11, 2024

ইন্দ্রনীল শুক্লা: ওড়িশার বাঙালি অমর্ত্য ভট্টাচার্যের ‘অ্যাডিউ গোদার’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন যে এই পরিচালকের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। শহুরে জীবন, নাগরিক যাপন এসবের থেকে দূরে নিজের কাহিনি খুঁজে নেন তিনি। সেই কাহিনিতে ধরা দেয় ওড়িশার গ্রামীন এলাকা। উঠে আসে সেখানকার মানুষের ছোট খাটো চাওয়া-পাওয়া এবং দুঃখ-কষ্ট। আর সেখানে থেকেই বেরিয়ে আসে একটা অন্য রকম গল্প। ক্রমে সেই গল্পের উত্তরণ ঘটে এক দার্শনিক উচ্চতায়। কৃষি ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় ছবির ক্যামেরা। সূর্যের দেখা মেলে গাছের আড়াল থেকে। এই যে ভিজুয়ালটা কিংবা ছবিগত ভাবনাটা, সেটা কিন্তু বদলায়নি অমর্ত্য-র নতুন ছবি ‘লহরী’-তে।

Advertisement

তাহলে এবারের গল্পটা কোন পথে এগোল ? এ কাহিনিতে দুটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। একজন ডিঙি নৌকা চালিয়ে রোজগার করা ভুটা। আর অন্য জন দীনু। সে মাছ ধরে। তবে মাছ ধরা মানে বিরাট কোনও কারবার নয়। পাথুরে নদীতে জাল ফেলে টুকটাক কিছু মাছ ধরা আর তারপর হাইওয়ের ধারে বসে গাড়ি করে চলা মানুষকে সেই মাছ বেচে দেওয়া। কিন্তু এই অঞ্চলটা খুব ধীরে বদলাতে থাকে। ভুটার নৌকায় এসে জুটে যায় শখের ক্যামেরাম্যান যে কীনা খাঁড়ি, জঙ্গলের ছবি তোলে। একটা সময়ে জলের ধারে ভুটার বানানো ছোট কুঁড়েঘরেও লোক আসে প্রকৃতির মধ্যে থাকার লোভে। একে কেন্দ্র করেই চটপট আরও বদল ঘটে। দীনু হয়ে যায় পার্টনার। জাল ফেলে ধরা মাছ সামনেই ভেজে দ্বিগুনেরও বেশি দামে বেচতে থাকে। আর ভুটা চতুর বুদ্ধি খাটিয়ে ইকো রিসর্ট চালু করে দেয়। এমনকী তাতে রোজগারের ব্যবস্থাও হতে থাকে এলাকার মামুষের। আদিবাসী মানুষ বাঘ নৃত্য দেখিয়ে টুরিস্টদের থেকে পয়সা পেতে থাকে। গ্রামের অন্য এক বেকার যুবক বনে যায় রিসর্টের ম্যানেজার!

এই যে একটা এলাকার আমূল পরিবর্তন, মানুষের অর্থনীতিতে নতুন ঢেউ এই জায়গাটা খুব বুদ্ধি করে কাহিনির মধ্য দিয়ে আমাদের দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক। কিন্তু সেই পরিবর্তন পরিবেশটার ক্ষতি করলো নাতো! যে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য মানুষ এখানে আনাগোনা করা শুরু করেছিল, তা কতখানি অটুট রইল? মানুষগুলোও যেন সাদামাটা গ্রামবাসী থেকে চতুর ব্যবসায়ীতে পরিণত হল। প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন অমর্ত্য। ‘অ্যাডিউ গোদার’ এর মতোই এ ছবিতেও অভিনেতারা সম্পদ। ভূটার ভূমিকায় চৌধুরী জয়প্রকাশ দাস এবং দীনুর চরিত্রে চৌধুরী বিকাশ দাসকে মনে থাকবে। বেশ কিছু সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করেছেন পরিচালক। যেমন মদ্যপান করে মধ্যরাতে দীনু-র নিজের স্ত্রীকে মনে পড়ে যাওয়া, যে কীনা একমাত্র ছেলেকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছে এক বড়লোকের সঙ্গে। কিংবা অন্ধকার ফাঁকা মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে ‘চিয়ার্স টু জীবনো’ বলে চেঁচিয়ে ওঠা। এই পর্যন্ত সুন্দর। কিন্তু ছবিটার শেষ অংশটাকে যেন খানিক টেনে বাড়ানো হল। আরও আগেই ইতি টানলে কাব্যিক টানটা ধরা থাকতে পারতো। কারণ, এই ছবিটা রিয়্যালিস্টিক পথ ছেড়ে অনেক আগেই একটা দার্শনিক পথ নিয়ে নিয়েছিল। সেই পথেই ওপেন এন্ডে ছবি শেষ করলে বোধহয় রেশ থেকে যেতে পারতো।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সেই পথেই ওপেন এন্ডে ছবি শেষ করলে বোধহয় রেশ থেকে যেতে পারতো।
  • গ্রামের অন্য এক বেকার যুবক বনে যায় রিসর্টের ম্যানেজার!
Advertisement