উস্তাদ জাকির হুসেনের মতো কিংবদন্তিদের মৃত্যু হয় না। এমন শিল্পীরা বেঁচে থাকেন নিজেদের শিল্পের মাধ্যমে। সুর, তাল, ছন্দের যে সম্পদ মায়েস্ত্রো রেখে গিয়েছেন তা অমূল্য। ভাতৃসম গুরুকে নিয়ে লিখলেন বিশিষ্ট শিল্পী তন্ময় বসু।
কোন স্মৃতিকথা লিখতে চাই না। শুধু জানাতে চাই নিজের অনুভূতি। পদ্মভূষণ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ একবার উস্তাদ জাকির হুসেনের বাজনা সম্পর্কে বলেছিলেন উনি 'কৃষ্ণা অফ তবলা।' শিল্পী হিসেবে যেন সমস্ত রংকে নিজের সঙ্গীতের মধ্যে সুন্দরভাবে মিশিয়ে দিতে পারতেন। ওঁর অবদান সম্পর্কে যদি বলতে হয়, কিংবদন্তিদের মৃত্যু হয় না তাঁরা অমর। সঙ্গীতের জগতে ওঁর যা অবদান, আমি কখনই বলতে পারি না যে উনি চলে গিয়েছেন। একার হাতে বিশ্ব মানচিত্রে তবলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সমস্ত ফেস্টিভ্যালে সারা পৃথিবীতে তবলা যে এইরকম বাজতে পারে, এত বড় একটা ঐতিহ্য, সংস্কার সেটা উনি প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন। আমার মনে যেন উনি ঈশ্বরের পাঠানো দূত, একজন মসিহার মতো। এসেছেন, জয় করেছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আর আমাদের দিয়ে গিয়েছেন নিজস্ব এক ধারা। পরবর্তী প্রজন্মের আমরা যাঁরা এবং আমাদের পরের প্রজন্মের সবাই কোনও না কোনওভাবে ওঁর শিল্প দ্বারা প্রভাবিত।
ওঁর সঙ্গতের স্টাইল, মঞ্চ ভাবনা, যেভাবে মঞ্চে বসতেন, আমরা সবাই তা অনুসরণ করি। মাস্টার মিউজিশিয়ান বলা যেতে পারে, সমস্ত ঘরানার সঙ্গীতে সাজানো একটি প্ল্যাটারের মতো ওঁর মিউজিক। নিজে পাঞ্জাব ঘরানার প্রতিনিধি ছিলেন কিন্তু অন্যান্য পাঁচ ঘরানার তবলা বাদ্যের সমস্ত স্টাইল শিখেছিলেন, তাতে সুদক্ষ ছিলেন। এর প্রমাণ তাঁর বাজনাতেও পাওয়া যায়। তাই শুধু একটাই বক্তব্য, উনি সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমি কখনও বলতে চাই না যে উনি নেই। আমি বহুবার ওঁকে শোনার, ওঁর সঙ্গে বসার, সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। সেগুলো আর আলাদা করে উল্লেখ করছি না। শুধু এটুকু জানাতে পারে, উনি একজন বড় ভাই, গুরুর মতো ছিলেন আর সবসময় তাই থাকবেন।