রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বক্তার নাম যোগিন্দর শর্মা। যাঁকে এতদিনেও ভুলতে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট (Team India)। কে ভুলেছে, ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে মিসবা-উল-হকের বিরুদ্ধে করা তাঁর শেষ ওভার? কে ভুলেছে, তাঁকে মারা মিসবার সেই কালান্তক স্কুপ এবং টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিশ্বজয়? যোগিন্দর ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন অনেক দিন। বর্তমানে তিনি হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি। কিন্তু ফের এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাক যুদ্ধের আগে স্থির থাকতে আর পারলেন কোথায়? শনিবার দুপুরে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক দীর্ঘ ফোন সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে, নিজের আটত্রিশতম জন্মদিনে…
প্রশ্ন: শুভ জন্মদিন।
যোগিন্দর: (হাসি) ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: রবিবার ম্যাচ দেখছেন তো?
যোগিন্দর: দেখব না? কাজের চাপ আছে প্রচুর। আগে নীল জার্সিতে দেশের সেবা করতাম, এখন খাকি পোশাকে করি (হাসি)। কিন্তু তাতেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যখন, দেখতে তো হবেই।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup) যতবার আসে, যত বার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হয়, আপনাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়ায় মিডিয়া। ফোন করতে থাকে। ২০০৭ সালে পাকিস্তান ফাইনালে সেই অবিস্মরণীয় শেষ ওভার বারবার মনে পড়ে না তখন? নতুন করে তৃপ্তি পান না?যোগিন্দর: পাই। জোহানেসবার্গ ফাইনালে মিসবা-উল-হককে করা সেই শেষ ওভার মনেও পড়ে। কী জানেন, দেশের হয়ে প্রচুর খেলেছি আমি। ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেছি। কিন্তু মিসবাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে করা ওই একটা ওভার আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে পুরো।
প্রশ্ন: শেষ ওভারের আগে কী কী হয়েছিল, মনে আছে?
যোগিন্দর: হুবহু। শেষ ওভার করার মতো দু’টো বিকল্প ছিল ধোনির হাতে। আমাকে আনা, নইলে হরভজনকে। হরভজন তার আগের ওভারে মার খেয়ে গিয়েছিল। আমার আত্মবিশ্বাস সে দিক থেকে ভাল ছিল।
প্রশ্ন: ধোনি কী বলেছিলেন তখন?
যোগিন্দর: ধোনি বলেছিল, যোগি তুই পারবি আমি জানি। কিন্তু মনে রাখিস, হারলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। জিতলে আমরা সবাই মিলে আনন্দ করব। উত্তরে বলেছিলাম, হারব কেন? জিততে হলে মিসবাদের করতে হবে ১৩ রান, আর আমাদের লাগবে একটা উইকেট। জিতব আমরাই।
প্রশ্ন: সেই ধোনি এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিদের মেন্টর।
যোগিন্দর: দারুণ সিদ্ধান্ত। ধোনি একটা জিনিস দারুণ পারে। সেটা হল, ম্যাচ চালানো। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার, সেটা ধোনির চেয়ে বেটার কেউ জানে না।
প্রশ্ন: পাকিস্তান তো তা হলে রবিবার আরও চাপে পড়ে গেল।
যোগিন্দর: পাকিস্তান এমনিই চাপে থাকবে। আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ওরা আমাদের একবারও হারাতে পারেনি। যতই যা বলুক, সেই ইতিহাস ওদের রক্তাক্ত করবেই। তা ছাড়া ভারত আর পাকিস্তান, দু’টো টিম দেখুন। ভারত অনেক এগিয়ে। আরে, আমাদের যা রিজার্ভ বেঞ্চ প্লেয়ার আছে, তিনটে আলাদা টিম হয়ে যায়। আর তিনটেই আন্তর্জাতিক মানের। ইতিহাস, স্কিল– সর্বত্রই পাকিস্তান আমাদের পিছনে।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম বলছেন, এবার পাল্টাবে ইতিহাস। মহম্মদ আমের বলছেন, পাকিস্তানের ব্যাটিং ভারতের চেয়ে এবার ভাল। পেস বোলিংয়েও পাকিস্তান এগিয়ে?
যোগিন্দর: বলছে? (হাসি) বলতে দিন। আসলে বাবর পাকিস্তান ক্যাপ্টেন। ওকে তো বলতেই হবে এ সব। আর কথাটা ওরা চিরকালই একটু বেশি বলে। আমার প্রশ্ন হল, ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি ওরা খেলল কোথায়? ঘরে বসে অনেক কিছুই ভাবা যায়, অনেক বড় বড় কথা বলা যায়। কিন্তু ভারতের শক্তি ওরা জানে তো?
প্রশ্ন: তার মানে আপনার মতে, ভারত আজ জিতছে? বিশ্বকাপ রেকর্ড ১৩-০ হচ্ছে?
যোগিন্দর: জেতা উচিত। টি-টোয়েন্টিতে আগাম কিছু বলা যায় না। একটা ওভারই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই জিতবেই বলব না। কিন্তু ভারত অবশ্যই অনেক এগিয়ে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, বিরাটের এই টিমটা বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা কতটা ধরে? আপনাদের বিশ্বজয়ের পর মাঝের চোদ্দো বছর আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিনি।
যোগিন্দর: ধরে ক্ষমতা। আমি বলব, ভারতের এবারই বিশ্বকাপ জেতার বেশি চান্স কারণ খেলাটা উপমহাদেশে হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলেছে বিশ্বকাপের আগে। ব্যাটিং-বোলিং দু’টোই দারুণ। স্পিনাররাও অসাধারণ খেলছে। প্লাস ধোনি আছে। ক্যাপ্টেন কোহলির সমস্যা হলে ধোনি সামলে নেবে।