shono
Advertisement

‘হাউসফুল দেখার অপেক্ষা শেষদিন পর্যন্ত থাকবে’, জন্মদিনের আগে প্রাণখোলা প্রসেনজিৎ

তাঁর ষাট বছর দর্শকের কাছেও উদ্‌যাপন, মত তারকার।
Posted: 05:05 PM Sep 29, 2023Updated: 05:24 PM Sep 29, 2023

৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। এদিকে পুজোয় আসছে ‘দশম অবতার’। তার আগে কফিতে চুমুক দিতে দিতে আড্ডা দিলেন সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ‌্যায় (Dawshom Awbotaar)। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।

Advertisement

কেমন আছেন?
ভালো আছি সকলের ভালোবাসা এবং আশীর্বাদে। এক মাসের একটু কম সময় বাকি পুজোর ছবি আসতে। বুকের ভিতর ধুকপুক চলছে। প্রবীর রায়চৌধুরি ফিরছে। আসছে ‘দশম অবতার’ (Dawshom Awbotaar)। প্রত্যেক বছরেই হয় এটা, পুজোয় যেমন মানুষ খুব আনন্দ করে, আমাদের অবস্থাটা স্কুলের রেজাল্ট বেরবার আগের মুহূর্তে পৌঁছে যায়। এত বছর পরেও আমার ওই টেনশন হয়। ওটা ছাড়া বেশ ভালো আছি। মুম্বই-কলকাতা মিলিয়ে নানারকম কাজ চলছে।

৩০ সেপ্টেম্বর আপনার জন্মদিন। আগাম শুভেচ্ছা রইল।
থ‌্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। আমার জন্মদিন অনেক মানুষ উদ্‌যাপন করেন। এবং প্রচুর শুভেচ্ছা-ভালোবাসা পাই। তোমাদের এবং সমস্ত দর্শককে এজন‌্য ধন‌্যবাদ। প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি কাজ করছি, ছোটবেলাটা বাদ দিয়ে বলছি, এই ভালোবাসা থাকলেই জন্মদিন মিনিংফুল হবে, আনন্দের হবে।

দর্শক কখনও ভোলে না বুম্বাদার জন্মদিন।
এটা বিরাট প্রাপ্তি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন, এই দিনটায় আমাকে কোনও না কোনওভাবে কানেক্ট করেন। আমি মনে করি, এটা আমার মা এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আর অবশ‌্যই দর্শকের ভালোবাসা। আমার জায়গা থেকে আমি যেটুকু পেরেছি, সততার সঙ্গে আমি দর্শককে আনন্দ দিয়ে গিয়েছি। তার বাইরে কিচ্ছু করার চেষ্টা করিনি, করবও না।

কোন ম‌্যাজিকে এতখানি হ‌্যান্ডসাম রইলেন? সিক্সটি প্লাস, এ তো ‘কিউরিয়াস কেস
অফ বুম্বাদা’…
 (জোরে হাসি) সিক্সটি প্লাস হ‌্যান্ডসাম। বম্বেতে আমাকে কত লোক যে জিজ্ঞেস করেছে, আপনি বার্থডে সেলিব্রেশন করেছেন আপনার ষাট বছরে? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ। আমাকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা করেছেন। খুব এনজয় করেছি। এমনকী, গত বছর আমার থার্ড জেনারেশনের সঙ্গে ‘অমরসঙ্গী’-র নাচ-ও করেছি সেদিন। একই সঙ্গে ‘দশম অবতার’-এর ট্রেলার দেখে লোকে বলছে, খুব বেশি হলে অনির্বাণের থেকে তোমাকে তিন-চার বছরের বড় দেখাচ্ছে। মাই পয়েন্ট ইজ বয়স লুকনোর কোনও জায়গা নেই। ধারাবাহিকভাবে যাঁরা আমাকে দেখে এসেছেন, তাঁরা বাড়িতে আমার সাদা-কালো ছবিও দেখেন, তাঁদের কাছে আমি কী লুকবো! আমার সিক্সটি ইয়ার্স সেলিব্রেশন দর্শকের কাছেও উদ্‌যাপন। হ্যাঁ, আমি একটা চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে অনেক ভাঙাচোরা করেছি। ‘শেষপাতা’-র বাল্মিকী আর ‘দশম অবতার’-এর প্রবীরে আকাশ-পাতাল তফাত। এটা আমার এক ধরনের লড়াই আর অধ‌্যবসায়। এই বদল আনতে আমি দু-তিন বছর সময় পাই না। যদি সাউথের বা বম্বের ছবির অভিনেতা হতাম তাহলে হয়তো সেই সময় পেতাম, বিদেশে চলে যেতে পারতাম। সেই সময়-সুযোগ কিন্তু আমি পাইনি।

