সমান্তরাল ও বাণিজ্যিক দুই ধারার ছবিতে ব্যালান্স করছেন। নাটকের মঞ্চেও সাবলীল। সোহিনী সরকার (Sohini Sarkar) ধরা দিলেন ‘বিবাহ অভিযান টু’ শুরুর আগে। কথোপকথনে বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘বিবাহ অভিযান ২’-র শুটিং শুরু হতে চলেছে। এবারের গল্প কীভাবে এগোবে?
খুব বেশি তো বলতে পারব না। তবে এবারে ঘটনাচক্রে বরেরা তাইল্যান্ড পাড়ি দিচ্ছে। সেখানে মাফিয়ার খপ্পরে পড়ে এবং যথারীতি বউয়েরা গিয়ে বাঁচায়। এদিকে আমার, মানে ‘মায়া’-র পাল্লায় পড়ে ‘রজত’-এর (রুদ্রনীল) আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সায়েন্স ক্লাব ছেড়ে সে এখন বউয়ের মতো ভগবান জপ করে এবং কু-সংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। ‘মায়া’-র চরিত্রটা করে খুব মজা পেয়েছিলাম। আশা করি এবারও খুব এনজয় করব।
বড়পর্দায় কাজের নিরিখে আপনার টলিউডে দশ বছর হল। সব ধরনের ছবিই করেছেন। ‘ঝুমুরা’, ‘অনন্ত’-ও রয়েছে। ‘ব্যোমকেশ’ বা ‘দুর্গা সহায়’ কিংবা ‘বিবাহ অভিযান’-এর মতো ছবিও রয়েছে। সব জনারেই কাজ করতে চান?
একেবারে হার্ডকোর মেনস্ট্রিম বললে ‘বিবাহ অভিযান’ প্রথম। ‘ব্যোমকেশ’ মেনস্ট্রিম হলেও একটা তফাত রয়েছে। আমার কিন্তু মেনস্ট্রিম ছবি করতে মজাই লাগে। তবে ইদানীং বাস্তব-ঘেঁষা ছবির সঙ্গে এই ধরনের মেনস্ট্রিম ছবির ব্যবধান ক্রমশ কমছে।
তবে আপনাকে যেমন ‘অনন্ত’, ‘ঝুমুরা’ বা ‘বিবাহ অভিযান’-এর মতো ছবির জন্যও ভাবা হয়, নুসরত, শ্রাবন্তীকে কিন্তু ভাবা হয় না।
দেখ, যারা আমাকে ‘অনন্ত’ বা ‘ঝুমুরা’-র জন্য ডেকেছে, আমি তাদের সেই জায়গাটাও দিয়েছি যে এমন ছবির জন্য অ্যাপ্রোচ করা যায়। আমার নো মেকআপ লুক, গ্ল্যামারহীন লুক বা বয়স্কা লুক করতে কোনও আপত্তি নেই। আমার মনে হয়, ওটা ‘ফড়িং’ করার সময় থেকেই এস্টাবলিশড হয়ে গিয়েছে, আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করতে হয়নি। ‘ফড়িং’, ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ দেখার পর সবাই বুঝেছে যে সোহিনীকে এই ধরনের চরিত্র দেওয়া যায়। এবার ‘গ্ল্যামার লুক’-এর চরিত্রও করেছি, যেমন ধরো ‘শ্রীকান্ত’। দু’ধরনের লুক আমি ক্যারি করতে পারি সেটা লোকে বুঝেছে। তবে এটা স্বীকার করব, ‘রূপকথা নয়’, ‘ফড়িং’ আমার প্রথম দিকের ছবি হওয়াতে সুবিধেই হয়েছে অনেক বেশি। আলাদা করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়নি।
[আরও পড়ুন: ঐন্দ্রিলাকে নিজের হাতে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব, অন্যথা হবে না: সব্যসাচী]
‘ব্যোমকেশ’-এ আবিরের সঙ্গে আপনার কেমিস্ট্রি দারুণ। মিস্ট্রিটা কী?
