বেলজিয়াম– ২ ডেনমার্ক– ১
(থোরগান, ডি’ব্রুইন) (পলসেন)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আবেগের বিস্ফোরণ কোপেনহেগেনে। বেলজিয়াম-ডেনমার্ক ম্যাচের ১০ মিনিটে সেই আবেগঘন মুহূর্ত। খেলা বন্ধ থাকল মিনিট খানেকের মতো। গ্যালারিতে দেখা গেল বিশালাকায় পোস্টার। তাতে লেখা, ‘এরিকসন, শুধু তোমার জন্য। গোটা দেশ তোমার সঙ্গে রয়েছে।” ওই এক মিনিট পার্কেন স্টেডিয়ামের ২৫ হাজার দর্শক, ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের ফুটবলাররা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের জন্য প্রার্থনা করলেন। ফুটবলমাঠে এমন দৃশ্য স্মরণকালের মধ্যে দেখা গিয়েছে কিনা, তা গবেষণার বিষয়।
ইউরো কাপে (Euro Cup 2021) ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে মাঠে অচেতন হয়ে পড়েন এরিকসন। হৃৎপিন্ড মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ডেনমার্কের (Denmark) ১০ নম্বর জার্সিধারীর। মাঠেই সিপিআর দেওয়া হয় তাঁকে। উদ্বিগ্ন ফুটবলবিশ্ব এরিকসনের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের বল গড়ানোর আগে বন্ধু এরিকসনের জন্য দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন রোমেলু লুকাকু। বিপক্ষ শিবিরের হলেও লুকাকু আগেই স্থির করে রেখেছিলেন, খেলার ১০ মিনিটে বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে খেলা বন্ধ রাখা হবে। সেই সময়ে এরিকসনের জন্য প্রার্থনা করা হবে। ঠিক তাই হল বৃহস্পতিবারের কোপেনহেগেনে। তখন অবশ্য বেলজিয়াম (Belgium Football Team) পিছিয়ে পড়েছে এক গোলে। ১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে ইউসুফ পলসেন গোল করে এগিয়ে দেন ডেনমার্ককে। এটাই ইউরোর মঞ্চে দ্বিতীয় দ্রুততম গোল।
[আরও পড়ুন: ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামার আগে বিরাটদের বিশেষ টিপস সৌরভের]
প্রথম ম্যাচে এরিকসনের ঘটনার আকস্মিকতায় ফিনল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল ডেনমার্ককে। বেলজিয়ামের সঙ্গে লড়াইটা খুব সহজ ছিল না ‘ড্যানিশ ডিনামাইট’দের। ফিফার ক্রমতালিকায় একনম্বরে বেলজিয়াম। খেলার শুরুতেই অবশ্য জেসন ডিনাইয়ারের মহাভুলে পলসেন এগিয়ে দেন ডেনমার্ককে। দীঘল চেহারার কুর্তোয়া শরীর ছুঁড়ে দিয়েও সেইযাত্রায় বাঁচাতে পারেননি বেলজিয়ামকে। ওই গোল হয়তো তখনকার মতো বেলজিয়ামের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছিল। গোল হজম করার পরে ভুলের পর ভুল করছিল ‘রেড ডেভিলস’রা। অন্যদিকে রক্তের স্বাদ ততক্ষণে পেয়ে গিয়েছে ডেনমার্ক। একের পর এক আক্রমণ বেলজিয়ামের পেনাল্টি বক্সে তুলে আনেন পলসেনরা। ভাগ্য ভাল বলতে হবে বেলজিয়ামের। ডেনমার্ক আর গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি।
বেলজিয়ামকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল, লুকাকুরা বোধহয় ‘নো নেটওয়ার্ক জোন’-এর বাসিন্দা। নিজেদের মধ্যে কোনও যোগাযোগ নেই। দুর্দান্ত গতিসম্পন্ন লুকাকুকেও দিগভ্রষ্ট দেখাচ্ছিল। বিরতির আগের মুহূর্তে একবারই তাঁকে বিপজ্জনক দেখিয়েছে। বিরতির পরে অবশ্য অন্য দৃশ্য। রবার্তো মার্টিনেজ আস্তিনের তাস ফেললেন। ডি’ ব্রুইনকে মাঠে পাঠালেন। ডি’ব্রুইন এলেন, দেখলেন আর জয় করে নিলেন। বেলজিয়ামের সাত নম্বর জার্সিধারী মাঠে নামতেই খেলার রং বদলে যায়। মিলান ডার্বিতে ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো লুকাকুর ডান প্রান্ত ধরে আগুন ধরানো দৌড় মাটি ধরায় ডেনমার্কের দুই ডিফেন্ডারকে। কিন্তু এমন জায়গায় লুকাকু বল নিয়ে চলে যান যেখান থেকে গোল করা কঠিন। তিনি বল বাড়ান ডি’ ব্রুইনকে। নিজে শট না মেরে ইডেন হ্যাজার্ডের ভাই থোরগানকে দিয়ে গোল করান বেলজিয়ামের সাত নম্বর। ৫৪ মিনিটে সমতা ফেরায় মার্টিনেজের দল।
গোল হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দাদা ইডেনকে নামান বেলজিয়াম কোচ। ‘রেড ডেভিলস’দের তখন সত্যি সত্যিই বিশ্বের একনম্বরই লাগছিল। ৭০ মিনিটে ডি’ব্রুইনের বাঁ পায়ের কামানে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। গোল করার পর উৎসবে মাতেননি। শ্রদ্ধা জানান হাসপাতালে থাকা এরিকসনকে।
[আরও পড়ুন: অনন্য সম্মান, সেনকো গোল্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হলেন অ্যাথলিট দ্যুতি চাঁদ]
এরিকসনের দেশের পাশে এদিন হয়তো ভাগ্যদেবী ছিলেন না। দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও বেলজিয়ামের জালে বল জড়়াতে পারেনি ডেনমার্ক। ৮৭ মিনিটে ব্র্যাথওয়েটের ছোবল বেলজিয়ামের বার চুম্বন করে বেরিয়ে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ডেনমার্কের সমর্থকরা। হয়তো বুঝেই গিয়েছিলেন, দিনটা তাঁদের নয়। বেলজিয়াম সমর্থকদেরও কি সেই মুহূর্তে দম আটকে আসেনি? যাই হোক, ভাগ্য তো আবার সাহসীদেরই সহায় হয়। দু’ ম্যাচ জিতে ইউরোর নক আউট পর্বে পৌঁছে গেল ডি’ ব্রুইনের বেলজিয়াম। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের অপেক্ষায় ড্যানিশরা।