শম্পালী মৌলিক: পুজো আসতে বাকি আর সাতদিন মাত্র। ছবি রিলিজের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আগে ব্যস্ততার মাঝেও ধরা দিলেন দেব। পুজোর ছবি নিয়ে এবারে তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী? হাসতে হাসতে অভিনেতা-সাংসদ বলছেন, “আমার কাজ হচ্ছে কাজ করে যাওয়া। এত ভাবার সময় পাই না– কী হবে, কেমন হবে, দর্শকের কতটা পছন্দ হবে এটা নিয়ে। নিশ্চয়ই সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে কাজটা মন দিয়ে করতে হবে। সেটাই আমার কাজ, যা আমি করেছি। ‘বাঘা যতীন’ নিয়ে এখনও অবধি যা যা বেরিয়েছে, মানুষের আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছে।” কিন্তু ফেস্টিভ-মুডের আবহে দেশাত্মবোধক ছবি দেখতে লোকজন কতটা আগ্রহী হবে? কতটা গ্রহণ করবে? দেব স্পষ্ট বলছেন, ‘যাঁদের জন্য এই স্বাধীন দেশ, আমরা এই উৎসব এত ভালোভাবে উদ্যাপন করতে পারছি, এত খুশিতে আছি, এটার জন্য কত মানুষের আহুতি আছে! আজকে তাঁদের আমরা উদ্যাপন করব না? দুর্গাপুজো বাঙালির সেরা উৎসব। এই সময় বিপ্লবীদের সেই অবদান সেলিব্রেট করতে চাই। একটা বার্তা দিতে চাই, তাঁদের অবদান নিয়ে। তাঁদের আত্মত্যাগ নিয়ে।’ আসন্ন ‘বাঘা যতীন’ ছবির সবচেয়ে বড় তারকা দেব-ই। ছবিতে আর স্টার বলতে রয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। সেখানে দেবের লড়াই কিছুটা কঠিন হয়ে গেল না কি? “আমার মনে হয় সুদীপ্তাদি, ইজ আ ফ্যান্টাসটিক অ্যাক্টর, অতটা হয়তো সুযোগ পান না। আমরা সুদীপ্তাদির জন্য হয়তো আলাদা করে চিত্রনাট্য ডিজাইন করতে পারি না। হ্যাঁ, আমার দায়িত্ব এই ছবির ক্ষেত্রে বেশি। চিরকাল আমি সেটাই করেছি। ‘চঁাদের পাহাড়’-এ কাকে চিনতেন? আমি-ই তো শংকর ছিলাম, অফকোর্স বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটা ছিল। সেরকমই একজন স্টারকে দায়িত্ব নিতেই হয়। সুপারহিট হলে কৃতিত্ব সবাই শেয়ার করে। ফ্লপ হলে স্টারের ঘাড়েই পড়ে যে, অমুকের ছবিটা ফ্লপ। আমার ভালোই লাগে। এই ছবির সবচেয়ে বড় স্টার বাঘা যতীন নিজে। নামটাই যথেষ্ট।” আরও তিনটে বাংলা ছবি আছে পুজোয়, সবক’টাই হেভিওয়েট। লড়াই অনুভব করছেন না? “আমার কোনও ছবি রিলিজ কি আজ পর্যন্ত সহজ হয়েছে (হাসি)? ‘টনিক’ মুক্তি পেয়েছিল, আমরা হল পাইনি। তখন ‘এইট্টি থ্রি’ এসেছিল। কিন্তু ‘টনিক’ হিট করেছিল। ‘প্রজাপতি’-র সময়েও শো পাচ্ছিলাম না, তবু আমরা লড়েছিলাম। মানুষ যেটা দেখবে, সেটাই আমাদের দেখাতে হবে। সবাই তাদের মতো করে ছবি বানিয়েছে, এবার দর্শক দেখুক। চারটে চার রকমের ছবি। আমার মনে হয়, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে এই স্কেলে আগে বাংলা ছবি হয়নি। উইথ ডিউ রেসপেক্ট বলছি, বাকি সবক’টা সিক্যুয়েল বা প্রিক্যুয়েল ছিল। আমার ছবি নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।
