সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: গুরু আর গুরুপত্নীর অফুরন্ত বিশ্বাস আর ভালবাসার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষককে (Head teacher) সর্বস্বান্ত করল তাঁরই এক প্রাক্তন ছাত্র। শুধু সর্বস্বান্ত করেই ক্ষান্ত থাকেনি গুণধর ওই প্রাক্তনী। অভিযোগ, অবসরপ্রাপ্ত ওই প্রধানশিক্ষক-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনেরও পরিকল্পনা করছিল সে। সমস্ত সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টায় এই পরিকল্পনা করে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির ঠাঁই এখন শ্রীঘরে। রোমহর্ষক এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুর থানার কৃষ্ণচন্দ্রপুরে।
মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অশীতিপর শশাঙ্কশেখর নিয়োগী ও তাঁর স্ত্রী মীরাদেবীর বড় ভরসা ছিল প্রতিবেশী শংকর ময়রার উপর। শংকর একসময় শশাঙ্কবাবুর স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। একে নিজের ছাত্র তার উপর প্রতিবেশী তাই ভালবাসা আর বিশ্বাসটা বোধহয় একটু বেশিই করে ফেলেছিলেন ওই বয়স্ক দম্পতি। কিন্তু তার মাশুল যে তাঁদের এভাবে দিতে হবে তা স্বপ্নেও বোধহয় ভাবেননি তাঁরা। গুরু ও গুরুপত্নীর বিশ্বাস আর ভালবাসার সুযোগ নিয়ে শশাঙ্কবাবুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কখনও ১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা, কখনও ৫১ হাজার টাকা কখনও আবার শশাঙ্কবাবুর পরিবারের এক সদস্যা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মায়া মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নিজের পকেটস্থ করে শংকর। অভিযোগ, গুরুপত্নীর কাছ থেকেও বেশ কয়েকবার ভুলিয়েভালিয়ে তাঁর কিছু সোনার গয়নাও হাতিয়ে নিয়েছে মাস্টারমশাইয়ের অধম ছাত্রটি।
[আরও পড়ুন: ‘ভোট জেতার জন্য ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনকে মদত’, বাংলার সরকারকে তোপ দিলীপের]
শশাঙ্কশেখরবাবু জানিয়েছেন, শংকর ছিল তাঁরই ছাত্র। তাই বিশ্বাসটা ওর উপর একটু বেশিই ছিল তাঁর। তিনি ও তাঁর স্ত্রীর দেখাশোনার ভার ছিল শংকর আর ওর স্ত্রী পম্পার উপর। যখনই যা প্রয়োজন হত তাদেরকেই বলতেন তাঁরা। এমনকি ব্যাংক থেকে কত টাকা তুলতে হবে শংকরকে মুখে জানিয়ে ফাঁকা চেকেই কেবল সই করে দিতেন তিনি। সেই অন্ধবিশ্বাসের সুযোগে এ পর্যন্ত তাঁর ও তাঁর পরিবারের এক সদস্যের অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁরই ছাত্র পাঁচ লক্ষাধিক টাকা তুলে নেয় বলে প্রাক্তন ওই প্রধানশিক্ষকের অভিযোগ। তাঁর আরও অভিযোগ, আগে স্কুলেরই ক্যান্টিন চালাত সে। রাতারাতি একটি বরফকলের মালিক হয়ে যায়। বরফকল বাড়াতে ও গাড়ি কিনতে টাকা লাগবে বলে বেশ কয়েকবার তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকেও কয়েকটি সোনার গয়নাও হাতায় তাঁর ওই ছাত্র।
কয়েকদিন ধরে ‘প্রিয় ছাত্রের’ আচরণে সন্দেহ হওয়ায় শশাঙ্কশেখরবাবু জামাই কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলেরই বর্তমান প্রধানশিক্ষক চন্দন মাইতিকে বিষয়টি জানান। চন্দনবাবুর কথায়, তাঁর স্ত্রী বিষয়টি নিয়ে শংকরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে সে। তিনি প্রতিবাদ করলে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী পুনমদেবীকে খুনের হুমকিও দেয় শংকর। এরপরই শ্বশুরমশাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে তার কুকীর্তির পুরো বিষয়টি সামনে আসে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির ফোনের কলরেকর্ড পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, শশাঙ্কশেখরবাবুর মেয়ে পুনমদেবী-সহ পুরো পরিবারকে খুনের চক্রান্ত করে সমস্ত সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টায় ছিল সে। এজন্য জয়নগর এলাকার কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গে যোগাযোগও করে ফেলেছিল অভিযুক্ত। শংকরকে গ্রেফতার করে শনিবার ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় তাকে।
[আরও পড়ুন: ‘ধর্মপ্রাণ, মেধাবী ছেলেটাও জঙ্গি?’ নাজবুস সাকিবের গ্রেপ্তারিতে হতবাক ডোমকল]
The post প্রাক্তন ছাত্রকে ভরসা করে নিঃস্ব অশীতিপর শিক্ষক, ভাগ্যে জুটল প্রাণনাশের হুমকিও appeared first on Sangbad Pratidin.