১৫ আগস্ট মুক্তি পাবে রাজ চক্রবর্তীর নতুন ছবি 'বাবলি'। এই ছবিতে আবির চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বাঁধছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডায় অভিনেত্রী। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
নামভূমিকায় অভিনয় করার একটা চাপ থাকে। ‘বাবলি’তে কেমন সামলেছেন মনে হয়?
শুভশ্রী: সামলাতে পেরেছি কি না, তার প্রথম ধাপ বোঝা যায় পরিচালকের অভিব্যক্তি বা প্রতিক্রিয়া দেখে। সেটে পরিচালকের কমপ্লিমেন্ট পেয়েছি, কারণ সেই হার্ড ওয়ার্ক করেছি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, সিনেমা ডিরেক্টর’স মিডিয়াম। গল্পটা পুরোটা পরিচালকই দেখতে পান। একটা চরিত্রকে সে-ই ডিফাইন করে। তাই তার মতো করে চরিত্র ফুটিয়ে তোলাই আমার কাজ। তাই পরিচালকের গুড বুকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তাই চরিত্রের মতো হয়ে ওঠা জরুরি।
বুঝলাম...
শুভশ্রী: আর বড় চাপ ছিল, যখন ‘বাবলি’-র স্বত্বটা নিতে গিয়েছিল রাজ, বুদ্ধদেব গুহ বলেছিলেন শুভশ্রী ‘বাবলি’ হলে খুব ভালো হয়।
হ্যাঁ, শুনেছিলাম কাস্টিংয়ে লেখকের বড় ভূমিকা রয়েছে।
শুভশ্রী: উনি বলেছিলেন, শুভশ্রী যদি ওজনটা একটু বাড়ায়। ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়, ওঁকে ছবিটা দেখাতে পারলাম না। প্রচুর মানুষ বইটা পড়েছেন। সবারই নিজে কল্পনা থাকে, সেই ভাবেই চরিত্র আর গল্পগুলোকে ইম্যাজিন করে। তবুও আমি দর্শকের কাছে জানতে চাইব, আমি কতটা ‘বাবলি’ হয়ে উঠতে পেরেছি।
‘বাবলি’ পড়লেন আবার? কাহিনি আর সিনেমায় কি কিছু বদল হয়েছে?
শুভশ্রী: হ্যাঁ, অফকোর্স। না, লেখা আর সিনেমায় তেমন বদল হয়নি। এমনকী সংলাপও একই আছে।
ছবি-ইনস্টাগ্রাম
বুদ্ধদেব গুহকে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল?
শুভশ্রী: না। যে সময় আমরা রাইটস পেয়েছিলাম, সবে কোভিড যাচ্ছে তখন। তার কিছুদিন আগেই আমার ডেলিভারি হয়েছে। বাইরে যাওয়া ইত্যাদিতে রেস্ট্রিকশন ছিল। সব মিলিয়ে আর ওঁর সঙ্গে দেখা করা হয়নি।
কন্যা ইয়ালিনির জন্মের কিছু দিন পরে ‘বাবলি’-র শুট শুরু হয়। বাড়িতে ছোট ইউভান এবং ইয়ালিনি, সব মিলিয়ে শুট করা কতটা শক্ত ছিল?
শুভশ্রী: আপাতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও সত্যি বলতে আমার অত শক্ত লাগেনি। কারণ, পরিবারের লোকজন আমার সঙ্গে ছিল। ফ্যামিলির সকলে আমাকে এতটা উৎসাহ দেয় কাজের জন্য, ফলে একেবারেই সমস্যা হয়নি। তবে অবশ্যই মাদার্স গিল্ট কাজ করে। তাই সেইরকম সময় বেঁধে আমি শুটিং করেছিলাম। একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যেতাম, আবার বাড়ি ফিরে আসতাম ঠিক সময়ে। আউটডোরে যখন কাজ করেছিলাম ওদের দুজনকেই নিয়ে গেছিলাম। আমরা এরকমই পরিকল্পনা করি, যদি দুজনেই বেরিয়ে যাই, তাহলে সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে যাই।
‘বাবলি’ আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প। আপনি কি এরকম গল্প পছন্দ করেন এখনও?
শুভশ্রী: একদম। প্রেমের গল্প কে না পছন্দ করে (হাসি)। আমি অনেকদিন ধরে এরকম জোরালো প্রেমের গল্প করতে চেয়েছিলাম। বাবলির থেকে প্যাশনেট প্রেমের গল্প আর হতে পারে না। আমি ভীষণ উত্তেজিত যে এরকম একটা চরিত্র পেয়েছি। একজন দর্শক হিসাবে বলব, আমার মতো প্রেমের ছবি দেখতে যারা পছন্দ করে, তারা অনেকদিন পর বাংলাতেও এমন মাখোমাখো প্রেমের ছবি দেখতে পাবে। রাজও ‘পরিণীতা’র বেশকিছুদিন পরে প্রেমের ছবি করল।
এই প্রসঙ্গে সমালোচকরা একটা কথা কিন্তু বলবেই, রাজ চক্রবর্তীর ছবি মানেই শুভশ্রী হিরোইন। আপনি কী বলবেন?
