‘দ্য ট্রায়াল’-এ কাজলের স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে যিশু সেনগুপ্তকে। একান্ত আলাপচারিতায় অভিনেতা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
বলিউডে, সিনেমার পর্দায় আপনি ভাল ‘স্বামী’-র চরিত্র পেয়ে থাকেন অথচ ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্মে বেশিরভাগ চরিত্র গ্রে শেডের! এই ট্রেন্ড কেন?
যিশু সেনগুপ্ত: এই রে, এটা তো ভেবে দেখিনি! সতি্যই তো তাই। ইনফ্যাক্ট ওটিটিতে যেগুলো করব সেগুলো সবকটাই গ্রে-শেডের। এটা সত্যিই অদ্ভুত। তবে ‘দ্য ট্রায়াল’-এর ক্ষেত্রে বলব, প্রতিটি চরিত্রই তাই। আর আমি যদি নিজেকে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট বলি সেটা ঠিক হবে না। আমার অন্তর জানে যে কোনও না কোনও পরিস্থিতিতে আমি এমন কিছু করেছি যেটা একেবারে সাদা-কালো নয়।
ভাল ‘স্বামী’-র চরিত্র করতে করতে কখনও মনে হয়নি, আর নয়!
যিশু সেনগুপ্ত: এবার ভেবেছিলাম, আর এমন চরিত্র করব না। আমাকে যখন ডাকল, তখন পুরো স্ক্রিপ্টটা তো জানি না। তারপর সুপর্ণ-র সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম দারুণ চরিত্র। আর যখন শুনলাম কাজল আছে, না করার প্রশ্নই ওঠে না। আই অ্যাম আ হিউজ ফ্যান অফ কাজল। ইনফ্যাক্ট যখন দেখা হল আমি কাজলকে বলেছিলাম, তোমার মায়ের সঙ্গে কাজ করেছি। কাজলের উত্তর, ‘হঁ্যা, আমি জানি, মা সারাক্ষণ তোমাকে গুড বয় বলে। ইউ আর এ ম্যান, নট এ বয়।’ সেটে আমাকে খেপাত, প্লিজ কল দ্য ‘গুড বয়’।
বড় পর্দার ‘গুড হাজব্যান্ড’, কাজলের ‘গুড বয়’! ব্যক্তিগত জীবনে আপনি নিজেকে গুড হাজব্যান্ড বলবেন?
যিশু সেনগুপ্ত: ওহ! আই অ্যাম আ ব্যাড হাজব্যান্ড। ফ্র্যাঙ্কলি বলছি। আই বিলিভ আই অ্যাম নট আ গুড ফাদার অলসো। কারণ পরিবারকে যে সময়টা দেওয়া উচিত আমি দিতে পারিনি। এটা কী জানো তো, তুমি সবচেয়ে কাকে ভালবাস? নিজেকে? না কি তোমার পরিবারকে? এই প্রশ্নটা যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করি তার সৎ উত্তর হল, আমরা সবচেয়ে বেশি নিজেদের ভালবাসি। আবার এটাও সত্য়ি, নিজেকে ভাল না বাসলে অন্যদের ভালবাসা যায় না।
১৪ জুলাই ডিজনি হটস্টার-এ আসছে ‘দ্য ট্রায়াল’। ‘দ্য গুড ওয়াইফ’ থেকে অ্যাডাপ্টেড হলেও আপনার চরিত্রটা সম্পর্কে জানতে চাই।
যিশু সেনগুপ্ত: আসলে ‘দ্য গুড ওয়াইফ’-এর থেকে এই শো-টা খুবই আলাদা। ওখনকার আইনি ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের মেলে না। আমাদের সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ অনেক আলাদা। সিরিজের কাঠামোটা এক। তবে চরিত্র, সম্পর্ক এবং ক্রাইসিস বদলে গিয়েছে এখানে।
কাজলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন।
যিশু সেনগুপ্ত: প্রথমে আমি একটু ভয়ে-ভয়েই ছিলাম। মানে বলতে চাইছি, খানিকটা অ্যাপ্রিহেনসিভ ছিলাম। কিন্তু প্রথমদিন ও যেভাবে এসে আমার সঙ্গে কথা বলল যেন কতদিনের চেনা। অ্যাকচুয়ালি চিনত। কারণ, তনুজা আন্টির থেকে শুনেছে। আর আমার সঙ্গে কাজল কাজ করছে শুনে তনুজা আন্টি খুব খুশি হয়েছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা করতে তিনি সেটেও এসেছিলেন। তাতে আবার কাজলের হিংসেও হত। সব মিলিয়ে সুন্দর একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছিল। ইট ওয়াজ গ্রেট ওয়ার্কিং উইথ হার।
ট্রেলারে একটা থাপ্পড় মারার দৃশ্য আছে।
যিশু সেনগুপ্ত: হ্যাঁ, আর বিহাইন্ড দ্য সিন আমরা হাসতে হাসতে মরে গিয়েছিলাম প্রায়। ইট ওয়াজ ফান ওয়ার্কিং উইথ হার। কাজল ইজ নট ইনসিকিওরড। আমি অনেক বড় নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছি। নাম নিতে চাই না। তারা হয়তো নিজেদের ক্লোজ-আপ দিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে। পরে আমার ক্লোজ-আপ দেখার পর আবার নিজেদের ক্লোজ-আপ দিয়েছে। আর কাজলের বক্তব্য হচ্ছে, ‘ইউ ডু বেটার, গুড ফর মি। তুমি ভাল পারফর্ম করলে, আমিও ভাল পারফর্ম করব।’ আর আমরা দু’জনেই স্পন্টেনিয়াস অভিনেতা। সো আমরা দু’জনেই জানি, ইমপ্রোভাইজেশন হবে। তবে সুপর্ণ আমাদের সেই ফ্রিডম দিয়েছিল।
তনুজা আর কাজল কোথায় এক, কোথায় আলাদা?
