ইন্দ্রনীল শুক্লা: সত্যজিৎ রায় যদি আজ থাকতেন তিনিও হয়তো ওটিটি কনটেন্ট তৈরি নিয়ে ভাবতেন। রবিবার দুপুরে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল লেকচার দিতে এসে এমনটাই জানালেন ‘হাজারো খোয়াইশে অ্যায়সি’-র পরিচালক সুধীর মিশ্র (Sudhir Mishra)। এদিনের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ওটিটির (OTT) পরিবর্তনশীল সময়ে সিনেমাকে বোঝা।’ বক্তৃতা শুরু হওয়ার আগে তাঁকে ঘিরে যে বৃত্ত তৈরি হয়েছিল সেখানে বলছিলেন, ‘আমাকে আসতেই হতো বুঝলেন, কারণ যাঁর নামে এই স্মারক বক্তৃতা তাঁর কাছে আমার সিনেমা শেখার অনেক ঋণ রয়েছে।’ আর মঞ্চে উঠে বললেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের নামে লেকচার মানে এই নয় যে তাঁর কথা বলতেই হবে। কিন্তু আলোচনার বিষয়টি ধরে বলতে চাই, আজকের সময়ে থাকলে সত্যজিৎ রায়কেও (Satyajit Ray) ওটিটি-তে কিছু বানানোর কথা ভাবতে হতো। ’
ওটিটি-র নানা সুবিধা অসুবিধার প্রসঙ্গে সুধীর জানাচ্ছেন, ‘এই প্ল্যাটফর্ম মানুষের সামনে অসীম সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে। সব রকমের পরিচালক কাজ করার একটা সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকী ভাল অভিনয় করতে পারেন এমন অভিনেতারাও কেউ বসে নেই। আজকে দেখুন শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) চেয়ে কিন্তু মনোজ বাজপেয়ি, পঙ্কজ ত্রিপাঠীরা কিছু কম জনপ্রিয় নন। এটা ওটিটি-র জন্যই সম্ভব হয়েছে। ওটিটি-কে আমি মনে করি ‘ওভার দ্য টপ।’
[আরও পড়ুন: তাওয়াংয়ে ভারতীয় জওয়ানদের ‘পেটানো’ নিয়ে মন্তব্য রাহুল গান্ধীর, কড়া নিন্দা বিদেশমন্ত্রীর]
বাদল সরকার প্রসঙ্গে সুধীর বললেন, ‘ওঁর কাছ থেকে কতকিছু যে শিখেছি বলে শেষ করা যাবে না। উনি বামে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু রেজিমেন্টেশন যে ভাল নয় সেটা বুঝতেন। তাই সোভিয়েত রাশিয়ার যখন পতন ঘটেছিল আমি অবাক হইনি, কারণ বাদলদা আমায় আগেই বলেছিলেন যে আগামী দিনে এমন পতনের সম্ভাবনা আছে। আমার মনে হয় মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। সকলকে কথা বলতে দিতে হবে।’
দীপিকা পাড়ুকোনের গেরুয়া-বিকিনি প্রসঙ্গ উঠে আসায় সুধীর খানিক তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই জানালেন, ‘মানুষের রাগটা যেসব জিনিস নিয়ে হওয়া উচিত ছিল সেদিকে না গিয়ে অন্য বিভিন্ন দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।’ সম্প্রতি দিল্লিতে এক যুবতীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সে ধরনের কনটেন্টও ওটিটি-তে রয়েছে। তাহলে এমন বিষয়ের উপর সেন্সর বসা উচিত কি না সেই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় সুধীর বলছেন, ‘আমাদের চারপাশের জগৎটায় এমন হিংস্রতা রয়েছে। সেটাই ওটিটি-তে উঠে আসছে। কিন্তু সেন্সর করে সেটা বন্ধ করে দেওয়া মানে তো বাস্তবের থেকে চোখ বুজে থাকা। যাঁর এই হিংস্রতা ভাল লাগছে না, তিনি না দেখলেই তো মিটে গেল। সেন্সর থাকলে তো আমরা ‘সেক্রেড গেমস’-এর মতো সিরিজ দেখতেই পারতাম না।’