সম্পর্কে সিলমোহর। জীবন, কেরিয়ার, নিয়ে অকপট আড্ডায় সোহিনী সরকার। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
কেমন আছেন?
কেমন দেখছ বলো…?
ভালোই তো দেখছি। তা আপনার হাতের আংটিটা কই?
আমি দেখছি, তুমি দেখতে পেলে, তাহলেই হল।
গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে…. বিদেশে বেড়াতেও গিয়েছিলেন…
হ্যাঁ, আমরা কিছু বলিনি, কিন্তু আমাদের নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলছে। দেখো বলার সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না, এখনও সময় আছে। পূর্ব সম্পর্ক আমাকে শিখিয়েছে অত তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই। আর সোশাল মিডিয়াতে ছবি নিয়ে কিছু আলাদা করে বলার নেই। আমরা ভালো আছি। এইটুকুই আমরা বলতে পারি।
দোলের পরপরই আপনারা শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছিলেন?
শান্তিনিকেতন গিয়েছিলাম তবে বেড়াতে নয়, পেশাদার কারণেই। নব নালন্দা স্কুলের একটি শো ছিল। শোভনের গান এবং আমার পাঠ ছিল। এই প্রথম নিজের লেখা স্ক্রিপ্টে শো করলাম।
হ্যাঁ, কিন্তু সবাই জানতে চাইছে এবার বিয়েটা কবে?
সবাইকে জানানোর দায় তো আমার নেই। আমার আত্মীয়স্বজন, শোভনের বাড়ির লোকজন– আমাদের কাছের যারা তারা জানলেই হবে।
ব্যক্তিগত প্রশ্নে বিরক্ত হলেও, আপনি বুঝতে দেন না। আমি আগেও দেখেছি, রাগ, বিরক্তি চট করে সামনে আসতে দেন না। এবং এটা শুধু কাজের জায়গায় নয়, ব্যক্তিগত পরিসরেও। আপনি কি ইন্ট্রোভার্ট?
আমার সব বিরক্তি আমার মায়ের কাছে। এই প্রশ্নটা আমার মায়ের কাছে গিয়ে কোরো। দেখো বাইরের মানুষদের কাছে আমার খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কথা বলা। আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি সেখানে কোনও মানুষই কি সম্পূর্ণরূপে খুশি? আর আমি ইন্ট্রোভার্ট কি না বলতে পারব না, তবে নিজের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করি না। সেটা ছোটবেলা থেকেই শিখেছি। বড়রাই শিখিয়েছে, তোমার দুঃখ তোমারই, সেটা তোমাকেই ডিল করতে হবে।
অনেকেই অভিযোগ তোলেন, সোহিনী ফোন ধরেন না। কাজের ফোনও ধরে না। কী বলবেন?
না, জরুরি ফোন ধরি। কিন্তু কেউ অত্যধিকবার ফোন করলে বুঝতে পারি সেটা জরুরি ফোন নয়। যাদের সঙ্গে কাজ করি তারা কখনওই এই অভিযোগ তুলবে না। অনেক সময় এটাও হয় যে কোনও কাজ ‘না’ করে দেওয়ার পরও অনেকে টানা ফোন করে যান। তখন হয়তো ফোন ধরি না। মুখের ওপর অসম্মান তো আর করা যায় না।
আপনি কি নিজেকে কেরিয়ারিস্ট মনে করেন?
এটার সোজা উত্তর হয় না। কারণ মানুষ তো পালটাচ্ছে। তার জীবনের অভিজ্ঞতা, ব্যর্থতা, সাফল্য, তার দুঃখ, তার হতাশা, সুখ– সব পালটে-পালটে যাচ্ছে। আমি পাঁচ বছর আগে
যতটা কেরিয়ারিস্ট ছিলাম, এখন হয়তো আর ততটা নেই। কাজের আশায় কোথায় কোথায় চলে গিয়েছি। চিনি না, জানি না, একটা ফোন পেয়ে গিয়ে দেখেছি যে গন্ডগোলের। পরিবেশ ভালো নয়। এখন ওইভাবে যাব না। আগে সবটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব। আগের চেয়ে এখন পরিণত হয়েছি। এতদিনে একটা জিনিস বুঝেছি যে আমি মেটেরিয়ালিস্টিক নই। আমি কোনওদিন বাড়ি-গাড়ির জন্য কাজ করব না। হ্যাঁ, অর্থের প্রয়োজন আছে, সংসার চালনা করা বা নিজেকে চালনা করতে। তবে অপেক্ষায় থাকি যে ভালো কাজ হবে, ওয়ার্কশপ হবে, নতুন কিছু করার সুযোগ থাকবে।
[আরও পড়ুন: হাসির মোড়কে বিজয় মালিয়াকে খোঁচা! কেমন হল করিনা-তাব্বু-কৃতীর ‘ক্রু’ সিনেমা?]
প্রথমে জলপাইগুড়ির বীরপাড়া, তারপর খড়দহ তারপর কলকাতা– এই যে আউটসাইডার হয়েও একটা সাফল্যের জার্নি, কীভাবে দেখেন? স্ট্রাগল কতটা ছিল?
