জীবন-সম্পর্ক-কেরিয়ার ও নতুন ছবি ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ নিয়ে অকপট আড্ডায় জীতু কমল। কথোপকথনে শম্পালী মৌলিক।
কেমন আছেন? ‘অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ’-এর শুটিং তো সদ্য শেষ করলেন?
ভালো আছি। অসাধারণ হয়েছে ওই ছবিটা। ফার্স্ট শিডিউল অনেকদিন আগে করেছিলাম, সেকেন্ড শিডিউলও বেশ ভালো হয়েছে। পরিচালক দুলালদা খুব সর্টেড। স্ক্রিপ্ট খুব ভালো বলেই আমি এই ছবিটা করেছি। মানুষ কিন্তু দেখবে এই ছবিটা, আমি এখনই বলে দিলাম। যদি ঠিকঠাক এডিট করে, ভালোভাবে পোস্ট প্রোডাকশন করা যায়।
‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ এই সপ্তাহে আসছে। ছবিটা করতে রাজি হওয়ার কারণ কী?
প্রথমত, পরিচালক অর্ণব মিদ্যা আমার কাছে এসেছিলেন একটা গল্প নিয়ে, তাঁর কথাবার্তার মধ্যে একটা সততা ছিল। গল্পটা অ্যান্থোলজি ধরনের। যেমন– সত্যজিৎবাবু ‘তিনকন্যা’ করেছেন বা সৃজিতদাও ওই ধরনের ছবি করেছেন। তেমন অ্যান্থোলজি ধাঁচের গল্প নিয়ে এই ডিরেক্টর এসেছিলেন। ‘অপরাজিত’-র আগে বা পরে ছবিটা করেছিলাম। অনেকদিন হয়ে গিয়েছে। তারপরে ফ্লোরে গিয়ে বুঝতে পারি, একটু ঢিলে আছে। কিছু সিদ্ধান্ত ভালো হয় বা খারাপ হয়। সেইখান থেকে আমি এখন খুবই বুঝে চলি। বড় পরিচালক, নাম করতে চাই না, একনম্বর প্রোডাকশন হাউস, তাঁর ছবিও আমি ‘না’ করেছি। ওই ভয়গুলো মাথায় কাজ করে এখন। যে আমি ‘হ্যাঁ’ বলে দিলাম তারপরে যেভাবে ছবি হল, সেগুলো গল্পে হয়তো ইমপ্লিমেন্ট করা হল না, তখন আমার কেরিয়ারের জলাঞ্জলি হয়ে যাবে। তার চেয়ে থাক, অল্প অল্প করেই কাজ করি। ওই জন্যই খুব কম কাজ করছি।
‘সেদিন কুয়াশা ছিল’-তে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, সৌরসেনী মৈত্র-র মতো অভিনেতারা রয়েছেন। ভালোবাসার ছবি। এই যুগে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক যেখানে দাঁড়িয়ে সেই জায়গায় ফোকাস করছে কি?
সেটা আমার-পরানদা-লিলিদিদের গল্পের ফোকাস। বাকি গল্পগুলো আমি জানি না। আমরা চেয়েছিলাম সবাই মিলে ছবিটা দেখি। যেমন, প্রিভিউ করি। ‘অপরাজিত’ করেছি, ‘মানুষ’-এ করেছি বা ঋতুদির ছবিগুলোও আমরা আগে দেখেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে বলেও কিছু হয়নি।
এই যে আপনি বললেন, কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। সেইখানে কিন্তু লোকজনের একটা বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, জীতু নাকউঁচু বা খুব ট্যানট্রাম হয়ে গিয়েছে আপনার।
হ্যাঁ, সেদিনও বলছিলাম, মানুষ মনে করবে আমি স্নবিশ। কিন্তু ব্যাপারটা সেইরকম নয়। নিজের জীবনটাকে অন্যভাবে দেখেছি। আর পালটানো শুরু করতে হয় নিজের থেকে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বহু অভিনেতা এমন চরিত্রে কাজ করে ফেলে, যেটাতে নিজেরাই বোঝে সে ফিট করছে না। কিন্তু ওটা অর্থের জন্য বা মনে হয় যে ওয়ার্কশপের মাধ্যমে করে ফেলবে, কিন্তু নিজে আত্মবিশ্বাসী থাকে না। আত্মবিশ্বাস না থাকলে যে ‘না’ করতে হয়, এটা আমি নিজের থেকেই শুরু করতে চেয়েছি। আজকে লোকে বলবে স্নবিশ কিন্তু বছর দুয়েক পরে সেটা বলবে না, সেই অ্যাশিওরেন্স দিতে পারি এখনই। বরং বলবে যে, ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অল্প করেছে।
‘অপরাজিত’-র পরে কেরিয়ার যেভাবে এগোচ্ছে, আপনি খুশি?
