একটা ফেলুদা কেন করতে চাইব না! স্পষ্ট বললেন দেব। বোঝা গেল সমস্ত রকম চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তিনি। ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ মুক্তির আগে জুটিতে ধরা দিলেন দেব ও রুক্মিণী। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ টিম এনে ট্রেলার লঞ্চে সব বিতর্কে জল ঢেলে দিলেন, এটা করবেন আগে থেকেই প্ল্যান ছিল?
দেব: এটা প্রেস কনফারেন্সের তিন দিন আগে ভাবা। কিছুদিন আগে আমি টুইট করেছিলাম, আমার টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস লাগে না যেখানে ভালবাসা আছে। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম ‘আমার টার্মস’, ‘আমার কন্ডিশন’ এইসব নিয়ে শুধু শুধু বিতর্ক হচ্ছে। তখন আমি এই প্রস্তাব দিলাম যে তোমরা আমার ব্যোমকেশ প্রোমোট করো, আমরা তোমাদের ব্যোমকেশ প্রোমোট করব। আর একসঙ্গে রিলিজ যখন হচ্ছেই না তখন আর বিতর্ক কীসের।
‘ব্যোমকেশ’ নিয়ে ছবি করবেন এবং নিজেই ব্যোমকেশ হবেন এটা কবে ঠিক করেছিলেন?
দেব: আমি সেভাবে ভাবিনি কখনও। আমাকে কয়েক বছর আগে কেউ এটা অফার করলে আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম। ‘শ্যাডো ফিল্মস’-এর সঙ্গে অন্য একটা ছবির কথা হচ্ছিল। একদিন সকালে আমার বাড়িতে এসে শ্যামসুন্দর বললেন, ‘ব্যোমকেশ করবে’? তারপর থেকে প্রায় রোজ আমাকে এটা নিয়ে সকাল-বিকেল মেসেজ করতেন। খালি বলতেন, ‘তুমি ব্যোমকেশ হলে আমি মাউন্টিং বড় করে দেব।’ আমার কোনও ধারণা ছিল না ‘দুর্গরহস্য’ উপন্যাসটা নিয়ে। সাধারণত ব্যোমকেশকে বাড়ির ভিতরেই দেখেছি। আমার রাইটার শুভেন্দুদাকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “এটা ‘দুর্গরহস্য’ চোখ বন্ধ করে হ্যাঁ বলে দাও।”
তারপর গোটা টিম এসে আমাকে ক্যানভাসটা বোঝায়। আর অভিনেতা হিসাবে গত কয়েক বছর ধরে আমার কাজ করার ধরন বদলে গিয়েছে। আমি বললাম, এটা আমার টিম করবে। সৃজিতের করার কথা ছিল। কিন্তু সৃজিত অন্যভাবে করতে চায়। তারপর আমরা দু’জনেই আলাদা ভাবে কাজটা শুরু করলাম। আর এই প্রেস কনফারেন্সের পর আর কোনও বিতর্ক থাকা উচিত নয়। আমি কাউকে ছোট করার জন্য ব্যোমকেশ করিনি। অভিনেতা হিসাবে আমার খিদে আছে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করার। আমার বডি অফ ওয়ার্ক-এ ব্যোমকেশ-এর বেস্ট গল্পটা থাকুক, আমি চাইব। ব্যোমকেশ হয়ে উঠতে পারলাম কি না সেটা অন্য অধ্যায়।
‘সত্যবতী’ খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও, তার উপস্থিতি অনেকটাই কম। এমন একটা চরিত্র করতে চাইলেন কেন? না কি এমন একটা ছবিতে আপনার উপস্থিতি থাকুক এটা আপনারা দু’জনেই চেয়েছিলেন?
রুক্মিণী: আমি বিরসাকেও এই প্রশ্ন করেছিলাম। পিছিয়ে থাকবে কেন? বিরসা বলল, ‘তুমি সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী, আগে স্ক্রিপ্টটা পড়ো তাহলে বুঝবে।’ স্ক্রিপ্টটা পড়ার পর বুঝলাম, আমাদের দিদারা, বা তারও আগে মহিলারা কিন্তু সংসারটা আগলে রাখত। পুরোটা সামলাত। সেটা খুব ফলাও করে বলা থাকত না, সূক্ষ্মভাবে থাকত। সত্যবতীও তাই। এবং অফকোর্স চিত্রনাট্যে সত্যবতীর চরিত্রটার গুরুত্ব আছে বলেই করেছি। এবার কীভাবে আছে তার জন্য ১১ আগস্ট ছবিটা দেখতে হবে। তবে এই ‘সত্যবতী’ আলাদা করতে চেয়েছিলাম। আমি আমার নিজস্ব কিছু ইনপুট দিয়েছি আর সত্যবতী এখানে সাড়ে আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা।
দেব ‘ব্যোমকেশ’ হচ্ছে এই ঘোষণা হওয়ার পর সমালোচনা হয়েছিল। ট্রোলিংও হয়েছে। সবটা হ্যান্ডল করে ‘ব্যোমকেশ’ হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিলেন?
