স্টাফ রিপোর্টার: মফস্বল বা কখনও বা গাঁ-গঞ্জের আটপৌরে পরিবেশ ছেড়ে একেবারে মহানগরের ঝাঁ-চকচকে আলোকবৃত্তে, যেখানে পদে পদে পদস্খলনের হাতছানি।
অনেকেই সামলাতে পারেন না, সেই ফাঁদে পড়ে গিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনেন। তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স বাড়ানোর মরণপণ তাগিদ তো রয়েইছে। সবমিলিয়ে একটা বিপজ্জনক আবর্ত অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়ায় ফিল্ম টেলিভিশনের জগতে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা মারণ রূপ ধরে।
উঠতি অভিনেত্রী পল্লবী দের (Pallavi Dey) মৃত্যুর পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে শহুরে বৈভবের ঘূর্ণি। যার মাঝে পড়ে তলিয়ে গিয়েছেন অনেকেই। বাংলা টেলি জগতের অন্যতম নামী পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের (Leena Gangopadhyay) একাধিক সিরিয়ালে অভিনয় করেন অসংখ্য নতুন মুখ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মফস্বলের। সমস্যাটা কোথায়? পরিচালক জানাচ্ছেন, মফস্বল থেকে শহরে অনেকেই আসেন। বিপদ বাড়ায় একা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকার অভ্যেস। “আমার কিছু ‘মি টাইম’ বা একান্ত সময়ের প্রয়োজন।”
পরিচালকের বক্তব্য, একটা সিরিয়াল করেই এই ছুতোতে অনেকেই বাবা মা-র থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন। সেটাই হয়ে যায় মারাত্মক। প্রেম হয়। একটা থেকে একাধিক। তৈরি হয় সম্পর্কের জটিলতা। তা কেউ সামলাতে পারেন। কেউ পারেন না। এখানেই মা-বাবাকে প্রয়োজন। তারা হচ্ছে দেওয়ালের মতো। অনেক সমস্যার মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন। আঁচ লাগে না গায়ে। মফস্বল থেকে আসা নবাগতাদের প্রতি পরিচালকের পরামর্শ, “পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকো। যেখানে আরও পাঁচজন বন্ধু পাবে। কিন্তু একা ফ্ল্যাটে থাকতে যেও না।”
[আরও পড়ুন: ‘পল্লবীর আগে আত্মহত্যা করেছে সাগ্নিকের আরও এক প্রেমিকা’, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য]
একই মত পোষণ করছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও (Sreelekha Mitra)। তাঁর কথায়, “নতুন প্রজন্ম ভাবছে প্রচুর অর্থ আয় করছি মানেই যা খুশি তাই করতে পারি। এটা ভুল। মা-বাবাই পারে সেই ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। যে কারণে কলকাতায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকলেও সঙ্গে অভিভাবক স্থানীয় কাউকে রাখা উচিত।” একই সঙ্গে সোশ্যাল সাইটে ফলোয়ার্স বাড়ানোর নেশাকেও মারণ হিসেবে দেখছেন শ্রীলেখা।”
ইন্দ্রাণী হালদার (Indrani Haldar) মনে করেন, টেলিভিশনে যাঁরা অভিনয় করেন তাঁদের জীবন বেপরোয়া হয় না। তাতেও বেপরোয়া জীবনের সুযোগ থাকে না। অভিনেত্রীর মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলি ঘটে কারণ জীবনের প্রতি তাঁদের ভারসাম্যটা হারিয়ে যায়। অবসাদ গ্রাস করে নেয়। সেটা শুধু অভিনয়ের জগতে নয় প্রত্যেক পেশায়। পল্লবী যেহেতু পরিচিত মুখ তাই তাঁকে নিয়ে খবর হচ্ছে। যে প্রয়োজন তা প্রত্যেক মানুষের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। সেটা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা দরকার। এখনকার তরুণরা হঠাৎ করে নাম-যশ-অর্থ পেয়ে যান। তাতেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলেন। সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলে কেউ মেনে নিতে পারেন। কেউ মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু অবসাদে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত ভুল বলেই জানান ইন্দ্রাণী। সবকিছুকে মেনে নেওয়াটাই জীবন। সিনিয়র অভিনেত্রী হিসেবে, আস্থা না হারানোর পরামর্শই দেন তিনি।
পল্লবীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (Bhaswar Chatterjee)। একবারই দেখা হয়েছিল ‘মীরা’ সিরিয়াল করার সময়। প্রচুর ধূমপান করতেন পল্লবী। তাঁকে একদিন বারণও করেছিলেন বলে জানান ভাস্বর। টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই নেশাকে বেছে নেন। বেপরোয়া জীবনের স্রোতে ভেসে যাওয়ার মারাত্মক পরিণতি হয় বলেই জানান অভিনেতা।