আবিরদার সঙ্গে খুবই সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কেরিয়ারের অনেক কিছু আমি আবিরদার থেকে শিখেছি। আর কাজ করতে করতে প্রচণ্ড কমফর্টেবল হয়ে গিয়েছি। শুধু আমি নই, বেশির ভাগ মানুষই আবিরদার সঙ্গে খুব কমফর্টেবল। একটা পজিটিভ ভাইব রয়েছে। বকতে পারে, ভালবাসতে পারে। আমরা ছোট্ট একটা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, প্রচণ্ড কম্পিটিশন, সেখানে আবিরদার মতো মানুষ যদি ফ্লোরে থাকে, কাজটা সহজ হয়ে যায়। আর একটি জিনিস বলতে চাই। আবিরদা যেভাবে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, আর কাজ ব্যালান্স করে চলে সেটা দেখে শেখার মতো। বেশিরভাগ সাকসেসফুল মানুষের ব্যক্তিগত জীবন সবসময় সুখের হয় না। নন্দিনীদি এবং বাড়ির সবার যেমন সাপোর্ট আছে, তেমন আবিরদা এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও খুব সুন্দর করে ব্যালান্স করতে পারে।
‘আগন্তুক’ মুক্তি পেল জি-ফাইভে তেমন ভাবে কোনও প্রচার ছাড়াই। আফসোস হচ্ছে? ‘অনন্ত’-ও যে প্রচার পেয়েছে, এটা তাও পায়নি।
ঠিকই, খুবই অনাড়ম্বরভাবে ছবিটা মুক্তি পেল। ২০২০-র জানুয়ারি মাসে যখন পোস্টার রিলিজ হয় তখন একটা ‘বাজ’ তৈরি হয়েছিল। আসলে একটা ছবি দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে, ছবিটাকে ঘিরে যে আগ্রহ সেটা কেমন মরে যায়। সেটা প্রোডিউসার বা টিম মেম্বারদের ক্ষেত্রেও হয় মনে হয়। একটা ব্যর্থতাবোধ তৈরি হয়। মানে ওই গরম গরম খাবার পরিবেশন না করলে যা হয় আর কী!
‘আগন্তুক’-এ ‘শোভারানি’-র মতো একজন অসুস্থ, বয়স্ক মহিলার চরিত্রে আপনার অভিনয় মনে রাখার মতো! এটা আয়ত্ত করলেন কীভাবে?
আমি বেণীদির কাছে একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম, সেটা আমাকে খুব হেল্প করেছিল। এগুলো আলাদা করে বলার কিছুই নেই। বলতেও অস্বস্তিই হয় আমার। শুটিংয়ের সময় ওই পঁাচ কেজির স্যান্ড ব্যাগ পায়ে লাগিয়ে হাঁটার একটা ব্যাপার ছিল, যাতে হাঁটা শ্লথ হয়। তবে তার আগে আমার একটা মাস্ল ইনজুরি হয়েছিল। আমার বডি কোল্যাপস করে যেত। রণ বহুদিন বিছানা থেকে তুলে সব কিছু করিয়ে দিয়েছে। ‘জাজমেন্ট ডে’-র সময় অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুটিংয়ে গিয়েছি। ‘আগন্তুক’-এর শুটিং তার পরেই হয়েছে। ফলে সেই অসম্ভব যন্ত্রণা নিয়েই কাজ করেছি। ফ্লোরে দু’বেলা ইনজেকশন দিতে আসত। সেটাও একটা কারণ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে একটা বিরক্তি, স্লোনেস স্বাভাবিকভাবেই ধরা পড়েছে।
সিনেমার পাশাপাশি থিয়েটারও করছেন। এই মুহূর্তে কোন কোন নাটক চলছে?
এই মুহূর্তে ‘নটধা’-র ‘অথৈ’ আর ‘মহাভারত’। আর অন্যটা ‘ঘরে বাইরে’। আসলে ২০০৮ সাল থেকে যখন সিরিয়াল করি, তখন থেকেই বিভিন্ন নাটকের দলে কাজ করেছি। ‘চেতনা’-র ‘চিরকুমার সভা’, ‘যোগাযোগ’ করেছি ২০১২ পর্যন্ত। হয়তো এক্সপোজার ছিল না। ২০১৩-২০১৪ সালে একটা গ্যাপ পড়ে। ২০১৪ সালে ‘রূপকথা নয়’ আর ‘ফড়িং’-এর জন্য আমি ‘বেস্ট ডেবিউ’ পেয়েছিলাম। তারপর আমার জীবনে খুব খারাপ সময় আসে। সেটা আর্থিক এবং মানসিক দু’ভাবেই। কোনও ছবিও নেই হাতে। সময়টা নিয়ে কী করব জানি না। তখন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটা নাটক ‘অবয়ব’-এ কাজ করি। শো বেশি হয়নি। কিন্তু আমি, সাহেব (ভট্টাচার্য) এবং গোটা নাটকের টিম প্রায় প্রত্যেকদিন বিকেলে রিহার্সাল করতাম। সেটা আমাকে একটা জোর দিয়েছিল। আমি যে বাড়িতে বসে সময় নষ্ট করছি না– এটা ভেবেও একটা ভাললাগা তৈরি হয়েছিল। সেই সময় এইভাবে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। এখন আমি বুঝতে পারি, ছবি যা-ই করি না কেন, নাটকটা চালিয়ে যেতে হবে। আর এই যে নিয়ম করে রিহার্সালের প্রসেসটা আমার খুব
ভাল লাগে।