সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আকাশে নীল-সাদা মেঘ। উজ্জ্বল রোদ। শিউলির গন্ধ। পুকুরের টলমলে জল। কাশবন। সব আগমনীর বার্তা নিয়ে আসে। পুজোর চারদিন তো বাঙালির আনন্দের শেষ নেই। দশভূজার আরাধানায় মেতে ওঠেন বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি। দেবীর দশ হাতে দশটি অস্ত্র। কোন হাতে কোন অস্ত্র থাকে তা অনেকেই জানেন। সকলের এও জানা সেই অস্ত্রগুলি দেবতারা দিয়েছেন। তবে কোন দেবতা, কোন অস্ত্র দিয়েছেন? সেই অস্ত্রগুলি কীসের প্রতীক? তা নিয়ে প্রশ্ন অনেক।
দশঅস্ত্রের কথা বলতে গেলে মহাময়ার আর্বিভাবের বিষয় জানতে হবে। কেন মায়ের আর্বিভাব? মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দেবকূল। ফলে দেবতারা স্বর্গলোক ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদিকে ব্রহ্মার বরে কার্যত অমরত্ব লাভ করেছে মহিষাসুর। তাঁকে একমাত্র বধ করতে পারবেন কোনও নারী। তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মিলিত তেজে সৃষ্টি হয় মহামায়া দুর্গার। দেবীর আর্বিভাব তো হল কিন্তু অসুরদের সঙ্গে লড়াইয়ে দরকার অস্ত্র। সব দেবতারা নিজেদের সেরা অস্ত্রগুলি তুলে দেন মা দুর্গার হাতে। মাকে সাজানো হল সংহাররূপিণী রূপে।
[আরও পড়ুন: Bonedi Barir Durga Puja: হাতিবাগানের কুণ্ডুবাড়ির পুজো প্রকৃতি ও মানব সভ্যতার মেলবন্ধন, মা এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী]
কোন দেবতা কোন অস্ত্র দিলেন-
ত্রিশূল: মহাদেব তাঁর ত্রিশূল দেন দেবী অয়ন্তিকাকে। ত্রিশূলের তিনটি ফলা তিনটি গুণ বহন করে। তিনটি ফলা হল সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। সত্ত্ব ধর্মজ্ঞানের প্রতীক। রজঃ ফলাটি অহঙ্কার এবং তমঃ বহন করে অন্ধকার দিক। ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন দেবী।
সুদর্শন চক্র: মা দুর্গাকে সুদর্শন চক্রটি দিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণু। এই চক্র নির্দেশ করে বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হয় দেবীর দ্বারা এবং ব্রহ্মাণ্ড আবর্তিত হয় সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে। সঙ্গে এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক বহন করে।
শঙ্খ: শঙ্খ মঙ্গলের প্রতীক। তার আওয়াজে স্বর্গ, মর্ত্য ও নরক জুড়ে থাকা সব অশুভ শক্তি ভীত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দেবী দুর্গাকে শঙ্খ দিয়েছিলেন বরুণদেব।
বজ্র: দেবরাজ ইন্দ্র মা দুর্গাকে বজ্র অস্ত্রটি দেন। বজ্র আত্মশক্তির প্রতীক। মেঘের ঘর্ষণে বজ্রশক্তির মতো তেজ উৎপন্ন হয়।তেমনই আত্মশক্তি তৈরি হয় কর্ম থেকেই, সেই প্রতীকই বহন করে বজ্র।
গদা: যমরাজ দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন গদা ৷ যা কালদণ্ড নামেও পরিচিত। এই অস্ত্র আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। সেই সঙ্গে শক্তিরও প্রতীক।
তির এবং ধনুক: দুর্গাকে তির ও ধনুক দিয়েছিলেন সূর্যদেব। ধনুক মক্ষমতাকে নির্দেশ করে। তির গতিময়তার প্রতীক। তির ধনুক দিয়ে বোঝানো হয় মা দুর্গা ব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তির উৎস।
পদ্ম: দেবী দুর্গাকে পদ্ম দিয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাদেব। অর্ধস্ফুট পদ্ম শুভ চেতনার প্রতীক। দেবীর আশীর্বাদে অন্ধকার কেটে আলোর সঞ্চার হয়, সেই শুভশক্তির বার্তা নিয়ে আসে পদ্মফুল।
সর্প: নাগরাজ বা শেষনাগ অস্ত্র হিসাবে সর্প প্রদান করেছিলেন। সর্প হল চেতনা ও শক্তির প্রতীক। সাধানার মাধ্যমে উচ্চস্তরে পৌঁছন যায়, সেই প্রতীক বহন করে সর্প।
কুঠার: কুঠার হল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতীক। যে-কোনও পরিস্থিতিতে ভয় না পাওয়ার প্রতীক কুঠার।
অসি: অসি গণেশদেবের অস্ত্র। তা তিনি দিয়েছেন দেবীকে। এই অস্ত্র জ্ঞান। এবং ধীশক্তির প্রতীক।