হ্যাঁ, খুশি হব না কেন (হাসি)। ‘মানুষ’ বক্স অফিসে কী করেছে সেটা আমার দেখার নয়। আমার চরিত্রটা খুব প্রশংসা পেয়েছে, ভারতে-বাংলাদেশে। আমার কাজ দর্শকের ভালো লেগেছে।
[আরও পড়ুন: কল্পনা-বাস্তবের লুকোচুরি খেলায় ছেলেবেলার স্মৃতি ফেরাল ‘ভূতপরী’, পড়ুন রিভিউ]
সাম্প্রতিক কালে আপনি কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি আমার মতো’ ছবিটা শুট করলেন। আপনি, শ্রাবন্তী আর কে কে?
হ্যাঁ, ওটা ভালো হয়েছে। আর রজতাভদা অন্যতম মুখ্যচরিত্রে। ওটা বাবা-ছেলের গল্প। একই ধরনের গল্প নিয়ে আরেকটা ছবি আমার কাছে এসেছিল খুব বড় হাউস থেকে। কিন্তু
যত বড়ই প্রোডাকশন হাউস হোক আমি করিনি। কারণ, ওইরকম একটা ছবি তো
করে ফেলেছি।
এই মুহূর্তে আর কিছু পাইপলাইনে আছে?
দুটো ছবি আরও আছে। এক্ষুনি নামগুলো বলতে পারছি না। দুটোই ভালো স্ক্রিপ্ট। আর রিলিজ করার মতো অবস্থায় আছে ‘পদাতিক’। এটায় দর্শক অবাক হবে আমার চরিত্র আর লুক দেখে। ‘অপরাজিত’-তে মানুষের যেমন ভয়ানক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, এটায় তার চেয়েও অন্যরকম প্রতিক্রিয়া আসবে। ‘পদাতিক’-এ আমার গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স, কিন্তু ছিটকে যাওয়ার মতো।
বিগত এক-দুবছরে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক ওঠানামা গিয়েছে আপনার। দাম্পত্যের ভাঙনের পর জীবন কতটা বদলেছে?
জীবন তো জীবনের মতো চলছে। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। পজিটিভ মোডে থাকতে ভালোবাসি। আমার গলায় কখনও বেদনার সুর দেখবেন না বা হতাশার সুর। বা আমাকে কাজে লাগাচ্ছে না ইন্ডাস্ট্রি–এসব বলব না। যেখানে এসেছি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই এসেছি। আজকে ধরুন খারাপ কিছু গেছে, রাতের অন্ধকার যত গভীর হবে, তত সূর্যের আলো বেশি প্রকাশ পাবে। আমি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তো সূর্যের আলো আরও বেশি করে দেখতে পাব।
এটা কিন্তু ভালোবাসার মাস। নতুন প্রেম?
এটাই প্রথমবার, ফেব্রুয়ারি মাসে এই বসন্তে আমার প্রেম নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর আমাকে বলা হত, আমি অনেক প্রেম করেছি। এবং সত্যিই তাই। এই বছরে আমার কোনও প্রেম নেই। মা-বাবার কাছে রয়েছি, তাদের জীবনকেই রঙিন করে তুলছি (হাসি)।