মুক্তি পেতে চলেছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘ঘরে ফেরার গান’। ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডায় পরম। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্য়ায়।
‘হাফ চকোলেট’ কিংবা ‘চলো লেট’স গো’ আপনার প্রথম দিকের কাজ। সেখানেও একটা গানের পৃথিবী ছিল। তখন বাংলা ব্যান্ড, গিটার বাজানো নিয়ে একটা উন্মাদনা ছিল। ‘ঘরে ফেরার গান’-এ ‘ইমরান’-এর গানের পৃথিবী কতটা বদলে গিয়েছে?
পরমব্রত: যখন ২০০১ সালে ‘হাফ চকোলেট’ দিয়ে অভিনয় শুরু করি, মাঝে মধ্যেই আমাকে গিটার বাজিয়ে গান গাইতে বলা হত। এটার খুব চল ছিল। তখন আমার একটা ব্যান্ডও ছিল। আর ‘ক্যাকটাস’, ‘ফসিলস’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘লক্ষ্মীছাড়া’ খুবই জনপ্রিয় সেই সময়ে। সেই সময় থেকে আজকে– এই কুড়ি বছরে গানের জগৎ অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। গান-বাজনার ধরন, সাউন্ড হ্যাজ চেঞ্জড। আর এই ছবিতে আমার চরিত্র ‘ইমরান’ বর্তমানে রিসার্চ করছে ‘ইন্দো-ওয়েস্টার্ন’ ফিউশন সাউন্ড নিয়ে। পনেরো বছর আগের ছবি হলে বিষয়টা সহজ ছিল, ইমরানকে একটা গানের ব্যান্ডের অংশ করা যেত। কিন্তু মিউজিক ব্যান্ড কনসেপ্টটাই বদলেছে। আন্তর্জাতিকভাবে ‘কোল্ড-প্লে’-র পর এই মাপের জনপ্রিয় ব্যান্ড আসেনি। এখন হ্যারি স্টাইলস, টেলর সুইফ্ট, প্রতীক কুহার-এর মতো সোলো আর্টিস্টদের জনপ্রিয়তা বেশি।
‘মিথ্যে প্রেমের গান’ সেভাবে চলেনি। ‘ঘরে ফেরার গান’-এর মতো মিউজিকাল নিয়ে কতটা আশাবাদী?
পরমব্রত: মিউজিকাল বলতে আমি আজও বুঝি ‘ওয়েস্টসাইড স্টোরি’, যেখানে সংলাপও গানে বলা হবে। এখন মিউজিকাল বলতে যেখানে গল্প বলার ক্ষেত্রে গানের ব্যবহার বেশি, সেটা ধরেই চলি। ‘ঘরে ফেরার গান’-এর ক্ষেত্রে মিউজিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘ইমরান’ এবং ‘তোরা’ বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে একটা ঘর খুঁজছে। যে ঘর ছেড়ে এসেছি, সেটাকেই অন্যভাবে খুঁজে চলি আমরা। এবং সেটা চুন-সুরকির বাড়ি নয়, মনে মনে একটা বাড়ি তৈরি করি। এই ছবিতে এই দু’জন মানুষের ঘর খেঁাজার চেষ্টা এবং যার ভিত হচ্ছে গান।
কাজের সূত্রে এতটা ট্র্যাভেল করতে হয়। এখন আপনার মনের মধ্যে বাড়ি কোথায়?
পরমব্রত: যেহেতু এত ট্র্যাভেল করি, তাই কলকাতায় আমার নিজের বাড়ির প্রতি টানটা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। আমার ঘরটা, আমার অনেক আলো-হাওয়াওয়ালা বারান্দাটা, আমার টিভির ঘরটা, আমার পোষ্য– সব কিছুর জন্য ফিরতে ইচ্ছে করে।
নিজের বাড়িতে সবচেয়ে প্রিয় কোণ?
পরমব্রত: ছাদে একটা ঘর আছে। বানিয়েছি নিজেই, সেই ঘরটা খুবই সুন্দর। যে-ই যায়, বলে এখানে থেকে যেতে পারি।
তোরা-ইমরানের মতো পরমব্রত কখনও কোনও মানুষের মধ্যে ঘর খুঁজে পেয়েছে?
পরমব্রত: নিঃসন্দেহে আমার কাছে পার্টনারশিপ হল অ্যাবাউট ফাইন্ডিং রিফিউজ, ফাইন্ডিং সোলেস। আমরা সকলেই সেটাই খুঁজি। অন্য মানুষের মধ্যে একটা আরাম খুঁজি, যাতে জাজ না হতে হয়। তেমন একটা স্পেসে সব কিছু বলতে পারার আরাম খুঁজি।
তেমন আশ্রয় আপনি পেয়েছেন?
