পুজো রিলিজের যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এবারে কোয়েলের লড়াই দেব-জিতের সঙ্গে। তবুও নায়িকা অকপটে সকলকে শুভেচ্ছা জানালেন। ‘বনি’ নিয়ে নানা কথা বললেন কোয়েল মল্লিক। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
অতিমারী-পরিস্থিতি এবং পুজো রিলিজ– এই লড়াইটা তো আপনি অভ্যাস করে ফেলেছেন। কী করে?
পুজো-রিলিজে একটা নস্ট্যালজিয়া কাজ করে সবসময়। আমাদের বাড়ির ক্ষেত্রে পুজোর (Durga Puja 2021) মেজাজটা একটু অন্যরকমের। ছোটবেলায় মেজমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়তাম। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো প্যান্ডেল হপিং বেশি হয়। কিন্তু আমাদের বাড়িতে যেহেতু পুজো হয়, তাই ছোট থেকেই ননস্টপ বাড়িতেই থাকা হত পুজোর সময়। কিন্তু ওই দুপুরের দিকে চারদিনের মধ্যে বাংলা সিনেমা দেখা মাস্ট ছিল। মানে সন্ধিপুজোর সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেরিয়ে পড়তাম সিনেমা দেখতে। এখন পুজোয় যখন আমার ছবি রিলিজ করে আমি ছোটবেলার নস্ট্যালজিয়ায় ফিরে যাই। যেহেতু আমাদের বিশাল বড় পরিবার, জেঠিমারা, দাদারা, কাকিমারা, ভাই-বোনেরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম। ঠিক সেই নস্ট্যালজিয়াই আজও ফিরে আসে।
অতিমারী-পরিস্থিতির কথা বলছি। কারণ, গত বছরও আপনি প্যানডেমিকে রিলিজ দিয়ে ফাইট দিয়েছিলেন। সেবার ‘রক্তরহস্য’ ছিল, এবার ‘বনি’ (Bony Film) আসছে প্রেক্ষাগৃহে।
হ্যাঁ, আমার মনে হয় চ্যালেঞ্জ নিতেই হয়। তখনই জীবনে মজা থাকে। সব মসৃণভাবে সেরা সময়ে হয়ে গেল, সেটা কেন? প্যানডেমিকের আগে পর্যন্ত সেরা সময়ই ছিল কিন্তু। সেই পয়লা বৈশাখ, পুজো বা ক্রিসমাসের ছুটি। আমার মনে হয়, ছবি যদি ভাল হয়, যে কোনও রিলিজ-টাইমই সেরা সময়। তাই জন্য প্যানডেমিকের সময় রিলিজ নিয়ে আমার চিন্তা নেই। এটা নিয়ে কখনওই চিন্তায় ছিলাম না। আমার নিজেরও তো পরিবার আছে, সেই কনসার্ন থেকে বলতে পারি, সাবধানতা ও সুরক্ষা বজায় রেখে সিনেমা হলে এসে ছবিটা দেখুন। হুড়মুড় করে এসে ভিড় জমানোর দরকার নেই। ছবি দেখে সুস্থ থেকে বাড়ি ফেরে যেন সকলে। এটুকু জানানো আমার কর্তব্য মনে করি। প্যানডেমিক পুরোটা চলে যায়নি। ভয় অনেকটা কেটে গিয়েছে। আনন্দ করুন কিন্তু সাবধানতা বজায় রেখে।
এ বারে বড় ব্যাপার হল, ত্রিমুখী লড়াই। দেব-জিতের সঙ্গে ময়দানে কোয়েলের (Koel Mallick) ছবি। এর মধ্যে সঙ্গে মিমি-অঙ্কুশ রয়েছেন।
লড়াই বা যুদ্ধ বড় শক্ত কথা, এ ভাবে না বলাই ভাল। কারণ, আমার মনে হয়, জীবনটা খুব ছোট। সেখানে দর্শকের জায়গা অনেক বড়। আমি চাই লোকজন হল-এ আসুক, ছবি দেখুক। একদম মন থেকে বলছি, চাই সবার ছবি ভাল চলুক। সেই সঙ্গে আমাদের ছবিটাও লোকে দেখুক। যুদ্ধ-লড়াই এগুলো অ্যাবসলিউট জার্নালিস্টিক টার্ম (হাসি)। ফ্রম দ্য বটম অফ মাই হার্ট আই উইশ লাক টু এভরিওয়ান।
[আরও পড়ুন: পরিচালক পাভেলের হাত ধরে এবার রুপোলি পর্দায় আসছে পোস্তা ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার গল্প]