যিশু সেনগুপ্ত: ওরা দু’জনেই খুব একরকম। অভিনেতা হিসাবে যদি দেখতে যাই, দু’জনেই খুব ন্যাচারাল আর স্পন্টেনিয়াস। আর ডিফারেন্স বোধ হয় বয়স। বিকজ বোথ আর সুইটহার্ট।
২০১৯-এর পর থেকে আপনার ফিল্মোগ্রাফিতে বাংলা ছবির সংখ্যা কমেছে। এই শিফট-কে কীভাবে দেখবেন?
যিশু সেনগুপ্ত: ইট জাস্ট হ্যাপেন্ড। কনশাসলি কিন্তু করিনি। একটা করতে গিয়ে আরেকটা এসেছে, তারপর আরও একটা। এইভাবেই হয়েছে। আমার চরিত্র পছন্দ হয়েছে, করেছি। আবার এটাও ঠিক, গত দুই-আড়াই বছরে বাংলায় ভাল স্ক্রিপ্টও পাইনি।
[আরও পড়ুন: ‘নবনীতাকে সিঁদুর পরানোর সময়ে হাত কাঁপছিল…’! জিতুর পুরনো ভিডিও নিয়ে শোরগোল]
নাকি অনেকে ভাবছেন, আপনি অ্যাভেলেবল নন?
যিশু সেনগুপ্ত: হ্যাঁ, এটা হয়ে গিয়েছে। যাঁরা আমাকে বাংলায় কাজ দিতে চান না তঁারা বলছেন, যিশুকে পাওয়া যায় না। আজকে পরমব্রত তো করছে। কী করে করছে? আমি তো সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভও নই, আমার অন্য কাজের কথা লোকে জানছে কী করে আমি জানি না। কিন্তু এখানে এটা চাউর হয়ে গিয়েছে, যিশুকে পাওয়া যাবে না। যারা এটা বলছে তারা আমাকে এখানে চায় না বা নিজেদের ছবিতে চায় না।
তবে পুজোতে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘দশম অবতার’-এ দেখা যাবে আপনাকে?
যিশু সেনগুপ্ত: হ্যাঁ, যদি পুজোতে মুক্তি পায়। প্রায় চার বছর পর আবার ওর সঙ্গে কাজ করতে চলেছি। মাঝখানে একটা ছবি ছিল যেটা আমি করতে চাইনি, কিন্তু এখন আবার একসঙ্গে কাজ করছি। অ্যান্ড ইটস এ গ্রেট রোল। শুটিং শুরু হবে হয়তো জুলাইয়ের শেষে।
বাংলা ছবি করা মিস করেন?
যিশু সেনগুপ্ত: ভাল চরিত্রও তো পেতে হবে। ‘পালান’ করলাম রিসেন্টলি।‘অভিযান’-এর পর একটা দেড় বছরের গ্যাপ ছিল। সেই সময় কেউ অ্যাপ্রোচও করেনি আমাকে। একটা-দু’টো এসেছে, আমার পছন্দও হয়নি। এখন এমন একটা অফার আছে যেটা হয়তো করব না। আসলে এই ধরনের কাজ করার মতো স্পেসে আমি নেই। বাইরে এত ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করার ফল বোধহয়। অ্যান্ড আই লাভ প্লেয়িং অ্যান্টাগনিস্ট। কারণ হিরোর থেকেও বেশি অভিনয়ের সুযোগ থাকে। নানা স্তর থাকে। ‘দ্য ট্রায়াল’ তেমন একটা শো। এরপর করিশ্মা কাপুরের সঙ্গে একটা শো করলাম– আমি হলফ করে বলতে পারি, এমন চরিত্রে আমাকে আগে কেউ দ্যাখেনি। একটা হিন্দি শোয়ের কথা চলছে, হলে খুব ভাল হয়। যেখানে আমিই হিরো, আমিই ভিলেন। থিয়েটারের প্রেক্ষাপটে। পরিচালকও থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ডের। দেখা যাক।