পরমব্রত: হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেমন আশ্রয় পেয়েছি, আবার কিছু ক্ষেত্রে বুঝেছি যেটাকে আশ্রয় ভেবেছিলাম, সেটা আসলে তেমন বাড়ি নয়।
বাংলায় ‘বৌদি ক্যান্টিন’ পজিটিভ ক্রিটিকাল রেসপন্স পেয়েছিল, ছবি না চললেও। অন্যদিকে ‘মানবজমিন’ বা ‘ডক্টর বক্সী’ চলেনি। কিন্তু আপনার হিন্দি কাজগুলো বেশ সফল, দারুণ সব চরিত্রও পাচ্ছেন! বাংলায় এই অবস্থা কেন?
পরমব্রত: ঠিকই, এমন হলে যে কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রেই এটা চিন্তার কারণ। আর দেখতে গেলে বাংলায় শতকরা নব্বই ভাগ ছবি চলে না। ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এর পর ‘অভিযান’, আর ‘বনি’ বাদ দিলে (এগুলো নিজের ছবি) অন্যদের যে ছবিই করেছি সেটা চলেনি। এবং বক্স অফিসের নিরিখে ‘বৌদি ক্যান্টিন’ও চলেনি। এটা রিয়্যালিটি। এটা কীভাবে বদলানো যায় দেখতে হবে। তবে শুধু আমার ছবি বলে নয়, কারও কোনও ছবি চলছে না, চার-পাঁচটা ছবি ছাড়া।
এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন, ‘কাজের প্রতি যত্ন কম’, বা স্ক্রিপ্ট লেভেলে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু শ্রীজাতর মতো লেখকও তো ‘মানবজমিন’ লিখেছেন…
পরমব্রত: শ্রীজাতদা খুব ভাল কবি বলেই তিনি যে খুব ভাল চিত্রনাট্য লিখবেন তা নয়। এটা নিয়ে আমার কথা হয়েছে শ্রীজাতদার সঙ্গে। সামনাসামনি হয়তো আরও বিশদে হবে। আরেকটা জিনিস মনে হয়, দর্শক হয়তো আরেকটু গভীর কিছু এক্সপেক্ট করছিল শ্রীজাতদার থেকে। এটা হয়তো বেশিই সিম্পল হয়ে গিয়েছে। শ্রীজাতদা আমার বন্ধু এবং প্রিয় কবি, আমি ওকে সাপোর্ট করতে চাই। আর শুধু শ্রীজাতদা বলে নয়, সবাইকেই অনেক বেশি কেয়ারফুল হতে হবে। দর্শকের চোখ-কান এখন সজাগ। একটু গুপি করে বা সহজ কিছু করে মন ভোলানো যাবে না।
‘মিথ্যে প্রেমের গান’ আর ‘ঘরে ফেরার গান’– দুটোতেই গান এবং ইশা সাহা কমন ফ্যাক্টর। আপনার ইশার সঙ্গে প্রথম কাজ। কেমন অভিজ্ঞতা?
পরমব্রত: ইশা যে পরিমাণ কাজ করছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, নতুনদের মধ্যে ও সবথেকে প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন। শি ইজ ভেরি ভেরি সেনসিটিভ অ্যাক্টর। আমার যেটা মনে হয়, একটু বেশি ছটফট করে। সেটা ওর বয়সে আমিও করতাম।
সাক্ষাৎকারে এও বলেছেন, বেশির ভাগ ছবিই ‘ফরগেটেবল’। নিজের ছবিকে সেই তালিকায় রাখবেন?
পরমব্রত: বক্স অফিস দিয়ে বলছি না। ছবি বানানোর ক্ষেত্রে অযত্ন দেখতে পাই, সেই জায়গা থেকে বলছি। ধরো ‘মায়ার জঞ্জাল’, ছবি চলছে না, সেটা ঠিক আছে। বাট দিস ফিল্ম ক্যানট বি কলড অ্যাজ এ ফরগেটেবল ফিল্ম। সেই জায়গা থেকে আমার পরিচালিত কোনও ছবিকেও ‘ফরগেটেবল’ বলে মনে করি না।
‘ঝিল্লি’, ‘দোস্তজী’, ‘বিনিসুতোয়’ দেখেছেন?
পরমব্রত: না, আমার দেখা হয়নি। ছিলাম না।
হিন্দিতে পরপর কাজ করছেন, কীভাবে দেখবেন এই সাফল্যকে…
পরমব্রত: ‘পরী’-র পর ক্লিয়ারলি এটা আমার সেকেন্ড ইনিংস চলছে। টাচউড এখনও পর্যন্ত ভালই চলছে। যেহেতু আমার কাজের জায়গাটা ভাগ হয়ে গিয়েছে বাংলা এবং হিন্দিতে। আমি যেটা করতে ভালবাসি অভিনয়ের পাশাপাশি সেটা হিন্দিতে করার ভাবনায় আছি।
মানে পরিচালনা? হিন্দি ছবি?
পরমব্রত: হ্যাঁ, হিন্দি ছবি পরিচালনা করতে চাই।