‘স্ট্রাগল’ শব্দটা খুব বড়। এত মানুষের নানা স্ট্রাগলের গল্প শুনেছি যে নিজের স্ট্রাগলটা সেখানে কিছুই না। আর মুম্বই বলো, কলকাতা বলো, আউটসাইডার এসে কাজ করেছে। ভালো কাজ করেছে। আমার মনে হয় বহিরাগতদের একটা খিদেও থাকে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অনেকসময় মফস্সল থেকে আসা বহিরাগতদের সেই ‘স্ট্রিট স্মার্টনেস’ থাকে
না। তার জন্যও আমাকেও কথা শুনতে হয়েছে। তারপর মনে হয়েছে, আমি যে অত স্মার্ট নই সেটাই আমার ইউএসপি হোক।
সোহিনী সরকার ভালো অভিনেত্রী এটা সবাই বলে। মেনস্ট্রিমে ‘এ লিস্টার’ পরিচালকদের ছবিতে লিড চরিত্রে তেমন সুযোগ পাননি– এটা মনে হয়েছে কখনও?
এখনও তো সময় আছে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করব। হ্যাঁ, হয়তো স্কুল স্টুডেন্ট করা হবে না বা কলেজ স্টুডেন্ট করা হবে না। অন্য ধরনের চরিত্র করব। কত রকমের চরিত্র তো আছে। বয়স হবে, মুখে রিংক্লস পড়বে, তখন সেই ধরনের চরিত্র এক্সপ্লোর করব। হতাশা আসবে না এমন নয়। আমার হতাশা এলে সোজা সাইকোলজিস্টের কাছে চলে যাই।
আপনি মনোবিদের সাহায্য নেন?
হ্যাঁ, আমি যাই, কথা বলি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলি। শুধু যে নিজের কথা বলি তা নয়, আমার আশপাশের বন্ধুদের কথাও বলি। আমার মাকেও নিয়ে কথা বলি। তখন হালকা লাগে। এটা আমার কাছে কোনও লুকনোর বিষয় নয়।
শীর্ষ রায়ের হিন্দি ছবিতে কে কে মেননের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা?
এই ছবিতে আমাকে মৈথিলি ভাষা বলতে হয়েছে। একজন ল্যাঙ্গোয়েজ ট্রেনার হেল্প করে। কে কে মেনন-কে নিয়ে কী আর বলব। দক্ষ অভিনেতা। খুব সিনসিয়ার। অনেকবার রিহার্সাল করেন। কোনও ট্যানট্রাম নেই। শীর্ষদার প্রথম কাজ কিন্তু কে কে, মন দিয়ে তাকে ফলো করতেন। কিউ দেওয়াতেও ক্লান্ত নেই। সেটে সারাক্ষণ বসে থাকেন।
নতুন বাড়ি নিয়ে জানতে চাইব। প্রিয় স্পেস কোনটা? শুনলাম আপনি নিজেই প্ল্যান করে সাজিয়েছেন?
একেবারে নতুন তো। এখনও প্রিয় স্পেস তৈরি হয়নি। আমি চেয়েছিলাম বাড়িটা বাড়ির মতো হোক। ফলস সিলিং থাকবে না। অন্যান্য আলোর সঙ্গে টিউব লাইটও থাকবে, একটা সুন্দর বারান্দা আছে। গাছ আছে প্রচুর। পাখি আসবে এই আশায় আছি।
আপনার সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কেমন?
নরওয়ে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড গিয়েছিলাম। ভালো লেগেছে খুবই। তবে শীতের জামাকাপড়, বিদেশি টাকা, পাসপোর্ট– এইসব সামলাতেই হিমশিম। মাথার মধ্যে হাজারটা ক্যালকুলেশন। তখন মনে হয়েছে, শান্তি আসলে আমার কঁাকড়াঝোড়ে গিয়ে, শান্তি বোধহয়
ম্যাকলাক্সিগঞ্জে গিয়েই।
নতুন কী ছবি করছেন?
আমি আর বিক্রম ‘অমরসঙ্গী’ নামে একটা ছবি করেছি। প্রেমের ছবি তবে একটা টুইস্ট আছে।
‘অথৈ’-এর রিলিজ পিছিয়ে গেল। নতুন পরিচালক অর্ণ মুখোপাধ্যায়, ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টার অনির্বাণ ভট্টাচার্য। কেমন অভিজ্ঞতা?
‘অথৈ’ নাটকটা খুবই সফল। সিনেমায় আমার দুই কো-অ্যাক্টর– দুজনেই ক্যামেরার সামনে এবং পিছনে কাজ করছে। সহ-অভিনেতার সঙ্গে রিল্যাক্স করে কাজ করা, এটা হয়নি। দু’জনে সেটে সারাক্ষণ গম্ভীর। প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করার সময়েও তাড়া। এতে সমস্যা হচ্ছিল। তবে এটাও বুঝি প্রিপারেশন নিয়ে এভাবে কাজ না করলে হতও না।