‘জুবিলি’-তে বিনোদ দাস ওরফে ‘মদন কুমার’-এর চরিত্রে অভিনয়ের পর যে সাফল্য সেটা কীভাবে সামলাচ্ছেন? অভিনেতা হিসাবে আপনার নতুন জন্ম হয়েছে বলা যায়।
অপারশক্তি: ইটস ভেরি টাফ ওয়ান টু ডাইজেস্ট! ফিল্ম জগতের সিনিয়র এবং অন্যরা আমাকে ফোন করেছেন, মেসেজ করছেন। এই সাফল্যকে ঠান্ডা মাথায় নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে উঠে এটাই প্রার্থনা করি আমি যেন ম্যাচিওরভাবে এটা সামলাতে পারি। সবে ছয় বছর হয়েছে মুম্বই এসেছি। আরও অনেক কাজ করা বাকি! ভাল কাজ করতে চাই। ‘জুবিলি’-র মতো প্রোজেক্ট রোজ রোজ আসে না। আবার কবে তেমন একটা কাজ হবে, জানি না। সবাই প্রশংসা করছেন, বলছেন পরের কাজের দিকে মুখিয়ে থাকব! ডোন্ট প্রেশারাইজ মি গাইজ। আর ভাল কাজ সবসময় প্ল্যান করে হয় না। আমার ধারণা এই কোয়ালিটির কাজ পেতে বা ‘জুবিলি’-র মতো প্রোজেক্টকে ছাপিয়ে যেতে আগামী পাঁচ-ছয় বছর লেগে যাবে।
অশোক কুমারের রেফারেন্সে আপনার চরিত্রটা তৈরি। ওই সময়ের আইকনিক চরিত্রে অভিনয় করার চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
অপারশক্তি: আমি জানি আপনি কোন রেফারেন্সের কথা বলছেন। কিন্তু ‘মদন কুমার’ অনেক চরিত্রের মিশেল। আর যাঁরা অভিনেতা হতে চান, স্টার হতে চান তাদের জন্য ‘মদন কুমার’-এর চরিত্র খুব কঠিন নয়। কিন্তু ‘বিনোদ দাস’-এর চরিত্রের জন্য পরিচালক বিক্রমাদিত্য আমাকে নিজের হাঁটা-চলা, কথা বলে স্লো ডাউন করতে বলেছিলেন। আমাদের ডিকশন কোচ ছিলেন বিকাশ, উনিও সাহায্য করেছেন আমাদের হিন্দি নিয়ে। আমার পাঞ্জাবি অ্যাকসেন্ট বাদ দিতে হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘মোটা মেয়েকে বিয়ে করলি!’, শুনতে হয়েছিল ‘ফাটাফাটি’র পরিচালক অরিত্রকে ]
বিনোদ দাসের চরিত্রে অনেক কিছুই চাপা, তার অ্যাসপিরেশন হোক, বা নিষ্ঠুরতা বা ম্যানিপুলেশন। সেই জায়গাটাতে কী করে পৌঁছলেন?
অপারশক্তি: একটা জিনিস আমাকে সাহায্য করেছিল। আমি নিজে টিভিতে সঞ্চালক হতে চেয়েছিলাম। লোকজনকে বলা, বিভিন্ন অফিসে মেল করা, সব করেও লাভ হচ্ছিল না। এমনকী, অডিশন পর্যন্তও পৌঁছতে পারছিলাম না। প্রায় দু’-তিন বছর ধরে চেষ্টা করে গিয়েছি। তারপর একটা চ্যানেলে কস্টিউম-স্টাইলিস্ট হিসাবে জয়েন করি, যদিও স্বপ্ন ছিল শো হোস্ট করার। অপেক্ষায় থেকে লুকিয়ে-চুরিয়ে অডিশন দিয়ে সঞ্চালক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। এখানে ডায়নামিক্স আলাদা হলেও বিনোদ দাসের মধ্যে একটা স্ট্রিট স্মার্টনেস আছে এবং সিনসিয়ারিটি আছে। আমিও স্টাইলিস্ট হিসাবে খুব মন দিয়ে কাজ করেছি, ফাঁকি দিইনি। সেই সব দিনের ছবি আমার স্মৃতিতে স্পষ্ট। সেলিব্রিটিদের পোশাক পরানো, জুতো পরিষ্কার করে দেওয়া, শু লেস বেঁধে দেওয়া– এই সব যে অনেস্টির সঙ্গে করেছি, সেটা যেমন আমাকে অডিশন ক্র্যাক করতে হেল্প করেছিল, বিনোদের চরিত্রে অভিনয় করতেও সাহায্য করেছে।
আপনি রেডিও জকি, গায়ক, টেলিভিশন হোস্ট, অভিনেতা– অনেক কিছুই পারেন। তবে এবার কি অভিনয়টাই করবেন শুধু?
