‘কড়ক সিং’-এর প্রচারে শহরে এসেছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী (Pankaj Tripathi)। ব্যস্ততার ফাঁকেই কথা বললেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
দু-দুটো জাতীয় পুরস্কার, সিনেমার লম্বা লাইন-আপ, পঙ্কজ ত্রিপাঠীর কোনও ডেট নেই– একজন অভিনেতা হিসাবে আর কী চান?
আমি যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি, আমার এবার ছুটি চাই। খুব ক্লান্ত লাগছে এবার। আর এত বেশি কাজ করলে, কোয়ালিটি ভালো হবে না। আমি সেই ভাবেই প্ল্যান করেছি যাতে দু-তিন মাস পর, দুটো কাজের মধ্যে বিরতি থাকে আর আমিও একটু নিশ্বাস নিতে পারি।
আপনি কী একই ধরনের চরিত্র বেশি পাচ্ছেন?
না, তা নয়। চরিত্র নানা ধরনের আসছে। কিন্তু বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৪০ দিন কাজ করছি। এটা টানা করে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। দুটো কাজের মধ্যে অন্তত ১৫-২০ দিনের গ্যাপ হলে ভালো হয়। এই ভাবে অভিনয় করা যায় না। ‘স্ত্রী ২’-র শুটিং ছেড়ে এসেছি। ‘কড়ক সিং’ প্রোমোশন শেষ করে আবার ফিরে যাব ভোপালে। দিনরাত শুটিং, ট্র্যাভেল করে শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছে। ভাবতেই পারিনি যে কলকাতা আসতে পারব। কোনও মতে এসেছি।
ব্যক্তি পঙ্কজ ত্রিপাঠী অভিনেতা পঙ্কজ এবং তার চরিত্রকে প্রভাবিত করে? নাকি যে চরিত্রে অভিনয় করেন সেটা আপনাকে বেশি প্রভাবিত করে?
দুটোই প্রায় সমানতালে হয়।
‘কড়ক সিং’-এর ক্ষেত্রে কীভাবে হয়েছে?
আমার নিজের ভাবনাও চরিত্রকে ইনফ্লুয়েন্স করে। যে আমি অমুক লোকটা হলে কেমন হতাম, আবার চরিত্রও আমাকে অনেক কিছু দেয়। ‘কড়ক সিং’ করতে গিয়ে আমি আমার মেয়েকে ভালো করে বুঝতে পেরেছি। বা বলতে পারো বোঝার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পেরেছি। ‘কড়ক সিং’ তার মেয়েকে ভুলে গিয়েছে। সে তার মেয়েকে বলে, ‘তুমি যারই মেয়ে হও, তুমি খুব ভালো’। আমি মেয়েকে সময় দিতে পারি না। ও কী চায়? সময় চায়, কেয়ার চায়– যে কোনও সন্তান সেটাই চাইবে। মেয়ের ক্লাস সিক্স থেকে নাইন পর্যন্ত যে সময়টা, আমি জানতামই না, ও পড়াশোনা কীভাবে করেছে, কোন সাবজেক্টে কী নম্বর পেয়েছে, এই সময় ওর কী স্ট্রাগল ছিল– এসব আমি টেরই পাইনি, কারণ আমি শুটিং-এ ছিলাম। কিন্তু ও কোনওদিন কমপ্লেন করেনি। আমার সঙ্গে ও খুবই কানেক্টেড। যখন সময় পেতাম, ওর খাওয়ার পিছনে পড়ে থাকতাম। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলতাম। এখন তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে, সতেরো বছর বয়স। এখন নিজেই সব ভালো বোঝে।
আপনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অভিনয় করতে গিয়ে প্রতিটি চরিত্র আপনাকে নিজের সম্পর্কে কিছু না কিছু বলেছে। এই ছবির ক্ষেত্রে সেটা কেমন?
এটাই মনে করিয়ে দিয়েছে যে, কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে একটা ব্যালান্স থাকা দরকার। যেটা আমি হারিয়ে ফেলছিলাম। যদিও ‘কড়ক সিং’ এবং আমার পরিস্থিতি আলাদা। একটা সময় ছিল আট বছর এক্কেবারে বেকার বসেছিলাম। এবার কাজ এল তো এত বেশি এল যে সময়ের খেয়াল থাকে না। পরিবার, সমাজ এবং পেশাগত জীবনে একটা স্বাস্থ্যকর ব্যালান্স দরকার। ছবির শেষে বোঝা যায় ‘কড়ক সিং’-এর উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। সে বলে ‘হোয়াইট কালার ক্রাইম’-এ স্ট্রিক্ট আইন আনা দরকার।
[আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড় লড়াই ‘জওয়ান’-এর, কাদের সঙ্গে টক্কর শাহরুখের?]