[আরও পড়ুন: হামাস জঙ্গির গুলিতে খুন বোন-জামাই! ‘আমিও হুমকি পাচ্ছি’, গা ঢাকা দিয়ে বার্তা মধুরার]
এবার দর্শক দেখবে। ভালো লাগলে সবাইকে বলবে। না লাগলে বলবে কী খামতি আছে।” বাঘের সঙ্গে বাঘা যতীনের লড়াই সুবিদিত। ট্রেলার দেখেই বোঝা যায় সেই সিকোয়েন্সের গুরুত্ব কতখানি। কেউ বলেন তারপর বাঘা যতীন একবছর শয্যাশায়ী ছিলেন, কেউ বলেন ছয় মাস, নানারকম কথা প্রচলিত। কিন্তু এই দৃশ্য নির্মাণের ক্ষেত্রে পর্দায় নায়ক-প্রযোজক দেবের সবচেয়ে বড় লড়াই হল ভিএফএক্সের সঙ্গে। প্রশ্ন করতেই দেব হেসে বললেন, ‘কারেক্ট। ছবিটা দেখুন আগে। আমরা সমস্ত বিভাগ মিলে চেষ্টা করেছি সেরাটা দিতে। তিনটে সংস্থা মিলে ভিএফএক্স করেছে। তারা বেস্ট দিয়েছে। আমি তাদের কাজে খুব খুশি। এবার দেখুন, যত টাকা খরচ করবেন, তত ভালো কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ হবে। দিনের শেষে ছবি চললে, দর্শক দেখলে, ভরসা বাড়বে। আমরা তখন এরচেয়ে বেশি গ্র্যাঞ্জার নিয়ে আসব, এর চেয়েও ভালো সিজি নিয়ে আসব। এটা আমাদের দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। দর্শক এই ছবিটাকে গ্রহণ করলে, টাকা উঠে এলে, এর পরে যে ছবিটা করব– বাংলার শ্রেষ্ঠ ছবি হবে সবদিক থেকে, কথা দিচ্ছি। তার জন্য এই ছবিটা চলতে হবে।” অরুণ রায় পরিচালিত এই ছবিতে দেব নতুন নায়িকা সৃজা দত্তকে সুযোগ দিয়েছেন। অডিশনের মাধ্যমেই তিনি নির্বাচিত হন। যিনি বাঘা যতীনের স্ত্রীর চরিত্রে রয়েছেন। দেব নিজে ওজন বাড়িয়েছেন, হঁাটাচলায় পরিবর্তন এনেছেন বাঘা যতীনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে। এবং পিরিয়ড পিস বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে আনতে যথাসাধ্য করেছেন।
পুজোর মুখে সৃজিত মুখোপাধ্যায়-অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সোহিনী সরকার ও রাহুলের ব্যোমকেশ সিরিজ আসছে। আপনি কি শুভেচ্ছা জানালেন? “অফকোর্স, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি চাই ওদের ব্যোমকেশ ভালো করুক। ওরা ‘হইচই’-এর জন্য বানিয়েছে। আমি আমার মতো করে বানিয়েছিলাম, সেটাও যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এবার লোকে বলছে যে, ‘বাঘা যতীন’ এই স্কেলেও হতে পারে! একসময় লোকে বলছিল, কেন প্যান ইন্ডিয়া রিলিজ করছি? কেন হিন্দিতে রিলিজ করছি? আজকে লোকে বুঝতে পারছে এই ছবিটা সত্যি প্যান ইন্ডিয়ার যোগ্য। বাংলাটা বৃহস্পতিবার মুক্তি আর হিন্দি আসবে শুক্রবার।’ এরপর আসবে দেবের ‘প্রধান’ ডিসেম্বর মাসে। তারপরে তিনি কিছুটা সময় নিতে চান পরের প্রোজেক্টের জন্য। অভিনেতা হেসে বললেন, “আগে ‘বাঘা যতীন’-এর টেনশনটা যাক। পরের বছর প্ল্যান করব, এক-দেড় মাসের গ্যাপ নিয়ে।” বোঝা গেল আপাতত দেবের পাখির চোখ পুজো-রিলিজ।