অপারশক্তি: সেভাবে ভাবিনি। আই ডু ওয়ান থিং অ্যাট এ টাইম। যখন যেটাতে ভাল সুযোগ পাব সেটাই করব। আমি কাল দর্জির কাজও করতে পারি!
আপনি এতটা আনপ্রেডিক্টেবল!
অপারশক্তি: আসলে আমি এত কিছু প্ল্যান করি না। জীবনে যতটুকু অর্জন করেছি সেটা খুব প্ল্যানফুলি নয়। অফকোর্স একটা স্ট্রাকচার থাকে মাথায়, একটা ক্ল্যারিটির প্রয়োজন। কিন্তু খুব প্ল্যান করে সিনেমাও চুজ করিনি। কেউ কি আর স্কুলের বন্ধু বা প্রথম প্রেমকে বিয়ে করে, যতই প্ল্যান করুক। নো, নো…
আপনি খুব জোরের সঙ্গে ‘না’ বললেন (হাসি)।
অপারশক্তি: আই মিন, সেটাই তো সত্যি বেশির ভাগের ক্ষেত্রে? মে বি ইউ আর লাকি সেকেন্ড অর থার্ড টাইম। ওহ ইয়েস… আই লাভ দিজ কনভার্সেশন। (হাসি)
আপনি যে ধরনের কমিক সাপোর্টিং রোল করছিলেন তার থেকে এটা আলাদা। তেমন বেশ কিছু ছবির অফার না করে দিয়ে একটা প্রোজেক্ট যেটা আপনার কমফোর্ট জোনের বাইরে, সেটাতে সময় দেওয়ার জন্য রিস্ক নিতে হয়। কতটা কঠিন?
অপারশক্তি: এই ‘জুবিলি’-র জন্য প্রায় দু’-বছর সময় লাগত। ক্লিন শেভেন থাকতে হত। তাই সিদ্ধান্তটা নিতেই হত। একটা ছবির তো শুটিংও শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু লাকিলি ওটা মাঝপথে বন্ধ হয় কোভিডের জন্য। রিকাস্ট করতে হত, তখন আমিও বললাম, আমার চরিত্রে অন্য কাউকে নিয়ে নিলে ভাল হয়। কারণ ‘জুবিলি’-র ডেট নিয়ে সমস্যা হোক আমি চাইনি। যে তিনটে ছবি ছেড়েছি, তাতে লিড রোল করে বলিউডে একটা কিছু হত কী, হত না, আমি জানি না। কিন্তু এই সম্মান, প্রশংসা পেতাম না, যেটা ‘জুবিলি’ করে পেয়েছি।
রাজকুমার রাও আপনাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন, শুনলাম?
অপারশক্তি: হ্য়াঁ, হি ইজ এ গ্রেট গাই। আমি ওকে খুবই পছন্দ করি। হি হ্যাজ মেড মি এ বেটার অ্যাক্টর, বেটার পার্সন। আমি যদি কারও মতো হতে চাই সেটা রাজকুমার রাও। হি ইন্সপায়ারস মি এ লট!
‘স্টার’ না ‘অভিনেতা’ এই দ্বন্দ্বটা চলতেই থাকে! যদিও বিভেদটা কমছে। আপনি কীভাবে দ্যাখেন?
অপারশক্তি: কমছে, কিন্তু বলিউডে ‘স্টার ওয়ারশিপ’ এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমি অপেক্ষা করে আছি যখন দক্ষ অভিনেতা এবং ‘স্টার’-এর বিভেদটা মুছে যাবে। আমাদের দেশে সেটা হওয়া খুব মুশকিল। আমরা জানি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইউজ করা উচিত, কিন্তু নিজের গাড়ির লাক্সারিটাই আমরা চাই। বেশি গাড়ি মানে বেশি পলিউশন জেনেও আমরা একাধিক গাড়ি কিনি। স্টার-অ্যাক্টর নিয়ে খুব ভাবি না। আমি শুধু ভাল অ্যাক্টর হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। স্টার হওয়া আমার হাতে নেই! এটা দর্শক এবং সময় ঠিক করবে।