গৌতম ভট্টাচার্য: তিনি নায়িকা, সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা অন্য জগতের এক মানুষ। তাঁর প্রতি অমোঘ আকর্ষণ আছে, কিন্তু যাঁর নাগাল পাওয়া কঠিনই শুধু নয়, অসম্ভব প্রায়। কিন্তু সম্প্রতি বঙ্গ রাজনীতির চরিত্র বদলের সঙ্গে সঙ্গে তারকাদের জনতার কাছে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একুশে বঙ্গের ভোটের সব শিবিরের একাধিক তারকা প্রার্থীই তার উদাহরণ। তৃণমূল ও বিজেপির হয়ে লড়ছেন টলিউডের একাধিক নায়ক, নায়িকা। ভোটযুদ্ধে নামার আগেই জনতার দরবারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে হচ্ছে। তার দৌলতেই জনতা-তারকা সরাসরি জনসংযোগ। তো রবিবার সন্ধেয় এমনই এক তারকা প্রার্থীকে পাওয়া গেল ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এর ফেসবুক লাইভে। তিনি শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee), বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের তারকা সৈনিক। কথাও হল খানিক। আর এই আড্ডার ফাঁকেই নিজের অতীতের সংগ্রামী জীবনের কথা মনে করে চোখের জলও ফেললেন তিনি।
একদা তৃণমূল (TMC) ঘনিষ্ঠ নায়িকা কেন বিরোধী শিবিরে গিয়ে যোগদান করলেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শ্রাবন্তী সামনে আনলেন ‘সম্মান’ প্রসঙ্গ। স্পষ্ট অভিযোগ তুললেন, ”আমাকে দিদির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে দেওয়া হতো না। অনেকের মাধ্যমে তাঁকে জানাতে হতো। একবার এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রের জন্য ওঁর কাছে যেতে চেয়েছিলাম, তাও দেওয়া হয়নি। কেউ একজন বলেন, তাঁকে জানাতে, তিনিই দিদিকে জানাবেন। এটুকু সম্মানও পাইনি।” তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রেই প্রশ্ন উঠল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’, এটা তৃণমূলের ক্যাচলাইন, শ্রাবন্তী বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধি হয়ে তা কীভাবে দেখছেন? শ্রাবন্তীর সরাসরি স্পষ্ট উত্তর, ”আমার মনে হয়, বেহালা নিজের মেয়েকে চায়। আমি এখানকার ভূমিকন্যা। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করেছি এখানে, থাকিও এখানে। মানুষজন আমায় জানেন, চেনেন। তাই আমি নির্বাচিত হলে, তাঁদেরই মেয়ে নির্বাচিত হবেন।” কিন্তু এত বড় একজন নায়িকা, ভোটে জিতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নাকি সিনেমা করতে চলে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নায়িকা যা বললেন, তাতে মনে হল, তিনি রাজনীতিটা করতে চান বেশ মন দিয়েই। বললেন, ”আমি জিতেও যদি এখানকার মানুষের জন্য কাজ না করি, তাহলে তো হেরেই যাব। একটা সুযোগ দিয়ে কেউ দেখুক, কাজ করি না করি না।”
[আরও পডুন: তৃণমূলের হয়ে প্রচারে মুম্বই থেকে আসছেন ‘বাংলার মেয়ে’ জয়া বচ্চন, সোমবার দিনভর কর্মসূচি]
বেহালা পশ্চিমে (Behala Paschim) কিন্তু প্রতিপক্ষ হেভিওয়েট, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে বেশ কিছু। সেসব কি প্রচারের হাতিয়ার করছেন শ্রাবন্তী? না, তাতে কিন্তু নারাজ বিজেপির (BJP) তারকা প্রার্থী। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা টেট, এসএসসি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তিনি কিছুই বলতে চান না। কারণ, মানুষ সব জেনে গিয়েছেন। তাঁরা তাই আসল পরিবর্তন চাইছেন। মানুষের উপর আস্থা রেখেই তাই পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগোতে চান শ্রাবন্তী।
[আরও পডুন: অক্ষয়ের পর এবার করোনা আক্রান্ত গোবিন্দাও, কেমন আছেন সুপারস্টার?]
কথায় কথায় কথা উঠল, শ্রাবন্তীর জীবনে টালমাটাল পরিস্থিতি যতই থাক, তাঁকে সর্বদা হাসিমুখে দেখা যায়। এর রহস্য কী? একগাল মিষ্টি হেসেই জবাব দিলেন বিজেপির তারকা প্রার্থী। তিনি সর্বদা আশাবাদী। তাই যে কোনও কিছু হাসি দিয়ে উড়িয়ে ফের নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু এই হাসির ফাঁকেই কোথাও লুকিয়ে ছিল চোখের জল। কয়েক মুহূর্ত পরই তা প্রকাশ্যে চলে এল। ”আমার নিজের স্ট্রাগল কি কেউ দেখেছে? তাঁরা জানেন আমি কীভাবে একটা সময় কাটিয়েছি?” অশ্রুসজল কণ্ঠে খানিকটা স্বগতোক্তির মতোই যেন এই কথাগুলো বলে উঠলেন তিনি। আড্ডার মেজাজও কিছুটা শীতল হয়ে এল। তারপরই অবশ্য মেঘ কেটে ঝকঝকে রোদ নায়িকার মুখে। অতীতের সংগ্রাম, বর্তমানের কাজের চাপ নিয়েই দিন কাটাতে চান তিনি। মানুষের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চান। তা কতটা পারবেন, ২ মে বোঝা যাবে। তাঁর কাছে ওই দিনটা পরীক্ষার ফলপ্রকাশের দিন। দুরুদুরু বক্ষে অপেক্ষা করবেন ভোটের ফলাফলের জন্য, ঠিক যেমনটা করেছিলেন মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর দিন। সেদিনের জন্য নায়িকা তথা বিজেপি প্রার্থীকে জানানো হল শুভেচ্ছা।