দেব: ট্রোলিং ভাল লাগে আমার। নিজেকে ইন্সপায়ার করি আমি। মোটিভেট করি। আর অনেকটা পথ বাকি। যারা ট্রোল করে তারা সংখ্যায় কম। বেশির ভাগ দর্শক আমাকে ভালবাসে। না হলে ‘প্রজাপতি’, ‘টনিক’, ‘কিশমিশ’, ‘গোলন্দাজ’, ‘চাঁদের পাহাড়’ বা অন্য ছবি হিট করত না। আর সোশ্যাল মিডিয়া খুব অ্যাগ্রেসিভ। আগেই মানুষ রিজেক্ট করে দেয়। তাই নিজেকে তেমনভাবে তৈরি করেছি। সবাই যদি সবসময় ভাল বলে তাহলে ঘুম থেকে উঠে নতুন কিছু করার ইচ্ছেই চলে যাবে। আমি জলের মতো হতে চাই। যে পাত্রে দেবে সেই আকার ধারণ করব।
এই চরিত্রে অভিনয় করার জার্নিটা কেমন ছিল?
দেব: ব্যোমকেশ একটা আইকনিক চরিত্র। আমার আগে এতজন অভিনেতা এই চরিত্রে পারফর্ম করেছেন। ‘চাঁদের পাহাড়’-এ ‘শংকর’-এর কোনও রেফারেন্স ছিল না। এক্ষেত্রে তা নয়। ‘উত্তমকুমার’ থেকে শুরু করে আজকের ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্য’। আমি জানি, আই অ্যাম টেকিং বিগেস্ট চ্যালেঞ্জ। বাট আই ওয়ানটেড টু টেক দিস চ্যালেঞ্জ। আমি প্রমাণ করতে চাই, আজকের জেনারেশনে ডিকশন-এ কম নম্বর পেলেও, ‘দেব’ খারাপ অভিনেতা নয়। দেব ও প্রমাণ করে দিতে পারে, প্রিমিয়াম নম্বর পেয়ে পাস করতে পারে। এই চরিত্রের জন্য অ্যাক্টিং ক্লাস, ডিকশন ক্লাস, কীভাবে হাঁটব, কীভাবে তাকাব চশমা পরে– সবটা রিহার্স করেছি।
কোথাও ‘চিড়িয়াখানা’-য় উত্তমকুমারের মোটা ফ্রেমের চশমার সঙ্গে আপনার লুকের মিল রয়েছে!
দেব: হ্যাঁ, তাছাড়াও চোখটা, হাসিটা…। ‘চিড়িয়াখানা’ দেখতে গিয়ে লক্ষ করেছি, উত্তমকুমার অনেক জায়গাতে হেসেই দর্শকদের মন জয় করেছেন। আমি ওটা মাথায় রেখেছিলাম। ইফ দেয়ার ইজ এনি প্রবলেম, আই জাস্ট হ্যাড টু স্মাইল! আর আমার চারপাশে ট্যালেন্টেড অভিনেতারা রয়েছে, দ্যাট ইনক্লুড্স রুক্মিণী। বান্ধবী বলে বলছি না। অম্বরীশ রয়েছে, আর থিয়েটারের অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে। এই ছবিতে বাছাই করা ভাল পরিচালক, ভাল অভিনেতা, ভাল ডিওপিদের নিয়ে কাজ করেছি। সেফ খেলতে চাইনি।
[আরও পড়ুন: খাগড়াগড় বিস্ফোরণের স্মৃতি উসকে প্রকাশ্যে ‘রক্তবীজ’-এর ঝাঁজালো মোশন পোস্টার, দেখুন]
আপনার কাছে সেরা ব্যোমকেশ কে?
দেব: আমি সত্যি কথা বলব, সব ছবি পুরোটা আমি দেখিনি। তবু আমার মনে হয়, এই জেনারেশনের কথা যদি ধরা হয়, আবির বড় পর্দার জন্য সেরা ব্যোমকেশ, আর ওয়েব সিরিজে সেরা অনির্বাণ। দু’জনেই দারুণ অভিনেতা, আর দু’জনই নিজস্ব কিছু দেয়।
রুক্মিণী: আমি অরিন্দমদার (শীল) ব্যোমকেশ দেখেছি। আমার কাছে আবির আর সোহিনী।
এরপরের চ্যালেঞ্জ কী হতে চলেছে? দেব কি এবার ‘ফেলুদা’ হবে?