‘দশম অবতার’ একদিকে যেমন ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর প্রিক্যুয়েল, আবার ‘ভিঞ্চিদা’-রও প্রিক্যুয়েল। ১২ বছর আগে ‘বাইশে শ্রাবণ’ রিলিজ করেছিল।
হ্যাঁ, ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর প্রবীরের থেকেও আট ন’বছর আগের প্রবীরকে আমাকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

এই ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়া, সেটা কোন জাদুতে সম্ভব?
সৃজিত যখন আমাকে প্রথম স্ক্রিপ্ট শুনিয়েছিল, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোর এগজ‌্যাক্টলি কত বছর চাই বল?’ এতটা পিছিয়ে অ‌্যাকটিভ প্রবীরকে ফিরিয়ে আনা বিরাট চ‌্যালেঞ্জ ছিল। যখন ‘বাইশে শ্রাবণ’ করেছিলাম, প্রবীর সাসপেনডেড, নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে, তার শারীরিক গঠন এবং আগের প্রবীর হল ফিল্ডে কাজ করা লোক, সেই পার্থক‌্য মাথায় রেখেই সম্মতি দিয়েছিলাম। এটা আমি করতে ভালোবাসি।


অনেকদিন পর পুজোয় প্রসেনজিৎ-সৃজিত জুটি পর্দায় ফিরছে। কেমন অনুভূতি?
সৃজিতের সঙ্গে কাজ করার মজা এমনিতেই আছে। প্রসেনজিৎ-সৃজিত ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘জাতিস্মর’, ‘কাকাবাবু’, ‘গুমনামী’ করেছে। তারা একসঙ্গে ফিরলে এই কম্বিনেশনের আলাদা প্রত‌্যাশা থাকে। এই ছবির ক্ষেত্রে পরিচালক এবং আমার, দু জনেরই ‘কাল্ট’ চরিত্রকে ফিরিয়ে আনা লক্ষ‌্য ছিল এবং সেটা বড় চাপের। কিন্তু এটাও ঠিক সারা বিশ্বের বাঙালি অপেক্ষা করে আছে প্রবীরকে পর্দায় দেখার জন‌্য। চাপের হলেও, আই অ‌্যাম ভেরি এক্সাইটেড। সৃজিত আর আমার শেষ ছবিও যখন এসেছে, তখনও সকাল আটটার শো হাউসফুল গিয়েছে। আমার ধারণা, ‘দশম অবতার’ হাউসফুল যাবে, সে সকাল আটটা কি ন’টার শো হোক।

[আরও পড়ুন: ‘সিনেমা হল স্টেডিয়াম হয়ে যাবে!’, মহালয়ায় সারপ্রাইজ দেবেন অঙ্কুশ]

পুজোর ছবির উন্মাদনা কি এখনও টের পান?
হ্যাঁ, পাই তো।

পুজোয় চারটে বাংলা ছবি ‘দশম অবতার’, ‘রক্তবীজ’, ‘বাঘাযতীন’ ও ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’।
জানি এই প্রশ্নটা আসবে। কদিন আগে হিন্দি বাজারে হল– ‘জওয়ান’, ‘গদর ২’, ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ মিলে তো এত কালেকশন হল! ওদিকে রজনী স‌্যরের ‘জেলার’ এল। পুজোর পরে যেটা হবে, সবাই বলবে এই চারটে বাংলা ছবি মিলিয়ে এত কালেকশন হল। আমি চাই এটা রেকর্ড ব্রেকিং কালেকশন হোক।

‘দশম অবতার’ দিয়ে সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের কপ ইউনিভার্সের শুরু। মানে এর পরে অন্তত আরও দুটো আসবে। অর্থাৎ আপনাকে ফিট থাকতে হবে।
আরও চরিত্র যোগ হবে। পরমকে টাইম লেন্থে আনা মুশকিল। তবে অন‌্যভাবে আসতে পারে। (হাসি) হ্যাঁ, আমি ফিট থাকার চেষ্টা করব। দেখি কীরকম সময়ে আসে।