শুভশ্রী: এটা রাজকে জিজ্ঞেস করা ভালো। কারণ, একজন পরিচালক আমাকে কাস্ট করে। আমি বলতে পারি, এখানে যদি ভালো গল্প হয়, ভালো পরিচালক হয়, কেন কাজ করব না।
‘বাবলি’ হয়ে ওঠা কতটা শক্ত ছিল?
শুভশ্রী: বেশ শক্ত ছিল। প্রত্যেকটা চরিত্র করার সময় একটা জিনিস খুব মনে হয়, কোনওভাবে সেখানে শুভশ্রীর ছোঁয়া যেন না থাকে। মেহুল, ইন্দুবালা, বাবলি– প্রত্যেকের সাইকোলজি তো আলাদা। সেই মনস্তত্ত্বটা বোঝার চেষ্টা করি। প্রত্যেকটা মানুষ তো আলাদা। কিছু অভিব্যক্তি হয়তো এক হবে, কারণ আমি তো একটাই মানুষ, যে প্রত্যেকটা চরিত্র করছি। যদি আমার কাজগুলো ভালো করে দেখেন, মনে পড়বে না এটা শুভশ্রী, চরিত্রেই ঢুকে যাবে দর্শক। সেটাই আমার প্রায়োরিটি থাকে। ‘বাবলি’ করতে গিয়ে সেটাই হয়েছিল আমার। আমি বার বার স্ক্রিপ্ট পড়েছি, নিজের কথা বলাটা পাল্টেছি ওর মতো করে। বাবলি শিক্ষিত, আইএস অফিসার, প্রবাসী বাঙালি সেটা রাখার চেষ্টা করেছি। মোটা কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, একইসঙ্গে স্থূলতা নিয়ে কমপ্লেক্স আছে।
বাবলির চেহারা যেমন ভারীর দিকে, মা হওয়ার পর আপনার চেহারাও ভারী হয়েছিল। বডিশেমিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল কখনও?
শুভশ্রী: আমি শিকার হইনি কারণ, আমি এগুলোকে পাত্তা দিই না। আমি মানসিকভাবে এমন একটা জায়গায় বাস করি যে এগুলো আমাকে ছুঁতে পারে না। কিন্তু অনেক জায়গা থেকেই কথা শুনেছি। কেউ ট্রোল করেছে, মিডিয়ার বন্ধুরা সেটা নিয়েই হেডিং করেছে, এমনও হয়েছে। অথচ মুম্বইয়ে আমি ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, কেউ একটা লাইনও লেখেনি আমাকে নিয়ে। এইটা আমার দুঃখ। কারণ, তাদের আমি এত বছর ধরে চিনি। তারা পরিবারের মতো। যাদের আমি চিনি না, তারা আমাকে কী বলল, সেটা ম্যাটার করে না। ডেফিনিটলি যাদের কাছে ম্যাটার করে, তাদের আমি বলব, এটা তোমার জীবন, তার প্রত্যেকটা ফেজ তুমি এনজয় করো। তুমি যদি মোটা হয়ে থাকো কোনও কারণে, সেটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকো। এটা তোমার জার্নি।
বাবলি-অভিরূপ-ঝুমা এই ত্রিকোণের প্রেমের কাহিনি, ছবিটা মিউজিক্যালও বটে। আবিরের সঙ্গে প্রথমবার জুটি বাঁধলেন। সৌরসেনীর সঙ্গেও প্রথম কাজ। নিজের জীবনের সঙ্গে কোনও মিল আছে?
শুভশ্রী: না, একেবারেই মিল নেই। বাবলি একদম অন্যরকমের মানুষ।
এই ছবিতে রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনিও সহ-প্রযোজক। যৌথভাবে প্রযোজনার কাজ কতটা উপভোগ করেছেন?
[আরও পড়ুন: সলমন সঞ্চালিত ‘বিগ বস ১৮’র প্রতিযোগী নুসরত জাহান! কী জানালেন?]
শুভশ্রী: খুবই এনজয় করেছি। লাইফ পার্টনার তো আমরা অবশ্যই। নানা দিক থেকে পার্টনারশিপ করতে চাই। আমার আর রাজের বোঝাপড়া খুব ভালো। দুজনে মিলে একসঙ্গে যদি ভালো ভালো কাজ করা যায়, সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।
ভবিষ্যতে এককভাবে প্রযোজক হিসাবে কাজ করবেন?
শুভশ্রী: অবশ্যই। ‘সিকাবা’ হাউসের ছাতার তলায় অনেক কাজ করতে চাই। নতুন আইডিয়া, নতুন ডিরেক্টর-রাইটার্স, খুঁজছি। নতুন প্রজন্মের ইয়াংদের দেখতে চাই।
১৫ আগস্ট এক অর্থে রাজ চক্রবর্তী বনাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের লড়াইও। ‘বাবলি’, ‘পদাতিক’ একই দিনে আসছে।
শুভশ্রী: লড়াই শব্দটা শুনলেই নেগেটিভ ভাইবস তৈরি হয়। দুটো ছবিই এই সময় রিলিজের প্ল্যান হয়েছে, সেটা দুজন পরিচালক এবং প্রযোজক চেয়েছেন বলে, ভালো সময় মনে করেছেন বলে। দর্শক খুব স্মার্ট। কোন সময়ে কোন ছবি দেখবে জানে। আমি ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসাবে বলব, দুটো ছবিই মানুষ দেখুক, হল ভরিয়ে দেখুক।