এই আট বছর কাজ ছিল না, এখন আছে। এই অসাফল্য বা সাফল্য আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
তেমন কিছু না। অসফলতা কখনও কখনও মাথা খারাপ করে দেয়। ডিপ্রেস করে দেয়। নিরাশ করে। তবে এটা বলতে পারি সিনেমা আর অ্যাক্টিং আমার জীবনে এখন সেকেন্ডারি।
কেন?
অভিনয় এখন আমার কাছে জীবন চালানোর একটা মাধ্যম। আমার রুজি-রুটি বলা যায়। অভিনয় আর জীবন-মরনের প্রশ্ন নয়।
আগে ছিল, জীবন-মরনের প্রশ্ন?
না, আগেও এতটা ছিল না কিন্তু যে অভিনয়ের জন্য যা কিছু করে নেব! অভিনয় খুবই জরুরি ছিল কিন্তু কোনও বিষয়ে এক্সট্রিমিস্ট আমি কোনওদিনই ছিলাম না। আমার ক্লাসমেট, এক সঙ্গে অভিনয় শিখেছি এমন অনেকে আছেন যারা আর্ট নিয়ে খুবই এক্সট্রিমিস্ট। আমি তেমন না। যদি কখনও খারাপ অভিনয় করেও ফেলি, হা-হুতাশ করব না। কারণ, আমার অভিনয় খারাপ হলে কারও প্রাণ বিপন্ন হবে না। বা আমার জীবনও বিপন্ন হবে না। জীবন তার নিজের ছন্দে চলতে থাকবে।
‘কড়ক সিং’ অর্থাৎ ‘এ.কে. শ্রীবাস্তব’ একদিকে বদরাগি, অন্যদিকে পেশেন্ট হিসাবে হাসিখুশি। কীভাবে এই চরিত্র অ্যাপ্রোচ করেছিলেন?
এই ছবির চিত্রনাট্য এত ভালো প্রায় একটা ম্যাপের মতো। আমি শুধু সেটাকে ফলো করেছি। কমপ্লেক্স ন্যারেটিভ। এখানে স্পুন ফিডিং একেবারেই হয়নি। অনেক স্তর আছে। সেটাই আমার ভালো লেগেছিল। এই জন্যই ছবিটা করতে রাজি হয়েছিলাম। আমার কাছে বেশিরভাগ চরিত্র আসে, হয় নিষ্ঠুর মাফিয়া ডন কিংবা কমিকাল চরিত্র।
প্রথমে নিষ্ঠুর মাফিয়ার রোল বেশি আসত?
(হা হা হা) হ্যাঁ, আর পরে কমেডি বেশি। তো এই চরিত্রটা একেবারে অন্যরকম।
এবং অল্প রোমান্সও আছে কো-অ্যাক্টর জয়া আহসানের সঙ্গে।
হ্যাঁ, রোমান্স আছে।
আপনাকে কখনও কেউ রোম্যান্টিক প্রেমের ছবির হিরো করেনি?
না, এখনও পর্যন্ত করেনি। কেউ অফার করলেও নিশ্চয়ই করব।
ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে ‘নয়না’ অভিযোগ করে ‘পলিটিক্যালি’ ইনকারেক্ট ‘সেক্স’ নিয়ে! আপনার কী মনে হয় জীবনে যৌনতা কতটা মেপে আসে?
না, জীবনে যৌনতা এতটা মাপজোক করে হয় না। ছবিতে এই দৃশ্যটা ভারি সুন্দর। বেশ কিছু গভীর কথা বলা হয়েছে। প্রায় কবিতার মতো করে শুট করা হয়েছে।
সঞ্জনা, পার্বতী এবং জয়ার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা?
তিনজনেই খুব দারুণ মানুষ। খুব হার্ডওয়ার্কিং সকলেই। পার্বতীর ফ্যান আমি প্রথমেই ছিলাম। যেবার প্রথম ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাই, পার্বতীও পেয়েছিল, দিল্লিতে দেখা হয়েছিল। জয়ার কাজ আগে দেখিনি। লেকিন কাম করকে সমঝা, শি হ্যাজ এ বিউটিফুল সোল।
কী ধরনের ছবি কখনও করবেন না?
মেয়েদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন, ব্রুটালিটি কিংবা মহিলাদের ডিসরেসপেক্ট করা হচ্ছে এমন ছবি করতে আমার অসুবিধা আছে।
তার মানে ‘অ্যানিম্যাল’-এর ‘পাপা’ আপনি হবেন না কোনওদিন?
ছবিটা আমি দেখিনি।
আপনি সম্প্রতি বায়োপিক ছবি ‘অটল’ করেছেন। কী মনে হয় বলিউডে অথেনটিক বায়োপিক হয়? এখানে তো বায়োপিক মানেই সেলিব্রেশন, হোয়াইটওয়াশ করে দেখানে!
আমি বিশ্বাস করি, সব মানুষের মধ্যে কিছু ভালো, কিছু খারাপ, সবটা মিশিয়েই একটা পরিপূর্ণ মানুষ। এবার ‘অটল’ কীভাবে কী দেখানো হয়েছে তার জন্য একটু অপেক্ষা করুন।