বাকি ছবিগুলোর থেকে ‘বনি’ ঘরানার নিরিখে আলাদা। এটা সাই-ফাই থ্রিলার। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাসের আধারে তৈরি এ ছবি। এটাই কি প্লাস পয়েন্ট হতে চলেছে?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই ছবির অন্যতম বড় ইউএসপি। ওঁর নাম যখন একটা ছবির সঙ্গে কানেক্ট করা হয়, একটা অন্য মর্যাদা পায়। এত বড় একজন লেখক! এই ব্যাপারে আমি খুব লাকি। আই ফিল অনার্ড। ওঁর উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটা এবং আমি তার একটা অংশ। কাজেই বলব, ওঁর নামটাই বিগেস্ট USP ছবির, এক থেকে তিন পর্যন্ত থাকবে ওঁর নামটাই। তারপরে অবশ্যই সাই-ফাই ঘরানার কথা বলব, বাংলায় খুব একটা সায়েন্স ফিকশন হয় না। কাজেই এটা একটু স্পেশ্যাল। একটা উদাহরণ দিই। আমরা যেমন–অনলাইন শপিং করি যখন, একটা জিনিস হয়তো দেখলাম। কিন্তু কিনলাম না। বেরিয়ে গেলাম ওই সাইটটা থেকে। তারপর হয়তো Youtube খুললাম, নিচে দেখি অনবরত সাজেশন্স আসছে। ওই ধরনের জিনিসের, যা আমি কিনিনি অথচ দেখেছি। তার মানে কেউ আমাদের নজরে রাখছে, এমন একটা সিস্টেমে আছি যেখানে আমাদের অবজার্ভ করা হচ্ছে। এই বিষয়টা নিয়েই ছবিটা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর বড় ভূমিকায় রয়েছে ছবিতে। সাই-ফাই তো বটেই, বাকি থ্রিলের জায়গাটায় ইন্টেলেক্ট-এর বড় ভূমিকা রয়েছে। ইন্টেলিজেন্স নিয়ে খেলা করা হয়েছে। যেখানে আবেগের ভাগ অনেকটা। ফাইনালি সন্তানকে বাঁচানোর জন্য বাবা-মায়ের লড়াই দেখা যাবে।
এক ‘বিস্ময় শিশু’কে কেন্দ্র করে গল্প দানা বাঁধবে। এখানে ইমোশনের জায়গাটা কীরকম?
একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়ের আবেগ। তার জীবন নিয়েই প্রশ্ন। সে নরমাল, না অ্যাবনরমাল কোন দিকে যাচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন। এর নেপথ্যে কারও হাত আছে? নাকি এমনিই বাচ্চাটা ওরকম হয়ে গেল? নাকি অ্যাকসিডেন্ট বাই চান্স? এই সব মিলিয়ে আমার কাছে ‘বনি’ খুব স্পেশ্যাল।
আবার আপনি মায়ের ভূমিকায়। এবারে বেশ অভিনয়-নির্ভর মনে হচ্ছে ছবিটা। অঞ্জন দত্ত, কাঞ্চন মল্লিকের মতো অভিনেতারা রয়েছেন।
হ্যাঁ, এই ছবিটা ঠিক ওই নাচ-গান রোমান্সের নয়। ইতালিতে শুটিং হয়েছে ঠিকই, যতটুকু আছে, আমার আর পরমব্রতর সম্পর্কটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তিনটে গান আছে। অনুপম (রায়) খুব সুন্দর গান লিখেছে। সংলাপে যা বলার কথা সেটাই গানে আছে খুব সুন্দর ভাবে। ছবির আরেকটা আকর্ষণ অনুপমের মিউজিক। আর ডেফিনিটলি অ্যাক্টিংয়ের জায়গাটা খুব স্ট্রং। এই প্রথম আমি অঞ্জন দত্ত-র মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলাম! কাঞ্চনদাও টেরিফিক অভিনেতা! পরমব্রত এত সুন্দরভাবে সবক’টা চরিত্র ভেবেছে, কী বলব! একজন প্রফেসর, একজন কেরানি। সবকটা চরিত্র খুব যত্ন নিয়ে তৈরি করেছে। ডিরেকশনের ব্যাপারে অত্যন্ত প্যাশনেট পরমব্রত। ওর ‘হাওয়া বদল’ দেখে আমার খুব ভাল লেগেছিল। এই প্রথম আমি পরমের ডিরেকশনে কাজ করলাম। বেশ কড়াও (হাসি)। পরিচালনার দিকে ওর ঝোঁকটা দুর্দান্ত। আমার মনে আছে ‘হাইওয়ে’-র সময় ও একটা ভিডিও অ্যালবাম ডিরেক্ট করেছিল, তখনই বুঝেছিলাম পরিচালক হিসাবে পরমের প্যাশন কতখানি। খুব স্কিলড একজন ডিরেক্টর পরমব্রত।