প্রায় ন’টা ছবি হয়ে গেল আপনার সৃজিতের সঙ্গে। এই বিগত বছরগুলোয় তাঁর কী বদল দেখলেন? এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
প্রথমে রোগা-পাতলা চেহারার একটা ছেলে ছিল সৃজিত (হাসি)। এই ছবিটা করার পর যেটা বার বার মনে হল– ‘অটোগ্রাফ’ করেছিল যে সৃজিত, বা কিছুটা ‘বাইশে’-ও বলব– সেই সৃজিত এখন টেকনিক‌্যালি অনেক বেশি বোঝে। এখন এক্সট্রা শট নেওয়া বন্ধ হয়েছে অনেকটা। ‘বাইশে’ আমরা ‘৩৫ মিলিমিটার’-এ শুট করেছিলাম, একটা হলিউডি ফিল ছিল। এখানে ডিজিটালে শুট করলেও ওই একটা প‌্যাটার্ন ও মেনটেন করেছে। আরেকটা বদল দেখলাম। সৃজিত আর বসে মনিটরে কাজ করছে না। ফিজিক‌্যাল মুভমেন্ট অনেক বেড়েছে। সেটা অ‌্যাক্টরদের বোঝানো হোক বা প্রপস নিয়ে, শারীরিকভাবে অনেক সক্রিয় সৃজিতকে পেয়েছি ‘দশম অবতার’-এ। যেটা খুব জরুরি। ভালো লাগল।

অনির্বাণ ভট্টাচার্যর (ছবিতে বিজয় পোদ্দার) সঙ্গে জুটি হিসাবে কাজ করে কেমন লাগল?
‘দশম অবতার’ যখন থেকে ঘোষণা হয়েছে লোকজন ‘প্রবীর’কে নিয়ে অনেক কথা বলেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ছবি রিলিজ হলে লোকে বলবে প্রবীর-পোদ্দার কবে ফিরবে? এই জুটিটা আমি রিয়‌্যালি এনজয় করেছি। দর্শক প্রতিটা মুহূর্তে উপভোগ করবে, এদের আবার চাইবে। শুধু অনির্বাণ বলে বলছি না, ইয়ং অ‌্যাক্টররা দারুণ অভিনয় করে। প্রত্যেক মুহূর্তে এদের থেকে শেখার চেষ্টা করি। ওদের অভিনয়ের ভাষা বদলে গেছে। আমাকে ওদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে, ওদের থেকে শিখতে হবে। প্রায় সময় আমি জিজ্ঞেস করি, ঠিক হচ্ছে কি না। আই থিঙ্ক উই আর ইন লাভ নাউ।

সাফল্যে র শীর্ষ ছুঁয়েও এই বিনয় বাঁচিয়ে রেখেছেন কীভাবে?
এটা বিনয় নয়, ভালোবাসা। ভালোবাসা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ভালোবাসা দিয়ে যা পাওয়া যায়, অন‌্য কিছু দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। এটা আমি বিশ্বাস করি।

এখনও হাউসফুল বোর্ড দেখার জন‌্য এতটা অপেক্ষা থাকে? ওই যে বললেন পরীক্ষার রেজাল্টের মতো?
ওটাই তো বাঁচিয়ে রাখে, টিকিয়ে রাখে। ওটাই আমার নিশ্বাস-প্রশ্বাস। হাউসফুল বোর্ড দেখার অপেক্ষা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে। এখন বুক মাই শো এসে গেছে যদিও, তবে আমি রিপোর্ট দেখি। আগে ফোন আসত হাউসফুলের। কাউন্টার ভাঙত (হাসি)।

বিগত কয়েকটা বছরে বাংলা ছবি দেখতে হল-এ আসার লোকসংখ‌্যা কমেছে। এটা ভাবাচ্ছে?
একদম না। উলটোটা। হয়তো ভল্যুম অফ ফিল্মস বেড়েছে। দুটো ছবি তো দশ কোটির ফিগারে পৌঁছেছে, প‌্যানডেমিকের পরে। একটা সময় হিন্দি ছবিও ওয়ার্ক করছিল না। হঠাৎ তিনটে ছবি ক্লিক করল। সবাই কিন্তু ততদিনে সাউথের রমরমার কথা বলতে শুরু করেছিল। ওই তিনটি হিন্দি ছবির দুটোর হিরোই ষাট ছুঁয়েছে। সানি দেওল, আমার চেয়েও বয়সে বড়। আর শাহরুখ খান আমার চেয়ে একটু ছোট। আমাদের দায়িত্ব এখন ফিরিয়ে দেওয়া। কৌশিকের ওই ছবিটা ‘অর্ধাঙ্গিনী’, এছাড়া ‘প্রজাপতি’ চলেছে আর আবির যেটা করে ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’-এর দারুণ সাফল্যের কথা বলব। কাজেই দায়িত্ব নিয়ে বলছি, পুজোয় দর্শক আবার হল-এ আসবে। কাউকে কারও পাশে দাঁড়াতে হবে না দর্শক সিনেমা দেখতে ঢুকবেই (হাসি)।

[আরও পড়ুন: দেওরের বিচ্ছেদ থেকে শিক্ষা? নিককে আগলে রাখতে প্রিয়াঙ্কার নতুন ‘ফন্দিফিকির’!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement