বিশেষ সংবাদদাতা: এক সময়ের দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার। ময়দান বলে ‘শেষ বাঙালি স্ট্রাইকার’! হ্যাঁ দীপেন্দু বিশ্বাসের (Dipendu Biswas) কথা বলা হচ্ছে। ১০ নম্বর জার্সিধারী দীপেন্দু মাঠে যখন বল পায়ে এগিয়ে যেতেন, ‘দীপু দীপু’ স্লোগানে গোটা গ্যালারি মুখরিত হয়ে উঠত। ঠিক এমনই স্লোগান আবার কানে আসছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে গোয়ার ফতোর্দা। সব ভেন্যুতেই সেই এক স্লোগান…’দীপু দীপু…’। এই দীপেন্দুও কিন্তু ‘বিশ্বাস’। মোহনবাগানের (Mohun Bagan) নতুন ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস (Dippendu Biswas)।
আসলে ভারতীয় ফুটবলের আকাশে এক নতুন দীপেন্দুর উদয় ঘটেছে। সিনিয়রের সঙ্গে এই ছেলেটার নামের মিল রয়েছে। তবে জুনিয়র দীপু স্ট্রাইকার নন। তিনি আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের (Antonio Lopez Habas) ডিফেন্সের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। নিজের যোগ্যতায়। ৯০ মিনিটের যুদ্ধে বুক চিতিয়ে পারফর্ম করে নিজেকে পরিচিত করলেন ভারতীয় ফুটবলে।
আরও পড়ুন: Exclusive: হাঁটুর চোটে জর্জরিত সন্দেশ, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল ব্যাক কে?
চলতি আইএসএলে (ISL 10) ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) বিরুদ্ধে ডার্বি যুদ্ধের পর এবার অ্যাওয়ে ম্যাচে এফসি গোয়া (FC Goa)। আনোয়ার আলি (Anwar Ali) চোটের জন্য মাঠে নামতে পারলেন না। কিন্তু তাতে কি! দক্ষিণ ২৪ পরগণার চম্পাহাটির রায়পুর গ্রামের ছেলেটা তো রয়েছেন। এফসি গোয়ার স্ট্রাইকারদের ঝড় সামলানোর জন্য হেক্টর, শুভাশিস বোসের সঙ্গে দীপেন্দুকে জুড়ে দিয়েছিলেন হাবাস। হ্যামিল ও আনোয়ারের অভাব বুঝতেই দিলেন না তরুণ ফুটবলার। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে হেক্টরের সঙ্গে জুটি বেঁধে দারুণ পারফর্ম করলেন। এবং আরও বেশি উজ্বল হয়ে উঠলেন মোহনবাগান জুনিয়র দল থেকে উঠে আসা দীপেন্দু।
কেমন দেখলেন জুনিয়র দীপেন্দুকে? তিন প্রধানে খেলা দীপেন্দু সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে বললেন, “দারুণ ফুটবলার। একজন দক্ষ ডিফেন্ডার হতে গেলে কয়েকটা গুণ লাগে। ও খুব ভালো ফাইনাল ট্যাকেল করতে পারে। কীভাবে কার্ড দেখা এড়িয়ে যাওয়া যায় সেটা দীপেন্দু খুব ভালো জানে। ও শারীরিকভাবে খুবই শক্তিশালী। ভালো ডিফেন্ডার হতে গেলে শরীরের গঠন ভালো হওয়া দরকার। এরসঙ্গে রয়েছে খুব জোরে হেড করার ক্ষমতা।”
জুনিয়র দীপেন্দুর উঠে আসার রাস্তা কিন্তু এত সহজ ছিল না। দিন মজুরের ছেলে দীপেন্দু একটা সময় মোহনবাগান জুনিয়র দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। এবং ছোটদের ‘বড় ম্যাচ’-এ পারফর্ম করেছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে প্রাক্তন ফুটবলার যোগ করলেন, “দীপেন্দু মহামেডানের বিরুদ্ধে দুবার কলকাতা লিগে খেলেছিল। মাঠের বাইরে থেকে ওকে দেখেছি। দারুণ ফুটবলার। খুব ঠান্ডা মাথার ফুটবলার। সেটা কিন্তু আইএসএলেও দেখলাম। কলকাতা লিগের থেকে আইএসএল অনেক কঠিন মঞ্চ। সেখানে দুটি হাইভোল্টেজ ম্যাচে দাপট দেখানো কিন্তু মুখের কথা নয়।”
দীপেন্দুর বাবা প্রদীপ বিশ্বাস। দিন মজুরের কাজ করেন। নিজেও একটা সময় ফুটবল খেলতেন। কিন্তু পেট বড় বালাই। আর তাই আবেগ ও ভালোবাসাকে বহু আগেই জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন পরিবারের দায়িত্ব। তবে স্বপ্ন দেখা থামিয়ে দেননি। তাঁর সেই স্বপ্ন এবার সফল হয়েছে। মাত্র দুটি ম্যাচে অনেকটাই বদলে গিয়েছে দীপেন্দুর জীবন। দল, কোচ, ড্রেসিংরুমের গণ্ডি ছাড়িয়ে দীপেন্দু এখন চর্চায়। হাবাসের ভরসার পাত্রের নাম সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মুখে মুখে ঘুরছে। এখান থেকে শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। চারা গাছ থেকে বটবৃক্ষ হতে চাইছেন দীপেন্দুও। কতদূর এগোতে পারবেন, সেটা সময় বলবে।