সুপর্ণা মজুমদার: “ফাইট কোনি ফাইট”— এই সংলাপের ঐতিহ্য বাঙালি দর্শক জানেন। এখনও অনুভব করতে পারেন কোনি ও তার ক্ষিদদার লড়াই। সেই লড়াই এবার ফিরছে রঙ্গমঞ্চে। মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নতুন নাটক ‘কোনি’ (Kony)। পাণিহাটি অভিযাত্রীর নিবেদনে নাটকটি সম্পাদনা ও নির্দেশনা করছেন শান্তনু নাথ। আর তাঁর নাটকে ক্ষিদদা হচ্ছেন দেবদূত ঘোষ (Debdut Ghosh)। কোনি প্রিয়া সাহা রায়।
মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনেই ১৯৮৪ সালে ‘কোনি’ সিনেমা তৈরি করেছিলেন পরিচালক সরোজ দে। সেখান ক্ষিদদা হয়েছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)। আর জাতীয় পুরস্কারজয়ী সিনেমায় তার শিষ্যা কোনির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাঁতারু আর তাঁর গুরুর লড়াই ক্রীড়া জগতের সমস্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে সাফল্য পেয়েছিল। সেই কাহিনিই পাণিহাটি অভিযাত্রীর ৪৮তম বছরে একাডেমির মঞ্চে দেখা যাবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। সন্ধে সাড়ে ছ’টা থেকে।
[আরও পড়ুন: ভালবাসার অনেক স্মৃতি ফিরিয়ে দেবে অনির্বাণ-ইশা-অর্জুনের ‘মিথ্যে প্রেমের গান’, পড়ুন রিভিউ]
নাটকে ক্ষিদদার ভূমিকায় অভিনয় করছেন দেবদূত ঘোষ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তির জুতোয় পা গলানো সহজ কাজ নয়। তা ভালভাবেই জানেন অভিনেতা। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ফোনে জানান, প্রথমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ট্রিবিউট জানিয়ে নাটকটি করার পরিকল্পনা ছিল। কিংবদন্তি অভিনেতার শিক্ষা, জ্ঞান, নাট্যচর্চার যা ক্যানভাস তার ধারে কাছে যাওয়ারও চেষ্টা করেননি তিনি। বরং মানুষটাকে কাছ থেকে দেখে যা শেখার সুযোগ হয়েছিল তার ভিত্তিতেই একলব্যর ক্ষিদদার চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
নির্দেশক শান্তনু নাথ নিজে কোনির দাদার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ফোনে শান্তনু জানান, ২০১৮ সাল নাগাদই ‘কোনি’ নাটকের চিন্তা তিনি শুরু করে দিয়েছিলেন। কারণ ক্রীড়াজগতের দুর্নীতি। ধ্যানচাঁদের সময় থেকে সাম্প্রতিকালের সীতা সাহুর (স্পেশ্যাল অলিম্পিকে পদক জিতেও যিনি ফুচকা বিক্রি করে সংসার চালাতে বাধ্য হয়েছেন) সময়কাল পর্যন্ত ক্রীড়াজগতের দুর্নীতির বিশেষ তফাত হয়নি। যে খেলোয়াড়রা দেশের নাম উজ্জ্বল করেন, তাঁদেরই নানা গ্লানি-বঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাই কোনির মতো কাহিনিকে মঞ্চে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। সিনেমার বদলে মতি নন্দীর উপন্যাসকেই এখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু যে সিনেমায় সাঁতার, স্যুইমিং পুলের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা মঞ্চে কীভাবে করবেন? সেটা দর্শকদের জন্য সারপ্রাইজ প্যাকেজ। ২৪ ফেব্রুয়ারি একাডেমিতে গেলেই দেখতে পাবেন বলে জানালেন নির্দেশক। সিনেমায় কোনির ভূমিকায় আজও শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে রেখেছেন দর্শক। তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছিলেন শান্তনু। একটিবার নাটকটি দেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেত্রী তাতে রাজি নন। কোনি এবং ক্ষিদদার কাহিনি দেখলে কেঁদে ফেলবেন তিনি। তাই দেখতে চান না। তবে পাণিহাটি অভিযাত্রীর সদস্যদের বিদেশ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকে লীলাবতীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন শর্মিষ্ঠা দাস। প্রণবেন্দু হয়েছেন সুব্রত সেনগুপ্ত। আর ধীরেনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন কমল ব্রহ্ম।