দীর্ঘদিন পর আবার ক্যামেরার সামনে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। হইচইয়ের ‘মোহমায়া’ সিরিজে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সিরিজ মুক্তির আগে মনের কথা জানালেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘মোহমায়া’-র ট্রেলারে আমরা দেখি দু’জন নারী এবং এক তরুণকে। তরুণের সঙ্গে তাদের একটা জটিল মাতৃস্থানীয় সম্পর্ক রয়েছে। এই সিরিজের কেন্দ্রে কি ইডিপাস কমপ্লেক্স রয়েছে?
বিষয়টা এক্ষুনি খোলসা করে আমরা বলছি না। উই ওয়ান্ট পিপল টু সি। তবে যে কোনও একটা কমপ্লেক্স বা কনফ্লিক্ট দিয়ে এই সিরিজের সরলিকরণ করা যাবে না। তিনজনের মধ্যে নানারকম ইকুয়েশন কাজ করছে, নানান শেডস রয়েছে।
শুনলাম স্ক্রিপ্ট পড়ে আপনি না কি ‘মায়া’-র চরিত্রটা করতে চেয়েছিলেন? অথচ ট্রেলারে ‘অরুণা’-র (স্বস্তিকা) চরিত্রের রেশ বেশি! কারণটা কী?
আসলে এর আগে ‘মায়া’-র মতো চরিত্র আমি করিনি। হ্যাঁ, এটাও ঠিক গোটা সিরিজে ‘অরুণা’-র চরিত্রটা হয়তো অনেক বেশি সময় ধরে থাকবে, বেশি প্রমিনেন্ট। কিন্তু ‘অরুণা’র চেয়ে ‘মায়া’র চরিত্রটা আমার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমার দর্শককে নতুন কিছু দিতে পারার স্কোপ, আমি ‘মায়া’-র মধ্য দিয়ে পেয়েছি।
এতদিন পর আবার স্ক্রিনে ফেরা। প্রমিনেন্ট চরিত্রে অভিনয় করার লোভ যে কোনও অভিনেতার মধ্যে থাকে। আপনি সেটা ছেড়ে দিলেন!
লোভ আমারও আছে। কিন্তু আমার লোভের ধরনটা আলাদা। কতক্ষণ স্ক্রিনে থাকলাম সেটা নিয়ে আমার লোভ নেই। কিন্তু যতক্ষণ স্ক্রিনে থাকছি ততক্ষণ স্ক্রিনে আমি কী-কী করার সুযোগ পাচ্ছি সেইটার প্রতি আমার লোভ বেশি।
[আরও পড়ুন: ‘যে কাজ করেছে সেই জিতবে টালিগঞ্জে’, একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্তব্য মিমির]
ট্রেলারে আমরা ‘মায়া’-র ওপর ভায়োলেন্স হতে দেখি। তীব্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে বলে মনে হয়। এই চরিত্রে অভিনয় করতে আপনার কোনও ট্রমা ট্রিগার্ড হয়েছে? ‘মায়া’-র চরিত্রে অভিনয় করার চ্যালেঞ্জ কোনটা?
ব্যক্তিগত ট্রমা উঠে আসে না আমার কাজের ক্ষেত্রে। তাছাড়া আমার চারপাশে ‘মায়া’-র মতো কাউকে দেখিনি। হয়তো খবরে পড়ে থাকতে পারি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কাউকে চিনি না। সেক্ষেত্রে আমাকে নিজেকে ভুলে গিয়ে ‘মায়া’ হয়ে গিয়ে ওর যন্ত্রণার মধ্যে ঢুকতে হয়েছে, সেই যন্ত্রণার সঙ্গে থাকতে হয়েছে। এবং সেটাও কিন্তু প্রচণ্ড ট্রমাটিক। এতটা স্ট্রেস এবং স্ট্রেন নিজের শরীর এবং মনের ওপর দিয়ে গিয়েছে যে শুটিংয়ে নার্ভাস অ্যাটাকের মতো হয়ে হাত-পা কাঁপত মাঝে মাঝে। আর ‘মায়া’-র চরিত্রে অনেকগুলো স্তর রয়েছে। খুব সহজ মহিলা ইনি নন। কেবল বিষন্ন এমনটা নয়। সেই স্তরগুলো খুলতে-খুলতে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে পর্দায় নিয়মিত দেখা যায় না, এই কমপ্লেন কার কাছে করা উচিত? আপনার কাছে, নাকি পরিচালক-প্রযোজককে?
(হাসি) আমরা মনে হয় দুই পক্ষই দায়ী। আমি চ্যালেঞ্জিং রোল না পেলে কাজ করতে চাই না। এমন অফার যেটা ফেরাতে পারব না তেমন কাজই করতে চাই। ২০১৭-এ ‘টোপ’, ২০১৯-এ ‘জয়কালী…’-র পর তেমন ভাল অফার পাইনি। ওয়েব সিরিজের কিছু অফার এসেছিল, করিনি, কারণ ‘চরিত্র’ পছন্দ হয়নি।
২০১৯-এ আপনার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। ডিভোর্সের পর অনেকটা সময় কেটেছে। কী মনে হয় ‘বিয়ে’ ব্যাপারটা আপনার জন্য নয়?
না, আমার সেটা মনে হয় না। ‘বিয়ে’ জিনিসটা তো ভালই। আমার এই প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস আছে। এখনও। হয়তো অনেক মহিলাই এখন আর বিয়ের পথে হাঁটতে চান না, অন্তত যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন এবং যাঁরা সংসারের দায়িত্ব বহন করার ক্ষমতা রাখেন। আর ইন্ডিপেনডেন্ট মহিলাদের নিয়ে একাংশ পুরুষদের সমস্যাও থাকে। কিন্তু আমি আবারও বলব এটা আমার অভিজ্ঞতা নয়। আমার বিয়ে ভাঙার কারণ সম্পূর্ণ আলাদা। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলিনি, বলবও না। তবে এটাও যোগ করতে চাই জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা ক্রমশই অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি। অ্যাডজাস্ট করার ক্ষমতা কমে আসছে।
স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমাদের একসঙ্গে সিন প্রায় নেই। একটা দৃশ্যই রয়েছে। তো সেদিন দারুণ শুটিং হয়েছিল। কোনও স্ট্রেস নেই। লোকে ভাবে দুই নায়িকা থাকা মানেই চুলোচুলি করবে, ট্যানট্রাম করবে, মেকআপ রুম নিয়ে ঝামেলা করবে। আমাদের মধ্যে সেসবের কোনও ব্যাপার নেই (হাসি)।
[আরও পড়ুন: ‘গোলন্দাজ’ দেব থেকে ‘সাইকো’ অনিবার্ণ, হইচইয়ের আসছে একগুচ্ছ সিনেমা-সিরিজ ]