দুলাল দে, দোহা: ফিফার (FIFA) নিয়ম হচ্ছে, ম্যাচের আগের দিন প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলন কোচের সঙ্গে আসতেই হবে একজন ফুটবলারকে। এসব ক্ষেত্রে কোচের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে সাধারণত দলের অধিনায়ককেই পাঠানো হয় টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু এদিন কাতার আন্তর্জাতিক লাইব্রেরির মূল মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হতেই দেখা গেল, এসেছেন শুধুই কোচ হান্সি ফ্লিক। কোনও ফুটবলার নেই। স্বাভাবিক ভাবে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, স্পেন (Spain) ম্যাচের আগে এটা কেন করলেন জার্মান কোচ?
এমনিতে জার্মান ফুটবলের জন্য সময়টা একদমই ভাল যাচ্ছে না। ইউরোতে ব্যর্থ। তার উপর গত রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই জার্মানি বিদায় নেওয়ায় চমকে উঠেছিল বিশ্ব ফুটবল। কিন্তু কাতারে (Football World Cup 2022) এসে প্রথম ম্যাচেই জাপানের কাছে হারার পর এখন আর কেউ বলছেন না, জার্মানির (Germany) বিরুদ্ধে ফলাফলটা অঘটন। বরং রবিবার স্পেনের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপ জুড়ে মূল আলোচনা, প্রথম ম্যাচে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে স্পেন যা খেলেছে, তাতে ম্যাচটা হেরে গিয়ে জার্মানি না এবারও বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়। গ্রুপের যা পরিস্থিতি, তাতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে হলে স্পেনের বিরুদ্ধে অন্তত এক পয়েন্ট পেতেই হবে জার্মানিকে।
[আরও পড়ুন: ‘জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের নেতৃত্ব দেওয়াটা ভারতের জন্য বিরাট সুযোগ’, ‘মন কি বাতে’ উচ্ছ্বসিত মোদি]
কিন্তু সেটাও কি পাওয়া সম্ভব? কারণ, দু’বছর আগে এই জার্মানিকেই ৬-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল স্পেন। বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে ‘স্পেনের বিরুদ্ধে এবার বুঝে নেব’ মার্কা কথাবার্তা জার্মান শিবির থেকে উড়ে এলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবনাটাই অসম্ভবের পর্যায়ে। কারণ, প্রথম ম্যাচে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে স্পেনের দুর্ষর্ষ পারফরম্যান্স। সেভাবে কোনও নাম্বার নাইন পজিশন ছাড়াই কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে হারিয়েছে স্পেন। ফলে জার্মানির বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে লুই এনরিকের দল যথেষ্ট ফুরফুরে মেজাজে। তবুও ম্যাচটা যেহেতু স্পেন বনাম জার্মানির মতো বিশ্বফুটবলের দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে, তাই ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী চলে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের কোনও ফুটবলার কেন নিয়ে এলেন না জার্মান কোচ ফ্লিক? বিশেষ করে এই সিদ্ধান্তর পর ফিফা জরিমানাও করতে পারে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনকে। ফ্লিক বললেন, “জরিমানার থেকেও আমার মাথায় বেশি ঘুরছে ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়া। কারণ, আমরা জানি, স্পেনের বিরুদ্ধে কাল আমরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ খেলতে নামছি। কোনও কারণে এক পয়েন্ট না পেলে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ফুটবলারদের বিশ্রাম না দিয়ে আমাদের শিবির থেকে তিন ঘণ্টা দূরে সাংবাদিক সম্মেলনে টেনে নিয়ে আসাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করিনি। গত বিশ্বকাপে আমরা যেখানে শিবির করেছিলাম, সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলন করতাম। কিন্তু এবার অনেক দূরে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হচ্ছে। ফুটবলারদের দিকটাই ভেবেছি।”
[আরও পড়ুন: আজও কুড়ি বছর আগের আতঙ্ক তাড়া করে গুজরাট দাঙ্গায় ‘অত্যাচারিত মুখ’ কুতুবউদ্দিনকে!]
আর রবিবার ম্যাচের আগে জার্মানি শিবিরে যে টেনশনের আবহ রয়েছে, প্রথম ম্যাচেই ৭ গোলে জেতার পর সেই টেনশনের ছিটেফেঁাটাও স্পেনে নেই। বরং স্প্যানিশ কোচ এনরিকে বলছেন, “জার্মানির মতো দলের বিরুদ্ধে খেলা মানে, ব্যাপারটা উপভোগ করা। ভুলে যাবেন না দলটার নাম জার্মানি। যাদের জার্সিতে কিন্তু চারটে তারা রয়েছে।”
রবিবার বিশ্বকাপে সম্মুখসমর। কিন্তু দু’দলের একাধিক ফুটবলার, ক্লাব ফুটবলে একসঙ্গে খেলেন। বার্সোলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, লিপজিগ, চেলসি– বিভিন্ন ক্লাবে দু’দলের একাধিক ফুটবলার একসঙ্গে খেলেন। ফলে রবিবার বিশ্বকাপের ম্যাচে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলতে নামলেও, প্রতিপক্ষ ফুটবলাররা একে অপরের শক্তি, দুর্বলতা সবই ভাল ভাবে জানেন।
এই ম্যাচের আগে এনরিকে এতটাই চাপহীন রয়েছেন যে বলেছেন, বিশ্বকাপের সময় ফুটবলাররা যৌনজীবন পালন করতে পারেন। আর তা নিয়ে এনরিকের কোনও সমস্যা নেই। সাফ বলেছেন, “এই সময়টায় ফুটবলাররা প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই স্বাভাবিক যৌনজীবনের মধ্যে থাকলে ফুটবলাররা অনেক বেশি চাপহীন থাকতে পারবে।”
কোস্টা রিকাকে ৭-০ গোলে হারানোর আগে বিশ্বকাপে স্পেনের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ৬-১। ’৯৮ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়াকে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু তুলনায় এখন অনেক কমজোরি হলেও প্রতিপক্ষ দলটার নাম যে জার্মানি। এনরিকে বললেন, “জার্মানি বলেই সমীহ করছি। তবে ওরা নিজেদের স্টাইল বদলে যে খেলাটাই খেলুক না কেন, আমরা আমাদের খেলাই খেলব। বদলাব না। এমনকী কোস্টারিকার বিরুদ্ধে যে দলটা খেলেছে, সেই দল থেকে কিছু ফুটবলারদের পরিবর্তনও করতে পারি।”
উল্টোদিকে, জার্মান কোচ বলছেন, ‘‘শেষ দুটি প্রতিযোগিতা আমাদের জন্য খুবই খারাপ গিয়েছে। রবিবার স্পেন ম্যাচটি আমাদের জন্য বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ফাইনাল ভেবেই খেলতে নামব।’’ স্প্যানিশ কোচ অবশ্য পুরো দলটাকে যতটা সম্ভব চাপহীন রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।