দেব: বললাম না, অভিনেতা হিসাবে খিদে আছে! আমি সারাজীবনে একটা ব্যোমকেশ
করতে চেয়েছিলাম, করেছি। একটা ‘ফেলুদা’ কেনই বা করতে চাইব না! সুযোগ পেলে ‘ফেলুদা’ না করার কিছু নেই। তার মানে এই নয় যে, কালই করে ফেলব! এখন তো অনেকদিন কাজ করা বাকি। হয়তো কখনও বাবুদাকে বলব যে, আমিও করতে চাই।
আপনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, আপনার জীবনে একটাই সত্য! কাজ, জীবন সব মিলিয়ে, রুক্মিণীই একমাত্র সত্যি?
দেব: আমি একটাই ব্যোমকেশ করব, তাই আমার একটাই ‘সত্য’!
আহা, ‘সত্য’ মানে তো শুধুই ‘সত্যবতী’ নয়…
দেব: আরে আমি যে ভাবে লিখেছি সেটাই তো বলব। রথ দেখা কলা বেচা– দু’টোই হয়ে গিয়েছিল একটা লাইনে। ওর জন্মদিনের শুভেচ্ছা আর ছবির প্রোমোশন।
‘সত্যবতী’-র চরিত্রে অভিনয় করাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
রুক্মিণী: এটা নিয়ে এতই চাপে ছিলাম বলার নয়। ‘বিনোদিনী’-র পর আমাকে ওয়েট গেন করতে হয়। এমনিতে আমি খুবই রোগা। আমার মেটাবলিক রেট খুব হাই। মহিলাদের জন্য ওয়েট গেন একটা লম্বা প্রসেস। নানা হরমোনাল ইমব্যালান্স হতে পারে। তার ওপর সাড়ে-চার কেজির প্রস্থেটিক বেলি। প্রথমে খুব এক্সাইটেড ছিলাম। কিন্তু শুট করতে গিয়ে সকাল ছ’টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ওইভাবে কাজ করা সহজ ছিল না। অত গরমে এক্সট্রা ওজন নিয়ে টানা দাঁড়িয়ে কোমরে ব্যথা, হাঁটু কাঁপছে। সন্তান জন্ম দিইনি ঠিকই, কিন্তু সব রকমের শারীরিক অস্বস্তির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। লুক টেস্ট করার সময় তো বুঝিনি। সারাদিন ওই ভাবে, টয়লেট যেতেও সমস্যা। পেট ধরে ধরে হাঁটতে হয়েছে রীতিমতো। নিচু হতে পারছিলাম না। ইট ফেল্ট অ্যাজ ইফ আই অ্যাম লিটারালি ক্যারিইং এ বেবি!
এই ছবিতে ‘ব্যোমকেশ’ ধূমপান করেনি, সেটা কি শুধুই সিনেমার খাতিরে না কি অভিনেতা-রাজনৈতিক দেবের যে ইমেজ সেটাও কারণ?
দেব: হ্যাঁ, আমার এটা দায়িত্ব আছে। পলিটিশিয়ান বলে নয়, অভিনেতা দেবের ফ্যান অনেকে। অনেক বাচ্চারা আমার ফ্যান, মায়েরাও রয়েছে সেই তালিকায়। বাইক নিয়ে সিন থাকলে আমি হেলমেট পরব, আমার শর্ত দেওয়া থাকে। এটা হয়তো বিশাল কোনও অবদান নয়, কিন্তু আমি আমার মতো করে চেষ্টা করি। তাছাড়া সত্যবতী এখানে গর্ভবতী, সেখানে আমার সিগারেট খাওয়া মানায় না! আমরা জেনেছি যে, ওই সময় জার্মানিতে রিসার্চ শুরু হয় যে ধূমপান গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষতি করতে পারে। সংলাপেও সেটা আছে।
ছবিতে তো সত্যবতী প্রেগন্যান্ট, রিয়াল কাপলের বিয়ে কবে? না কি চুপি চুপি এনগেজমেন্ট সেরে ফেলেছেন, কেউ জানে না!
রুক্মিণী: এই এক্ষুনি লাঞ্চ ব্রেক দাও। টা টা, ইন্টারভিউ শেষ! (হাসি)
দেব: আরে আমরা ভাল আছি, সুখে আছি। সেটাই তো সবচেয়ে ইমপর্ট্যান্ট! তাই না!
এই উত্তর তো সেই কবে থেকে শুনেই চলেছি!
দেব: আচ্ছা এই যে ভাল আছি এটা কি সহ্য হচ্ছে না তোমাদের! ভাল থাকাই তো
সবচেয়ে জরুরি!
রুক্মিণী: এবং এটাই একমাত্র সত্য! (হাসি)