সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল বিষধর কেউটে! বারাসতের শেখ রবিউল ওরফে রবিউল মোল্লার বাড়ির সামনেই ছিল একটি ঝাঁ চকচকে আতশবাজির দোকান। যার সামনে সাজান থাকত রঙিন আতশবাজির পসরা। দোকানের অন্দরে নিষিদ্ধ শব্দবাজির ভাণ্ডার। আর সেই শব্দবাজির আড়ালেই এতদিন ধরে রমরমিয়ে চলছিল বিস্ফোরক তৈরির ব্যবসাও। যে কোনও নির্বাচন থেকে শুরু করে ছোট-বড় ঝামেলা, সবেতেই ব্যবহৃত হত রবিউলের কারখানায় তৈরি হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরক। পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে সালফার ও কাঠকয়লা মিশিয়ে বারুদ তৈরি করত রবিউল। এরপর সেই বিস্ফোরক সে বিক্রি করত কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা—সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। টালায় লরি বোঝাই ১৩৫০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম পটাশিয়াম নাইট্রেটের তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেলেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের সন্ত্রাসদমন শাখার গোয়েন্দারা৷ শনিবার রাতে তাঁরা বিশেষ অভিযান চালান বারাসতে। সেই গোয়েন্দা হানাতেই গ্রেপ্তার হয় রবিউল।
[টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো চত্বরে হোর্ডিং লাগাতে গিয়ে বিপত্তি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত শ্রমিক ]
তাকে গ্রেপ্তারের পর এদিন রাতেই লালবাজারে তাকে দফায় দফায় জেরা শুরু করেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। সেই জেরায় উঠে আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বিস্ফোরক ও বারুদ সরবরাহকারীর নাম। তাতেই আঁতকে ওঠেন গোয়েন্দারা। তাহলে কি এই চক্রের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনও মাওবাদী সংগঠন? এসটিএফের এক কর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, টালার যে বিস্ফোরক সরবরাহকারী গ্যাং-কে ধরা হয়েছে সেটি একটি বড় চক্র, তা স্পষ্ট। রবিউলের স্বীকারোক্তির পরই এদিন রাতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে ওই বিস্ফোরক সরবরাহকারীর সন্ধানে বিশেষ অভিযান শুরু করে এসটিএফ। অন্যদিকে রবিবার ধৃত রবিউলকে হাজির করা হবে ব্যাঙ্কশাল আদালতে।
[মুকুল দর্শনেই পালটেছে মন! দলীয় বৈঠকে গরহাজির সব্যসাচী]
তদন্তে এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বেশ কয়েকবছর ধরেই রবিউল ও তার শাগরেদরা নিষিদ্ধ বাজি থেকে শুরু করে বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির কাজ চালিয়ে আসছিল। এর জন্য রবিউল যোগাযোগ করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই বিস্ফোরক সরবরাহকারীর সঙ্গে। সেই ব্যক্তিই ওড়িশার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম পটাশিয়াম নাইট্রেট কলকাতা হয়ে পাচার করত রবিউলের কাছে। এরপর রবিউল সেই পটাশিয়াম নাইট্রেটে সালফার ও কাঠকয়লা মিশিয়ে নিষিদ্ধ ভয়াবহ শব্দবাজি ও বোমা তৈরি করত। সেইসমস্ত বিস্ফোরক কখনও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কখনও বা অন্য কোনও সংগঠনের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দিত।
The post বাজির দোকানের আড়ালে বিস্ফোরক তৈরির কারখানা, গোয়েন্দাদের জালে এক appeared first on Sangbad Pratidin.